লাগামহীন গ্যাস-বিদ্যুতের দাম, অসহায় মানুষ
৫ মাস আগে মোহাম্মদপুরে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন ফেরদৌস। কিন্তু অব্যাহত লোকসানের মুখে তিনি এখন ব্যবসা বন্ধ করে দিতে চাইছেন। কারণ গত কয়েক মাসে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। এই বাড়তি দামের কারণে ফেরদৌস ব্যবসা গুটিয়ে নিতে চাচ্ছেন।
ফেরদৌস বলেন, ৫ মাস আগে যখন ব্যবসা শুরু করি তখন ভালোই চলছিল। মনে হচ্ছিল টিকে যাব। কিন্তু এখন দেখছি সেই অবস্থাটা থাকছে না। দিনদিন সবকিছু নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
যখন ব্যবসাটা শুরু করেন তখন সিলিন্ডার গ্যাস ৩ হাজার ৪০০ টাকায় কিনতেন জানিয়ে ফেরদৌস বলেন, এখন সেই একই গ্যাস কিনতে হচ্ছে ৫ হাজার ২০০ টাকায়। এর উপর আবার বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হলো। কিন্তু খাবারের দাম তো সেভাবে বাড়াতে পারি না। দাম বাড়ালে মানুষ কিনতে চায় না।
গত বছর জ্বালানির দাম রেকর্ড বাড়ার কারণে এমনিতেই মানুষ খুব বিপদে রয়েছে। তার উপর গ্যাসের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে।
গত এক মাসেই দুইবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে এবং প্রতিমাসেই গ্যাসের মতো বিদ্যুতের দামও ‘সমন্বয়’ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিমন্ত্রী যে দাম সমন্বয়ের কথা বলছেন সেটি আসলে দাম বাড়ানোর কথাই বলছেন। সমন্বয় করে দাম কমানোর রেকর্ড নেই বললেই চলে। এই বিষয়টি বেশি উদ্বেগের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার হলো সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে ভর্তুকি তুলে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে সবকিছুর দাম একেবারে নাগালের বাইরে চলে যাবে। গত বছর সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড বৃদ্ধির কারণে একদফা ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির কবলে পড়েছে মানুষ। সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
মগবাজারে ৪টি বাসায় কাজ করেন রেনু বেগম। সকাল ৭টা থেকে তার কাজ শুরু হয়। সন্ধ্যা পর্যন্তও কাজ শেষ হয় না তার। তারপরও তার সংসার চলে না।
রেনু বেগম বলেন, এখন যেভাবে কাজ করি সেভাবেই আগেও কাজ করেছি। কিন্তু আগে সংসার চলত। এখন চলে না। প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। মাছ-মাংস তো দূরের কথা শাকসবজিই কিনে খেতে পারি না ভালো করে।
এ ছাড়া শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত, চাকরিজীবীদেরও অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখে গেছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রফিকুল ইসলাম বলেন, ৪০ হাজার টাকা বেতন পাই। আগে ভালোই চলত। এখন চলে না। বাসা ভাড়া, দুই বাচ্চার লেখাপড়া চালানো, মায়ের ওষুধ কেনা- এসব ব্যয় এখন মেটানো যাচ্ছে না। কারণ সবকিছুর দাম প্রতিদিন বাড়ে।
তিনি বলেন, সবকিছুর দাম বাড়লেও আমাদের বেতন বাড়ে না। কারণ মন্দার কারণে চাকরিই থাকে না এমন শঙ্কা রয়েছে। তাই বেতন না বাড়ালেও তা মেনে নিয়েই চাকরি করি। সামনের দিনগুলোতে কী অপেক্ষা করছে জানি না।
বৃহস্পতিবারও (২ ফেব্রুয়ারি) ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির দাম এক লাফে ২৬৬ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৯৮ টাকা, যা জানুয়ারি মাসে ছিল ১ হাজার ২৩২ টাকা।
এ ছাড়া এক মাসে দুইবার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। এর আগে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড বাড়ানো হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে যুক্তি দিয়ে দাম বাড়ানো হলেও দাম কমার পর আর কমানো হয়নি।
জানতে চাইলে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জ্বালানি তেল এবং গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্গে সবকিছুর সম্পর্ক রয়েছে। ফলে এসবের দাম যখন বেড়ে যায় তখন সব ধরনের পণ্যের দামও বেড়ে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে ক্যাব সভাপতি বলেন, গত বছর যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো তখন থেকেই এই মূল্যস্ফীতি শুরু হয়েছে। তারপর থেকে মানুষ দামবৃদ্ধির সঙ্গে আর পেরে উঠছে না।
এনএইচবি/এসজি