কমেছে আন্তর্জাতিক সহায়তা, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। একদিকে প্রত্যাবাসন নিয়ে আশার আলো নেই অন্যদিকে আন্তর্জাতিক তহবিল কমে যাওয়াটাও হতাশার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় জাতিসংঘ আগের অবস্থানেই আছে। এখনো বিশ্বসংগঠনটি বলছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের উপযোগী নয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চীনা মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চেষ্টা চলছে। নিউইয়র্কে এবং বেইজিংয়ে দেশটির মধ্যস্থতায় তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন সময়। সর্বশেষ চীনা মধ্যস্থতায় ১১০০ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন। সেই প্রস্তুতিই চলছে এখন।
যদিও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলছেন, টেকসই প্রত্যাবাসন না হলে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবে না। সরল বিশ্বাসে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবে সরকার। বিষয়টি কাল বা পরশু শুরু হবে এমনটাও নয়।
সোমবার (২০ মার্চ) জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি বর্তমানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য উপযোগী নয়। এক্ষেত্রে ইউএনএইচসিআরের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।
ইউএনএইচসিআর আরও বলছে, সম্ভাব্য প্রত্যাবাসন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় পাইলট প্রকল্পে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি গ্রুপের সঙ্গে দেখা করতে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে সফর করেছে।
তবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ইউএনএইচসিআর জড়িত নয় উল্লেখ করে বলা হয়, ইউএনএইচসিআর সেই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে, যা সমস্ত শরণার্থীর যাচাইয়ের দিকে পরিচালিত করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত প্রত্যাবর্তনের পথ তৈরি করতে পারে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির এ প্রসঙ্গে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চেষ্টা চলছে। চেষ্টা করে যেতে হবে। মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, চীন-মার্কিন উত্তেজনা এগুলোর উপর আমাদের হাত নেই। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে।
‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ তহবিল সংকট
‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে যুক্ত হয়েছে অর্থসংকট। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যাপ্ত অর্থসাহায্য দিচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ সালের আগস্টে ব্যাপকহারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটে বাংলাদেশে। তারপর বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোযোগ ছিল। অর্থসহায়তা পর্যাপ্ত না হলেও ভালোই ছিল।
কিন্তু এই মনোযোগ মোটামুটি দুই বছর স্থায়ী ছিল। মূলত ২০১৯ সাল থেকেই রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ কমতে থাকে। সেটি চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে সম্প্রতি। রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থসহায়তা একেবারে তলানীতে এসে ঠেকেছে।
২০১৯ সালে যখন রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ কমছে তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য একদিকে বৈদেশিক সাহায্য কমছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে নিজেদের তহবিল থেকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা শরণার্থীদের জন্য খরচ করেছে।
জানা যায়, ২০২২ সাল থেকে আশঙ্কাজনকভাবে কমতে থাকে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন। রোহিঙ্গাদের জন্য বৈদেশিক সাহায্যের বিষয়টি যারা সমন্বয় করে জয়েন্ট রেসপন্স প্লান (জেআরপি)। এই জেআরপির হিসাব বলছে, ২০২২ সালে ইউএনএইচসিআর ৮৮১ মিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছিল। কিন্তু সহায়তা এসেছিল মাত্র ২৮৫ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য অর্থায়ন কমে যাওয়াটা খুবই উদ্বেগের। মনোযোগের অভাব কিংবা ইউক্রেন সংকট বা অন্য ঘটনাপ্রবাহের কারণেই হোক না কেন অর্থায়ন কমে গেছে। কিন্তু আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য আর্থিক সহায়তা আদায়ের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করে চলেছি। বৈশ্বিক মনোযোগ এখন অন্যদিকে সরে গেছে।
এ অবস্থায় গত আগস্টে বাংলাদেশ সফর করেন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত নোলিন হাইজার। এ সময় সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ দূতকে বলেন, আমরা এর সমাধান চাই। আমরা কতদিন এই বিপুল সংখ্যক লোককে আতিথেয়তা দিতে পারি?
মিয়ানমারের দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তারা বাংলাদেশের ওই এলাকাগুলো পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করছে। একইসঙ্গে, ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে।
এনএইচবি/এমএমএ/