ইভিএম-এ ভোট
ইসির সিদ্ধান্ত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে
আগামী নির্বাচনে দেড়শ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইভিএম কিনতে ইতোমধ্যে ইসির আট হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু ইসির এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিশিষ্টজনদের চোখে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন ক্ষমতাসীনদের জয় নিশ্চিত করতেই নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কোনো সমালোচনাই টলাতে পারছে না নির্বাচন কমিশনকে। উল্টো তারা দাবি করছেন দেড়শ কেন, সক্ষমতা থাকলে ৩০০ আসনেই ইভিএম ব্যবহার করতাম।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইভিএম নিয়ে ইসি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিল। সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে দাবি ছিল তার প্রতিফলন ঘটাতেই নির্বাচন কমিশন তাদের ঘোষিত কর্মপরিকল্পনায় অনধিক দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তুমুল সমালোচনা চলছে।
নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতামত তুলে ধরেছে। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ছাড়া বেশিরভাগ দলই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের বিপক্ষে কথা বলছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ৩৯ জন নাগরিক। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ৩৯ নাগরিকের এই অবস্থান তুলে ধরা হয়। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ইভিএম কিনতে বিপুল ব্যয় কতটুকু যৌক্তিক, তা ভেবে দেখারও অনুরোধ জানিয়েছিলেন বিশিষ্ট নাগরিকরা।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা প্রথম নির্বাচনেও চেয়েছি, এবারকার সংলাপেও বলেছি, ৩০০ আসনে ইভিএম চেয়েছি। নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছে ১৫০টিতে আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে। আমরা সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছি। নির্বাচন সুষ্ঠু, ফ্রি ফেয়ার করার স্বার্থে নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই চূড়ান্ত। আমাদের যেটা দাবি সেটা আমরা বলেছি। নির্বাচনে কারচুপি জালিয়াতি রোধ করার জন্য ইভিএম সুবিধাজনক হবে সেটা আমাদের দাবি। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে বিএনপির কোনো মাথা ব্যথা নেই। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। নির্বাচন কমিশন যে রোডম্যাপই দিক, কোনো কিছুই কাজ করবে না। কারণ নির্বাচনকালে সরকার পরিবর্তন ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। আওয়ামী লীগ কোনো নির্বাচনেই তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেখতে চায় না। সেটা জাতীয় নির্বাচন হোক কিংবা অন্য যাই হোক।’
ইভিএম নিয়ে জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ মূল্যহীন। যে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নেই, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে বলে মনে হয় না।
ব্রতি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা(সিইও) বেগম শারমিন মুরশীদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, নির্বাচন কমিশন দেড়শ আসনে ইভিএম ব্যবহারের কথা জানিয়েছে। এটা অযৌক্তিক। এটা যুক্তিসঙ্গত একটা সিদ্ধান্ত নয়। এই সিদ্ধান্ত সন্দেহের জায়গাটা আরও সুদৃঢ় করবে। মানুষ এটাকে গ্রহণ করতে চাইবে না।
তিনি বলেন, ‘কেন দেড়শটা করতে চাচ্ছেন এটা অযৌক্তিক। ইভিএম দিয়ে নির্বাচন যদি আরও উৎকৃষ্ট মানের হয় তাহলে বাকি দেড়শটা আসন কি অন্যায় করল, যেগুলোতে ইভিএম ব্যবহার করছেন না। দুই রকমের পদ্ধতিতে নির্বাচন করা অস্বস্তির জায়গায় চলে যাবে।’
বাইরে যতই আলোচনা সমালোচনা হোক নির্বাচন কমিশন তাদের সিদ্ধান্তে অটল। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে যে যেটা পারে বলতে পারেন। এটা তাদের অধিকার। আমাদের যদি সক্ষমতা থাকত, সময় থাকত আমরা ৩০০ আসনেই ইভিএম ব্যবহার করতাম।’
গত ১৪ সেপ্টেম্বর দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তারা। জাতীয় নির্বাচনে অনূর্ধ্ব ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় ১৭টি রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। আর ১২টি দল বিপক্ষে মতামত দিয়েছে। যদিও ইভিএম এর পক্ষে ১৭টি দল মত দেওয়ার বিষয়ে ইসি যে দাবি করেছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইসি যে ১৭টি দলের ইভিএম এর পক্ষে মত দেওয়ার কথা বলেছে সেখানে অন্তত চারটি দল আছে যারা সংলাপে ইভিএম এর বিপক্ষে মত দিয়েছিল। ইসি তাদের সেই মতকে পাল্টে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এনএইচবি/আরএ/