তথ্যের অভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সিটি করপোরেশন!
তথ্যের অভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই বাসায় চিকিৎসা নিলেও সিটি করপোরেশনকে তথ্য দেন না। ফলে সিটি করপোরেশনও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সিটি করপোরেশন বলছে, তথ্য পেলে ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকা ফগিং করে দিতে পারে।
ডেঙ্গু আক্রান্তরা যাতে তথ্য দেন সেজন্য দুই সিটি করপোরেশনই বারবার নগরবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু জনসাধারণের সাড়া পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ নগর কর্তৃপক্ষের। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের ধারণা, শাস্তি ও সামাজিকতার ভয়ে অনেকেই আক্রান্ত হওয়ার তথ্য শেয়ার করছেন না বা করতে চান না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বারবার নগরবাসীর উদ্দেশে বলছেন, আক্রান্ত হলে তথ্য দিন। কথা দিচ্ছি শাস্তি দেব না। শুধু আপনার বাসা ও আশেপাশের বাসাগুলোতে বিনামূল্যে ফগিং করে দেওয়া হবে। তারপরও জনসাধারণের কাছ থেকে তেমন সাড়া মিলছে না বলেই অভিযোগ রয়েছে।
তথ্য পাওয়ার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও (ডিএসসিসি)। সম্প্রতি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএসসিসি আয়োজিত এক সভায় মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, তথ্য পেলে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নির্মূল সহজ হয়। এ বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদেরও দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, অনেকে বাসায় থেকেও চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমি বারবার নগরবাসীর উদ্দেশে বলছি, আক্রান্ত হলে আমাদের কাউন্সিলরকে জানিয়ে দেন। আমরা বিনা পয়সায় ফগিং করে দেব। আপনার বাসা আমরা চেক করে দেখব কেন ডেঙ্গু হলো।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, তথ্য পেলে প্রত্যেক রোগী বা এলাকা ধরে আমরা ফেসবুক লাইভে পুরো এলাকায় লাইভ মনিটরিং করছি। এটা খুবই কাজে দিচ্ছে।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হয়। এবারও তাই দেখা যাচ্ছে। আগস্টের শুরুতেই ডেঙ্গু বাড়ছে। এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে।
জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ২০২০ ও ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে মশার পরিমাণ বেশি। তার আশঙ্কা এই কারণে চলতি বছরে ডেঙ্গু বেশি হতে পারে। এজন্য আসলে লার্ভা ধ্বংসের পাশাপাশি জনসচেতনতারও কোনো বিকল্প নেই।
অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলছেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে ওয়ার্ডগুলোতে কমিটি করে দেওয়া যেতে পারে। মেয়রদের এ ব্যাপারে প্রস্তাবও দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা যায়, আগস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে মারা গেছেন ১৫ জন। এর মধ্যে ঢাকায় মারা গেছেন ৫ জন। বাকি ১০ জন পর্যটননগরী কক্সবাজারের।
উল্লিখিত সময়ের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪৮ জন। রাজধানীর মুগদা, ভাটারা, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী এলাকায় ডেঙ্গু রোগী সবচেয়ে বেশি।
ডিএনসিসি এলাকায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে ভাটারা খিলক্ষেত, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে। আর ডিএসসিসি এলাকায় বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে মুগদা বাসাবো যাত্রাবাড়ী ও ধানমন্ডি এলাকায়।
চলতি বছর ১৭ আগস্ট (বুধবার) পর্যন্ত সারাদেশে ৪ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এই সংখ্যা শুধু হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ভিত্তিতে। এর বাইরেও অনেক ডেঙ্গু রোগী আছেন যারা বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবারও (১৮ আগস্ট) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৯৩ জন। এর মধ্যে ৮১ জন রোগী ঢাকার। এ নিয়ে সারাদেশে মোট ৪১৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এনএইচবি/এসএন