বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২২ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash

বিআরটি প্রকল্প: সময়-ব্যয় বাড়ে, মানুষ মরে কাজ শেষ হয় না

বছরের পর বছর ধরে কাজ চলছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের। তবু শেষের দেখা নেই। শুধু সময় আর ব্যয় বাড়ছে। ভোগান্তিও শেষ হচ্ছে না বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত চলাচলকারী যানবাহন ও সাধারণ মানুষের।

তার উপর আবার ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় ঘটছে দুর্ঘটনা। সর্বশেষ গত সোমবার (১৫ আগস্ট) নির্মাণকাজ চলাকালে ক্রেন কাত হয়ে সেগমেন্ট (বক্স গার্ডার) গিয়ে পড়ে একটি প্রাইভেট কারের উপর। তাতে প্রাণ যায় পাঁচ জনের। সেদিকেও কোনো খেয়াল নেই কর্তৃপক্ষের। তারা ব্যস্ত প্রকল্পের ব্যয়, সময় বাড়াতে আর অত্যাধুনিক অফিস কীভাবে নির্মাণ করা যায় সেই নিয়ে।

অথচ সরকার প্রধান বলছেন ব্যয় কমাতে। আর বিআরটি কর্তৃপক্ষ প্রকল্প সংশোধন করে দৃষ্টিনন্দন বিআরটি অফিস ভবন নির্মাণসহ আরও বেশ কিছু বিষয় সংযুক্ত করে সংশোধিত ডিপিপি অুনমোদনের জন্য পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

রাজধানীবাসীকে যানজট থেকে মুক্তি ও যাতায়াত সহজ করতে সরকার বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের অনুমোদন দেয় ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর। কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৬ সালে। কিন্তু বিভিন্ন অজুজাতে প্রকল্পের ডিপিপি এ পর্যন্ত চার দফা সংশোধন করা হয়েছে। সময় বাড়ানো হয় ২০২২ সাল পর্যন্ত। কিন্তু তাতে কাজের শেষ হয়নি। বরং সমস্যা ও ভোগান্তি বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি।

দশ বছরে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারলেও এখন আবার ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর সময় বাড়ানো হচ্ছে। এতে করে প্রকল্পের মেয়াদের পাশাপাশি ব্যয় ও ভোগান্তি বাড়বে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৮২ শতাংশ।

জানা গেছে, ২০১২ সালে যখন প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৪০ কোটি টাকা। আর দফায় দফায় সময় বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ২৬৮ কোটি টাকায়। ১০ বছরে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে দুই হাজার ২২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ১০৯ শতাংশ।

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক পরিবহন ও জনপথ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের তিন ভাগে তিন জন প্রকল্প পরিচালক কাজ করছেন। তাই অনেক ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এ জন্য ঠিক মতো কাজ হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে বুধবার (১৭ আগস্ট) বিআরটি প্রকল্প পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। বাকি কাজ ডিসেম্বরে হবে না। তাই সময় বাড়ানোর জন্য সংশোধন করতে হবে। পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।’

সরকার প্রধান ব্যয় কমানোর কথা বলছেন। অথচ প্রকল্পের শেষ সময়ে এসে ভবন নির্মাণের জন্য ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এখন কেন এই প্রস্তাব? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি, ঝামেলায় আছি বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।’

প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়া সম্পর্কে ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সফিকুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দেখেন ব্যয় বাড়ছে না। প্রকল্পের বর্তমান যে বরাদ্দ আছে সেখান থেকেই কাটছাঁট করে ভবন নির্মাণ করা হবে। এ জন্য বাড়তি কোনো খরচ হচ্ছে না। তবে প্রকল্পের সময় আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান প্রকল্পের এমডি।

বিআরটি প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতার ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থপতি ইকবাল হাবিব ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘বিআরটি প্রকল্পটির পরিণতি কি হবে তা নির্ণয় করা উচিৎ। এভাবে আর চলতে পারে না। এক দশকেও কাজটি শেষ করতে পারছে না। অব্যবস্থাপনায় ভরা। তাদের আসলে কাজে নজর নেই। জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনগণের স্বার্থে কাজ করলে এটি আগেই শেষ হয়ে যেত।’

