জামায়াত-শিবিরের নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে নির্দেশ!
সম্প্রতি সারাদেশে জামায়াত শিবিরের নাশকতা ঠেকাতে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটিকে নির্দেশনা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংগঠনটির নেতাকর্মীরা হঠাৎ করে দেশে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিশৃংখলা তৈরি করছে। তারা যেন দেশে জ্বালাও-পোড়াও বা নাশকতা করতে না পারে সেজন্য তাদেরকে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। নির্দেশনা অনুযায়ী সংগঠনটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তরের একটি বিশ্বস্ত সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সূত্রটি জানায়, নতুন একটি তথ্য এসেছে দেশে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির পরিকল্পনা করায় জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে এই অভিযান শুরু হচ্ছে।
অবশ্য, এসব বিষয় নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেছেন, জামাত শিবির দেশে নাশকতা তৈরি করছে সাম্প্রতিক গোয়েন্দা তথ্যের এক প্রতিবেদনে এসব উঠে এসেছে। গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং নাশকতা প্রতিরোধে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশে জামায়াত শিবিরের প্রায় তিনশ নেতাকর্মীর একটি তালিকা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। মূলত তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের ধরতেই এই অভিযান পরিচালনা করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিভিন্ন সেক্টরের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এসব তালিকার বাইরে অনেকেই রয়েছেন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু নাশকতাকারী জামাত শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে কেএমপি, সিএমপি, ডিএমপি ও জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। তবে গণমাধ্যমে সেগুলো তেমন একটা প্রচারিত হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় নাশকতার জন্য তারা বিভিন্ন মিটিং করেছে। সেসব মিটিং করা অবস্থায় সংগঠনটির অনেক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
পুলিশি সূত্রমতে, পলাতক জামায়াত শিবিরের কর্মীদের গ্রেপ্তারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকদিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের নির্দেশনা পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। এর পর মাঠ পর্যায়ে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর মাঠে নামে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট।
গতকাল শনিবার (১১ মার্চ) রাজধানীর মিরপুরে অভিযান চালিয়ে জামায়াতের ৫৭ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ৮টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মফিজুর রহমান পলাশ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সারাদেশে হঠৎ করে জামায়াত শিবিরের সদস্যরা নাশকতা করার চেষ্টা করছে। তাদের ধরতে আমাদের বিভিন্ন অভিযান চলমান রয়েছে। তাছাড়া তাদের বিষয়ে ডিএমপির সদর দপ্তর ও পুলিশ সদরদপ্তর থেকে কিছু নিদের্শনা রয়েছে সেই দয়িত্বও পালন করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান (ডিবি) হারুন-অর-রশিদ বলেন, জামায়াত বিএনপি সারাদেশে নাশকতা করার চেষ্টা করছে এজন্য তাদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি পঞ্চগড়ে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সালনা জালসাকে কেন্দ্র করে সংঘঠিত ঘটনায় বিএনপি জামায়াতের উস্কানি ও হামলায় অংশগ্রহনের চিত্র সামনে আসার পর এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনায় তাৎক্ষণিক এক বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে জামায়াত বিএনপি সরাসরি জড়িত। তাদেরকে যেকোনো মূল্যে প্রতিরোধ করা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, সারাদেশের প্রায় ৩ শতাধিক জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের তালিকা করে দেশের প্রায় সকল থানায় পাঠানো হয়েছে। এসব তালিকার মধ্যে অধিকাংশ বিরুদ্ধে নাশকতা জ্বালাপোড়া সহ অন্যান্য মামলাও রয়েছে। এমনকি অনেকের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডসহ একাধিক মামলা আছে। গোয়েন্দা তথ্য মতে জামায়াতের এসব নেতা কর্মীরা আত্মগোপনে আছে এবং তারা দেশে বিভিন্ন ভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার ও বিভিন্ন ইউনিট প্রধানদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। এসব জামায়াত নেতা জামিনে আছে নাকি পলাতক আছে তার খোঁজখবর নিতে বলা হয়েছে। কারা এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। তাদের তালিকা তৈরির করার জন্যও পুলিশ সদর দপ্তরকে নির্দেশনা দিয়েছে। এরই পরিপেক্ষিতে পুলিশের বিশেষ বিশেষ ইউনিট জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদের ধরতে তৎপর।
