আগামী কাউন্সিলেই দ্বাদশ সংসদের প্রস্তুতি নিতে চায় আওয়ামী লীগ
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সামনে এখন দুটি চ্যালেঞ্জ। দলের জাতীয় কাউন্সিল ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই দুটি সামনে রেখে আওয়ামী লীগে চলছে নানামুখী হিসাব-নিকাশ। বিশেষ করে নতুন নেতৃত্ব এবং আগামী সাধারণ নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
আগামী ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২৩তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। ঠিক এক বছর পর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সঙ্গত কারণে আগামী জাতীয় কাউন্সিলেই জাতীয় নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতিও শেষ করতে চায় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব মনে করছে, বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যতটা সহজে বৈতরণী পার করেছে, আগামী নির্বাচনে সেটি অতটা সহজ হবে না। এ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এবং নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিশেষ করে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে যেকোনো রকম সহিংসতা, নৈরাজ্য মোকাবিলায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকার বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেভাবেই দলকে প্রস্তুত করতে চায় দলটি। এজন্য আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের কমিটি আপডেট করতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় হাই কমান্ড।
সাংগঠনিক নেতারা যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে ওয়ার্ড, থানা, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে কমিটি করার কাজ সেরে ফেলতে ঘাম ঝরাচ্ছেন। পাশাপাশি যেসব আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত এমপিরা নিজেদের গ্রুপ ভারী করার জন্য বিতর্কিত লোকদের দলে টেনেছেন, পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়েছেন তাদের বিষয়ে সতর্ক আওয়ামী লীগ কড়া বার্তা দিতে চায় আগামী কাউন্সিলেই।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, যেসব আসনে দুর্বল প্রার্থী রয়েছে সেসব আসনে একজন শক্তিশালী প্রার্থী বাছাই করার কাজও ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলেই শেষ করতে চায় ক্ষমতাসীন দল। একই সঙ্গে কাউন্সিলেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের শক্তির পরীক্ষা দেখতে চায়। কোন প্রার্থী কেমন জনপ্রিয় তার একটি ওয়ার্ম আপ হয়ে যাবে কাউন্সিলে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে যেভাবে সরব হচ্ছে সেখানে দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রেখে সতর্কতার সঙ্গে বিরোধী শক্তিকে মোকাবিলা করতে কারা পারদর্শী সেটাও দেখবে আওয়ামী লীগ।
এদিকে আগামী নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীদের বিষয়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে মাঠ জরিপের কাজ চলছে অনেক দিন আগ থেকেই। বিশেষ করে যেসব সংসদ সদস্য নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন, দলীয় ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন, দলকে বিতর্কিত করছেন তাদের বিষয়ে কেন্দ্রের কড়া বার্তা থাকবে আগামী কাউন্সিলেই। আগামী নির্বাচনে কোনোভাবেই বিতর্কিত কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না, এমনটাই বলছেন দলের নেতারা। এজন্য বিতর্কিতদের আসনে বিকল্প সৎ ও যোগ্য শক্তিশালী প্রার্থীর সন্ধানে রয়েছে আওয়ামী লীগ।
যারা নিজেদের জনপ্রিয়তা দিয়ে ভোটে জয়ী হতে পারবেন, এমন সব প্রার্থী আগামী নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেতে পারেন বলে দলের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক থেকে ফেরার পর দলের নেতাদের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করতে পারেন। সেসব বৈঠকে গুরুত্ব পাবে আগামী দিনে রাজনৈতিক মাঠে কিভাবে আওয়ামী লীগ মোকাবিলা করবে। বিরোধী পক্ষ নানা ইস্যুতে উস্কানিমূলক কথা বলে সংঘাতে জড়াতে পারে। এসব বিষয়ে সতর্ক থেকে মোকাবিলা করার নির্দেশনা আসতে পারে বলে জানা গেছে। কোনো নেতার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আওয়ামী লীগকে নিয়ে যেন কেউ কথা বলতে না পারে সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারেন দলীয় সভানেত্রী।
দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বিভ্রান্তিতে গা না ভাসিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষের কাছে তুলে ধরতে।
তবে গায়ে পরে কোন দল সংঘাতে জড়ালে তাদের সমুচিত জবাব দিতে চায় আওয়ামী লীগ। এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ফাঁকা মাঠে তাফালিং করবেন আর আওয়ামী লীগ আঙুল চুষবে, তা হবে না। আওয়ামী লীগ কর্মীরা সংযমী হয়ে সতর্ক অবস্থানে মাঠে থাকবে। আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’
দলের কাউন্সিল ও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ দিন এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি সবই ভালো করে জানেন এবং বোঝেন। সব সময়, সময় উপযোগী করে দল সাজিয়ে থাকেন এবারও সেভাবেই সাজাবেন। সংসদ নির্বাচনের আগে দলের জাতীয় কাউন্সিল হওয়ায় এবারের কাউন্সিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের পূর্বে সারাদেশকে যেমন আমরা সংগঠনকে ঢেলে সাজাচ্ছি, তেমনি কেন্দ্রীয়ভাবে দলকে ঢেলে সাজানোর ব্যাপার তো রয়েছেই। আগামী দিনে এই কেন্দ্রীয় কমিটি (নতুন যে কমিটি হবে) নির্বাচনকে নেতৃত্ব দেবে।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছায়ের কাজটি কীভাবে দেখছে দল- এমন প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, ‘একেবারে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দিতে হবে। অবশ্যই তাকে সৎ ও নির্ভীক হতে হবে, এমন প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তাদের বিষয়ে একটি সার্ভে চলছে। কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কেউ রেহাই পাবে না, কেউ না। সে যত বড় নেতাই হোক, আর যত বড় যেই হোক, কেউ রেহাই পাবে না।’
ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, এরইমধ্যে আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক দলের জাতীয় কাউন্সিলের একটা সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। তাই আমরা সাংগঠনিকভাবে জেলা, উপজেলা, থানার কমিটি প্রস্তুত করতে পুরোদমে কাজ করছি। দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নভেম্বরের আগেই সব মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন করে গঠন করতে হবে।’
এনএইচবি/এসএন