নতুন ভবন ‍নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে ধান্দা চলছে। তাই তো শেষ সময়ে আলিশান অফিস ভবনে নজর দিয়েছে। অনেক ভবন পড়ে আছে, দরকার হলে ভাড়া নিতে পারে। সরকার ব্যয় কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে, এমন সময়ে অফিস করার কোনো প্রশ্নই আসে না।’

তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে রাজধানীর মহাখালি থেকে বনানী হয়ে আর্মি স্টেডিয়াম পর্যন্ত সড়ক দখল করা হয়েছে। তা ফিরিয়ে দেওয়া উচিৎ। বিভিন্ন ভবন করে নগর ধ্বংস করা হচ্ছে। তা বন্ধ করা উচিৎ।’

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইএর সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেছেন, ‘বিআরটি প্রকল্প আর কতকাল চলতে থাকবে। ঠিকমতো কাজ হয় না। বিমানবন্দরে ঠিকমতো যাওয়া যায় না। ঠিকমতো শিপমেন্ট করা যায় না। নিয়ম থাকলেও ঠিকাদার তা আমলে নেয় না।’

অপরদিকে প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় পরিকল্পনা কমিশন থেকে বলা হয়েছিল প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় রাস্তা মেরামতের প্রয়োজনীয় সংস্থান করতে হবে। একই সঙ্গে বিরামহীন যানবহন চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। এই ব্যয় প্রস্তাবিত ডিপিপিতে সংস্থানের কথাও বলা হয়। একই সঙ্গে সড়ক মেরামত ও সংস্কার কাজের সময় জনগণের যাতে দুর্ভোগ না হয় সে ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

কিন্তু এসব তোয়াক্কা করা হয়নি। কোনো প্রকারের নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই উত্তরায় গার্ডার লাগাতে গিয়ে প্রাইভেট কারের উপর পড়লে পাঁচজন মারা যান। প্রকল্প পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহও ঠিকমতো তদারকি করেননি।

যা আছে বিআরটি প্রকল্পে

রাজধানীর যানজট নিরসনে দ্রুত গতির গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ২০১১ সালে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত নির্দিষ্ট লেনে শুধুমাত্র বাস চলাচলের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০১২ সালের ২০ নভেম্বর। ব্যয় ধরা হয় দুই হাজার ৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পের আর্থিক সহযোগিতায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ফরাসী উন্নয়ন সংস্থা ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটির ঋণ হচ্ছে এক হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। বাকি অর্থায়ন সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে।

প্রকল্পের বাস্তবায়ন সময় ধরা হয় ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। ঋণদাতা সংস্থার সঙ্গে ২০১২ ও ২০১৩ সালে ঋণচুক্তিও হয়েছে। এরপর শুরু হয় কাজ। ডিপিপি চার দফা সংশোধন করায় ব্যয় ও সময় বাড়ে। বাড়তি ব্যয় মেটাতে অর্থমন্ত্রণালয়কে ম্যানেজ করতে হয়েছে ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।

এই প্রকল্পের জন্য ১ দশমিক ৯০ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও বাস মালিকদের ক্ষতিপূরণ ছাড়াও ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ডেডিকেটেড বাস লেন, ১০ লেন বিশিষ্ট টঙ্গী সেতু, ৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ইন্টারসেকশনে ৫৫০ মিটারের আন্ডারপাস, ৬টি ফ্লাইওভার, একটি বাস ডিপো, উভয় পাশে ১২ কিলোমিটার করে ড্রেন নির্মাণের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া যাত্রী বহনে ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস ক্রয়, ৯টি জীপ গাড়িসহ ১২টি যানবহন ক্রয়, ৪টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতাও রয়েছে।

