মুক্তিযোদ্ধাদের সঞ্চয়ী করে তুলেছে ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা উদ্যোগ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন সম্মানিত করেছে তেমনি নানাভাবে উপকার পাওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলে মুক্তিযোদ্ধারা যেমন ব্যাংকের মাধ্যমে নিজেদের ভাতা পাচ্ছেন, তেমনি সঞ্চয়ও করতে পারছেন। কেউ কেউ আবার নিজেদের প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ঋণও নিতে পারছেন।
মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলে তারা দারুণভাবে উপকৃত হয়েছেন। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারাও বলছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে বাংলাদেশ ব্যাংকও গর্বিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, কোনো রকম ঝুটঝামেলা ছাড়া মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। চলতি জুন মাস পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকে তিন লাখ ২২ হাজারের বেশি ব্যাংক হিসাব রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের। এ সব হিসাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সঞ্চয়ের পরিমাণ ৯৬৩ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে হিসাব নম্বর খোলার সংখ্যা বেড়েছে ৫৪ হাজারের বেশি। অর্থাৎ ২০ দশমিক ২৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী গত বছরের একই সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৬৮ হাজার। গত তিন মাসে বেড়েছে ১১ শতাংশের বেশি। আর গত মার্চে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাব ছিল দুই লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৯টি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘সরকার দেশের সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে সম্মান করছে। তারই অংশ হিসেবে তাদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কম সুদে ঋণেরও ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, ২০১১ সালের ১১ মার্চ থেকে ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এটা অনেকে আগে জানতেন না। কিন্তু সরকার তাদের ভাতা দেওয়ায় তারা ব্যাংকে হিসাব খুলেছেন। এ কারণে ব্যাংকে হিসাব খোলার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বছরের ব্যবধানে ২০ শতাংশের বেশি হিসাব বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা ভালো খরব। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরও জানান, মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয়ও করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা মো. শামসুল হুদা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি দেশের স্বার্থে। বিনিময়ে কোনো কিছু পাওয়ার আশায় নয়। তারপরও সময়ের পরিবর্তনে সরকার বিভিন্ন সুযোগ দিচ্ছে। আগে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ছিল ৫ হাজার টাকা। সেটি বৃদ্ধি করে ১০ হাজার টাকা পেয়েছি। এখন মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পাচ্ছি।‘
তিনি আরও বলেন ‘অন্যদের ব্যাংক হিসাব খুলতে গেলে এটা-সেটার সঙ্গে হাজার টাকাও লাগে। আর আমাদের মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলতে পেরেছি। সেখানে প্রতি মাসে ভাতা পাচ্ছি। অনেকে স্বচ্ছল হওয়ায় ভাতার টাকা ব্যাংকে জমাও রাখছেন। এ জন্য সঞ্চয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু ভাতা নয়, কম সুদে ঋণও পাওয়া যাচ্ছে। আমার অনেক পরিচিত দুই লাখ টাকা করে ঋণও নিয়েছে। তাতে সুদের হারও কম। এভাবে সুযোগ পাওয়ায় অনেকেই বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব খুলছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাবের মধ্যে এক লাখ ৪৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধা সরকার থেকে ২৭৬ কোটি টাকা ভর্তূকি এবং ভাতা গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া সরকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জন্য কম সুদে ২০০ ও ৫০০ কোটি টাকার যে পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে সেখান থেকেও তারা ঋণ নিতে পারছেন। গত জুন পর্যন্ত ৫ হাজার ৩০৬ জন মুক্তিযোদ্ধা ২০৪ কোটি টাকার বেশি ঋণও গ্রহণ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এই ব্যাংক হিসাব নম্বরে প্রবাসীরা রেমিট্যান্সও পাঠাচ্ছেন। জুন পর্যন্ত ৩৮৪ জন প্রবাসী চার কোটি টাকার বেশি রেমিট্যান্সও পাঠিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংক হিসাব নম্বরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশেষ সুবিধার আওতায় কৃষক, হতদরিদ্র, সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধাভোগীদেরও সরকার বিভিন্ন সুযোগ দিয়েছে। এ ছাড়া গার্মেন্টসকর্মী, চামড়া শিল্পের কর্মীদের স্মল লাইফ ইন্সুরেন্স প্রোগ্রামের আওতায় ১০০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। জুন পর্যন্ত তাদের ব্যাংক হিসাবে জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া তারা প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা সঞ্চয়ও জমা করেছেন। আর ৯৪ হাজার ৫৩৫ অ্যাকউন্টধারী ঋণ নিয়েছেন প্রায় ৫৬০ কোটি টাকা। তাদের এ সব অ্যাকাউন্টে প্রবাসীরা ৫৩০ কোটি টাকা রেমিট্যান্সও পাঠিয়েছেন।
এনএইচবি/আরএ/