নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে কাজ করছে বিএনপি
নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই মাঠ পর্যায়ে ভেতরে ভেতরে কাজ করছে দলটি। দৃশ্যমান তৎপরতা না থাকলেও ভেতরে ভেতরে দলটির হাইকমান্ড তৃণমূলকে সেভাবেই প্রস্তুত করছে।
আন্দোলন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বিএনপি বিভাগীয় পর্যায়ে যে সমাবেশ করতে যাচ্ছে সেগুলো নির্বাচনী প্রস্তুতিরই অংশ। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়ে নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়েও বার্তা দিচ্ছে দলীয় হাইকমান্ড।
নির্বাচনী প্রস্তুতি নিলেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে অটুট থাকার সিদ্ধান্তও আছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র মতে, মিটিং মিছিল সভা-সেমিনার বক্তব্যে আন্দোলনের কথা বলা হলেও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পুরোদমে চলছে দল গোছানোর কাজ।
এরই অংশ হিসেবে সাবেক ছাত্রনেতাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ইতিমধ্যে ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫৪টির অধিক জেলায় বিএনপির কমিটি পুনর্গঠন শেষ হয়েছে। দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও ঢেলে সাজানো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ছাত্রদল, যুবদল, কৃষক দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে ঢাকা মহানগরকে আন্দোলন ও নির্বাচনমুখী করতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহানগর আহ্বায়ক কমিটি প্রতিটি থানা এবং ওয়ার্ড কমিটিতে নতুন নেতৃত্ব আনতে কাজ করছে।
সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে যারা নির্বাচন করতে আগ্রহী তাদের ভোটের মাঠ গোছাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে কি না সেটিও মনিটরিং করা হচ্ছে। আন্দোলনে রাজপথে না থাকলে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। হাইকমান্ডের এমন মনোভাব বুঝতে পেরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। অনেকে দলীয় কোনো পদে না থাকলেও নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে প্রমাণ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
এ ছাড়াও বহিষ্কৃত ও সংস্কারপন্থী নেতাদেরও দলে ভেড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে। কাউকে কাউকে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। নির্বাচন ও আন্দোলনকে সামনে রেখে দলকে চাঙ্গা ও শক্তিশালী করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি নেতারা বার বার বলছেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার মতো প্রস্তুতি আছে। তবে সেই নির্বাচনটা হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীন। সে লক্ষ্যে তারা নির্বাচনী প্রস্তুতির পাশাপাশি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার আন্দোলনও চালিয়ে যাবে। রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই নিরপেক্ষ সরকারের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে চায় দলটি।
বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনে যেতে হলে আগে পক্ষে জনমত গঠন করারও প্রয়োজনীয়তা আছে। জনমত গঠন করে একটি আন্দোলন চলবে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়ার বিষয়টি রাজপথে নিষ্পত্তি হবে বলেও মনে করছেন নেতারা।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘বিএনপি দেশের একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। জনগণ যখনই ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে তখনই বিএনপি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। সেই দলটি সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকে। নির্বাচনের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না।’
তিনি বলেন, ‘কথা হচ্ছে নির্বাচনটা কীভাবে হবে, কার অধীনে হবে- সেটার জন্যই তো এতকিছু। এত মামলা হামলা নির্যাতন ও প্রাণ বিসর্জন। আমরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করছি। সেই কাঙ্ক্ষিত দাবি আদায় হলেই কেবল মাত্র বিএনপি নির্বাচনে যাবে। নিকট অতীতে গেলেও এবার দলীয় সরকার কিংবা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সেটা কোন ধরনের নির্বাচন হয়-সেটি দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্ববাসী অবগত আছে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘যেকোনো মুহূর্তেই নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে বিএনপির। তবে নির্বাচনটা যাতে সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেই লক্ষ্যে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। একটাই প্রস্তুতি; সেটা হচ্ছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা। সেই প্রস্তুতিই নিতে শুরু করেছি। নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হবে না-সেটার প্রমাণ তিনি নিজেই দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচনে যাব না। এ ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান সুস্পষ্ট।’
এদিকে ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের তৃণমূল বেশকয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে না। আমরা এমপি-মন্ত্রী হতে চাই না, তাই নির্বাচন কবে হবে, কখন হবে নিয়ে এই মুহুর্তে মাথা ব্যথা নেই; আগে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা চাই।’
তারা বলেন, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বক্তব্য ছাপিয়ে দলের ভেতরে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি না করালে ভালো হয়। এই মুহূর্তে বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
এনএইচবি/এমএমএ/