৩০ ডিসেম্বর যুগপৎ ঐক্যের জানান দিতে চায় বিএনপি
অবিলম্বে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত, সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনসহ ১০ দফা আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল করবে বিএনপি।
একইদিনে যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন ঢাকা ও রংপুরে গণমিছিল করবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বড় ধরনের জমায়েত করে গণমিছিল সফলে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দায়িত্বশীল নেতারা।
রাজধানীর বিভিন্ন স্পট থেকে বের করা হবে গণমিছিল। গণমিছিল কর্মসূচি সফল করতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি প্রায় প্রতিদিনই যৌথসভা, সমন্বয় সভা ও প্রস্তুতি সভা করছে। একইভাবে দলের প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও পৃথকভাবে প্রস্তুতি সভা করেছে।
ঢাকায় গণমিছিলে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। ইতিমধ্যে গঠন করা হয়েছে লিয়াজোঁ কমিটি। নেতারা আশা করছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে না।
বিএনপির নেতারা বলেছেন, যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়েছে। দেশের মানুষ এ আন্দোলনে সাড়া দিচ্ছে। এ সরকারকে বিদায় করতে মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ। এখানে বিএনপি একা নয়, সাধারণ মানুষও এই সরকারের অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তাই সবাই এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে চায়। চলমান আন্দোলনে বিএনপিই নেতৃত্ব দেবে। সেই কাজটাই এখন চলছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, নানা প্রতিকূলতা, মামলা-হামলা মোকাবিলা করে সরকারবিরোধী ‘বৃহৎ আন্দোলন’ গড়ে তোলার পথে হাঁটছে বিএনপি। সব দলকে সাথে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে চাপে রেখে প্রধানত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করতে চায় দলটি।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ঢাকায় গণমিছিল নয়াপল্টন থেকে শুরু হবে। আমাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল থেকে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানাবে দেশের মানুষ।
বিএনপির গণমিছিলের রুট প্রকাশ
আগামী ৩০ ডিসেম্বর (শুক্রবার) ঢাকায় অনুষ্ঠেয় গণমিছিলের রুট প্রকাশ করেছে বিএনপি। গণমিছিল শুরু হবে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে। এরপর কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর-মালিবাগ-মৌচাক-মগবাজার হয়ে বাংলামোটর গিয়ে শেষ হবে। ওইদিন দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গণমিছিল হবে। এ বিষয়ে অবহিত করতে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে যাবে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে সরকার পতনে ১০ দফা ও ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিলের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ওইদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন থাকায় ঢাকার কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে রংপুরেও তা স্থগিত করে ঢাকার সঙ্গে পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এ কর্মসূচিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলোও মাঠে নামার ঘোষণা দেয়। এদিকে ৩০ ডিসেম্বরের পর কোনো ধরনের কর্মসূচি দেবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে নেয়নি বিএনপি।
এদিকে ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশে এককভাবে বড় শোডাউনের পর এবার যুগপৎভাবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই কর্মসূচি সফল করার ঘোষণাও দিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা। ১০ দফা দাবিতে ওই দিন ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ৩০ ডিসেম্বর ‘কালো দিবস’ হিসেবে গত কয়েক বছর ধরে পালন করে আসছে বিএনপি। এবার ওই দিন গণমিছিল থাকায়, এ দিবসটি আলাদা গুরুত্ব বহন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
নিজ নিজ দলের ব্যানারে এক এবং অভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠে নামবেন বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপে ঐকমত্য প্রকাশ করা দলগুলো। অনানুষ্ঠানিকভাবে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোটের অন্যতম বড় দল জামায়াতে ইসলামীও। সব দল মাঠে নামার প্রস্তুতি নেওয়ায় ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণমিছিলকে কেন্দ্র করে বড় শোডাউনেরই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এ দাবিতে ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা ছাড়া সারা দেশে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল। কর্মসূচি পালনকালে বিভিন্ন জেলায় বাধার মুখে পড়ে দলটি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষও ঘটে। পঞ্চগড়ে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় অর্ধশতাধিক আহত হন। এ ছাড়া, বিভিন্ন জেলায় হামলায় শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
১২ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমরা যুগপৎভাবে ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল করব। ২২ ডিসেম্বর যেদিন ১২ দলীয় জোটের ঘোষণা হয় সেদিনই আমরা জানিয়েছি ৩০ ডিসেম্বর বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্ক এলাকায় আমরা অবস্থান নেব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ২৪ ডিসেম্বর পুলিশ সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় বাধা দিয়েছে। পঞ্চগড়ে বিএনপির আবদুর রশিদকে গুলি করে হত্যা করেছে। তবুও কিন্তু গণমিছিল ঠেকাতে পারেনি। ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায়ও গণমিছিল সফল হবে। সফলতা দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। জনগণের সম্মিলিত আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকারকে জনগণ বিদায় করবে। বিএনপির আন্দোলনে জনগণ সম্পৃক্ত হয়ে রাজপথে নেমেছে। সরকার এতে ভীত হয়ে হামলা-মামলা-গ্রেপ্তারের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু এতে বিএনপি একটুও পিছু হটবে না।
বিএনপি নয়াপল্টনে, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগরে, সাতদলীয় জোট ও গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পাটি-এলডিপি পূর্ব পান্থপথ থেকে গণমিছিল বের করবে। এ ছাড়া, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা দুটি স্পটে মিছিল করবে।
এদিকে বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোটের শরিকদের নিয়ে ইতোমধ্যে আত্মপ্রকাশ হয়েছে ১২ দলীয় জোট। তবে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির নেতৃত্বে ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা ঐক্যজোট’ নামে আরও একটি জোটের আগামীকাল আত্মপ্রকাশ করার কথা রয়েছে। এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, অন্তত ১০টি রাজনৈতিক দল নিয়ে হবে এ জোট। বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটবে। আমরা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকব। শুক্রবার রাজধানীর একটি স্পট থেকে গণমিছিল বের করব। স্পটের নাম সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের সমন্বয় সাত সদস্যের লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। কমিটির সদস্যরা হলেন-দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
গণতন্ত্র মঞ্চের লিয়াজোঁ কমিটি
গণতন্ত্র মঞ্চ সাত সদস্যের লিয়াজোঁ কমিটির গঠন করেছে বলে জানান জোটের অন্যতম শরিক ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। কমিটির সদস্যরা হলেন-জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর।
এলডিপির লিয়াজোঁ কমিটি
লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেছে কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিও (এলডিপি)। এতে দলের মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদকে আহ্বায়ক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল আলমকে সদস্য সচিব করা হয়। সেই সঙ্গে প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নিয়ামুল বশির, ড. আওরঙ্গজেব বেলাল ও অ্যাডভোকেট মাহবুব মোর্শেদকে করা হয়েছে সদস্য। জামায়াত ইসলামীর একজন দায়িত্বশীল নেতা ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে নামতে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকাপ্রকাশ কে জানান, বিএনপির শান্তিপূর্ণ গণমিছিলে গুলি চালানো হয়েছে। তেল-গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে বিএনপির কর্মসূচিতে গুলি চালিয়ে এর আগে ১৫ জন নেতা-কর্মীকে খুন করা হয়েছে।
এমএএইচ/এমএমএ/