নতুন করে সংশোধনী প্রকল্পে ১৩০টি আর্টিকুলেটেড বাস কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের শুরুতে ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাস কেনার প্রস্তাব করা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) ৫ম সভায় নকশা পরিবর্তনের কারণে আবার সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে খরচ ঠিক থাকলেও সময় এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ বাবদ খরচ কমানো হয়েছে। গত মে পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি প্রায় ৭৬ শতাংশ। জুলাই পর্যন্ত ৮০ শতাংশ। বাকি কাজ এবং ডিফেক্ট ওয়ারেন্টি পিরিয়ডসহ ডিপিপি সংশোধন করে এক বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

একই সঙ্গে অন্যখাতে ব্যয় কমিয়ে প্রকল্পের একেবারে শেষ সময়ে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বিআরটি অফিস ভবন করার প্রস্তাব করা হয়েছে ডিপিপিতে।

সূত্র জানায়, বিভিন্নখাতে খরচ কম-বেশি করে শেষ সময়ে করা সংশোধিত ডিপিপিতে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সম্মতিও দিয়েছেন। সব প্রক্রিয়া শেষ করে খুব শিগগির ডিপিপি অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।

প্রকল্পের মনিটরিং বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মুল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর মরিটরিং করা হয়নি। তবে নিয়ম মেনে তারা কাজ করেনি বলেই উত্তরায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। আসলে তারা কীভাবে কাজ করছে, কোথায় সমস্যা তা দেখতে মনিটরিং করা হবে।’

এনএইচবি/এমএমএ/

Header Ad
Header Ad

আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা কী করলাম বা করলাম না- ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেটি দিয়ে আমাদের বিচার করবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. ইউনূস বলেন, দেশের রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে এবং এর ভিত্তিতেই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। তিনি আরও বলেন, "এটি জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। আমি জাতির পক্ষ থেকে কমিশনের দুই চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্যকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।"

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "এই দুটি প্রতিবেদন দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে। আপনি দরিদ্র, মধ্যবিত্ত বা ধনী যেই হোন না কেন, এই সংস্কারের প্রভাব থেকে কেউই বাদ যাবেন না।"

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, "কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নাগরিকরা তাদের প্রকৃত অধিকার ফিরে পাবেন। আমরা যেন সত্যিকারের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাই, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।"

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, "যাতে সবাই মনে করতে পারে, এখানে প্রকৃত সত্য বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে। আমাদের তো পণ্ডিত হতে হবে না এটি বোঝার জন্য, কারণ প্রতিদিনই আমরা নানা অবিচারের শিকার হই।"

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, "সংস্কার কমিশনের কাজ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিশ্বের দরবারে এটি তুলে ধরতে হলে এর ইংরেজি অনুবাদ করা প্রয়োজন।"

কমিশনের সদস্যদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, "আপনাদের প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও গবেষণার সংমিশ্রণে এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দলিল হয়ে থাকবে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা কী করলাম বা করলাম না, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের সেই কাজের জন্যই বিচার করবে। তারা প্রশ্ন করতে পারে, আপনারা তো পেয়েছিলেন, তাহলে বাস্তবায়ন করেননি কেন? কারণ, সবকিছু তো বইয়ের পাতায় লেখা আছে। এই কাজ জাতির জন্য এক মূল্যবান স্মারক হয়ে থাকবে।"

Header Ad
Header Ad

হাসিনার বিচারের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান

সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। বিএনপি নেতাকর্মীসহ অসংখ্য মানুষকে গুম ও খুন করে স্বৈরাচার ভারতে পালিয়ে গেছে। যে কোন মূল্যে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের বিচার করতে হবে। এই প্রশ্ন গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে 'আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় জুলাই আগস্ট বিপ্লবে নিহত ৪৫ শহীদ পরিবারকে আর্থিক অনুদান এবং ‌র‌্যাবের গুলিতে নিহত যুবদল নেতা মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে ঘর উপহার উপলক্ষ্যে সোনাগাজী সরকারি ছাবের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তারেক রহমান আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের কথা বলে যে সময়ক্ষেপণ করছে এবং সংস্কার কাজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করছে, তা কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কি-না সে ব্যাপরে সবাই সজাগ থাকতে হবে।