মাঠ পর্যায়ের সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের বেশ কিছু ইউনিট বলছে, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলাম নতুন করে নীল নকশা তৈরি করে গোপন তৎপরতা শুরু করেছে। এছাড়া তারা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করার কাজ হচ্ছে তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। এজন্য জামায়াত শিবির গোপনে ঢাকাসহ সারাদেশের নেতাকর্মী ও ক্যাডারদের সংগঠিত করতে কাজ করছে।
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, আগামী নির্বাচনে নাশকতার জন্য জামায়াত শিবির প্রায় ২ লক্ষ নেতাকর্মী মাঠে নামানোর চেষ্টা করতে পারে। এ জন্য তারা বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বিদেশ থেকে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে এনজিওর মাধ্যমে বিরাট অঙ্কের টাকার ফান্ড সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করছে সংগঠনটি। রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, ছাত্র, শ্রমিকদের গড়ে ওঠা আন্দোলনে উস্কানি ও মদদ দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারের পতন ঘটানোর নকশা তৈরি করছে নিষিদ্ধ এই সংগঠন।
পঞ্চগড়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশেই বিক্ষোভ সমাবেশের নামে নাশকতার নীল নকশাও আঁকছে তারা। ওই ঘটনায় দুটি ভাগে ভাগ করে নাশকতা চালানো হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একটি পক্ষ গুজব সৃষ্টি করেছে আরেকটি গ্রুপ মাঠে থেকে সাধারণ মুসল্লিদের উত্তেজিত করেছে। আর হামলা, লুটপাটে সরাসরি অংশ নিয়েছে জামায়াত শিবির ও বিএনপির কর্মীরা। ঘটনাটি ধর্মীয় দিক দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ড চালিয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। যেখানে কাদিয়ানি সম্প্রদায় বসবাস তাদের ওপর হামলা চালাতে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করা হচ্ছে।
সম্প্রতি জামায়াত শিবির পঞ্চগড়ে দুইজনকে হত্যা করা হয়েছে বলে গুজব সৃষ্টি করে শহরের ব্যাপক হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট চালানো হয়। পরবর্তীতে পুলিশ ও বিজিবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। ঘটনায় এখন পর্যন্ত শতাধিক জামায়াত শিবিরে নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের গ্রেপ্তারের পর পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেছেন, হামলা, ভাংচুর লুটপাটে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি কর্মীরা জড়িত। প্রাথমিক তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। তিনি বলেন, মূলত গুজব সৃষ্টি করে এমন নাশকতা চালানো হয়েছে। আমরা অপরাধীদের খুঁজে বের করছি। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবিরের নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি নতুন নির্দেশনা এসেছে আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামের নেতাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরেই পলাতক। অভিযোগ আছে মাঝে মাঝে তারা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে বিভিন্ন নাশকতার পরিকল্পনা করছে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেছেন, আমাদের কাছে গোপন তথ্য এসেছে। সারাদেশে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে নাশকতা করছে। এমনকি তারা দেশদ্রোহী কাজের সঙ্গে লিপ্ত। তাদের ধরতে বিভিন্ন ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবং প্রায় ৩০০ জনের একটি তালিকা তৈরি করে এসব ইউনিটিকে অপরাধীদের ধরার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
জামায়াত শিবির ও বিএনপি যেহেতু এটা একটি রাজনৈতিক সংগঠন সেই জন্য আমাকে কোট করবেন না এমনটা জানিয়ে ডিবি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সারাদেশে বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে জামায়াতের নেতারা যেসব এলাকায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সেসব এলাকা জামায়াতের নতুন নতুন ঘাঁটি হচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তারা দেশের অরেকটি রাজনৈতিক দল অর্থাৎ বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা, জ্বালাও পোড়াও, ও নাশকতাসহ নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। এমন সব অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের বিভিন্ন অভিযান শুরু চলছে।
এই বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, জামায়াত শিবির বা অন্য কোন রাজনৈতিক দল যদি তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে জনগণের জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাহলে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। এসব বিষয়ে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েই কাজ করবে। কোন বিশৃঙ্খলা নাশকতা সহ্য করা হবে না। জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সোচ্চার রয়েছি।
/এএস