এ সময় তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার বিগত ১৭ বছর মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল । সে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে লড়াই করে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ, বিগত ১৭ বছরের লড়াই এবং ২৪এর জুলাই আগস্টের বিপ্লবের চেতনায় আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে সবাইকে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। এখন দেশে যে সংস্কারের আলোচনা চলছে সেই সংস্কার প্রস্তাব বিগত আড়াই বছর পূ্র্বে আমরাই দিয়েছিলাম। স্বৈরাচার আমাদের সংস্কার প্রস্তাব আমলে নেয়নি। আর সেই বিশ্বাস থেকেই আমরা জাতির সামনে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি। কারণ বিএনপি দেশ ও জনগণ নিয়ে ভাবে। দেশের কল্যাণে কাজ করতে চায়।

দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে এবং শহীদদের স্বপ্নের দেশ বিনির্মাণ হবে।

বিএনপি দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি সব সময়ই দেশ ও জনগণের কল্যাণ নিয়ে ভাবে। এর বড় কারণ হলো- দেশের জনগণ বিএনপির উপর আস্থা রাখতে চায়। কীভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজে আসবে নেতাকর্মীদের সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

আমরা বিএনপি পরিবার কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও ফেনী পৌর বিএনপি'র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও আমরা বিএনপি পরিবার কেন্দ্রীয় কমটির সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুনের যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভেকেট রুহুল কবির রেজভী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক,জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ হারুন, সহ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ, অ্যাডভোকেট শাহানা আক্তার শানু, আবদুল লতিফ জনি, জালাল আহমদ মজুমদার, মামুনুর রশিদ মামুন, মশিউর রহমান বিপ্লব, ফেনী জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার, যুগ্ম আহবায়ক গাজী হাবিব উল্লাহ মানিক, সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জামাল উদ্দিন সেন্টু, সদস্য সচিব সৈয়দ আলম ভূঞা, শহীদ ছাত্রদল নেতা কাওছার উদ্দিনের পিতা ফিরোজ আলম, শহীদ মেহাম্মদ মাসুদের কন্যা মুনতাহা বিনতে মাসুদ ও শহীদ জাফর আহমদের কন্যা জাহানারা বেগম প্রমুখ।

এসময় ২০১৬ সালের ২৫ জুন র‌্যাবের গুলিতে নিহত মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে ঘর এবং ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে নিহত ৪৫ শহীদ পরিবারসহ আহতদের প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাঝে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।

Header Ad
Header Ad

মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কোপালেন আ'লীগের কর্মিরা

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর বদলগাছীতে মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়েছে স্থানীয় আ'লীগের কর্মিরা। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধায় উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের কটকবাড়ি এলাকায় তাকে কুপিয়ে আহত করা হয়। আহত অবস্থায় তাঁকে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত সিহাব নওগাঁ নামাজগড় গাউসুল আজম কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য ও একই এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বদলগাছী সদর এলাকার রাসেল ও সাথী নামে দুই যুবক-যুবতী গতকাল বিকালে নওগাঁ থেকে মার্কেট করে ফেরার পথে কটকবাড়ী এলাকায় মোটরসাইকেল থামিয়ে নদীর ধারে ঘোরাঘুরি করছিল। সন্দেহ হলে ঐ এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মি প্লাবন,অনিক,আশিক, রাকিব,ইয়াজুলসহ ১০-১৫ জন কর্মি তাদের আটক করে মারধর করে। পরে তাদের নদীর ধারে নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে দশ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবি করে। বিষয়টি জানাজানি হলে ছাত্রদল কর্মী সিহাব সহ গ্রামবাসি ঐ ছেলে মেয়েকে উদ্ধার করে থানায় খবর দেয়। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামী লীগের কর্মি কয়েকজন অতর্কিতভাবে তাঁর ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে ধারালো কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে সিহাব কে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্বজনেরা সেখানে গিয়ে সিহাব কে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন।

বদলগাছি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাহিদ রানা ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতা কর্মি। মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় তার ওপরে হামলা করেছে।’

বদলগাছী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সুমন হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘দলের দুঃসময়ের কর্মী সিহাব। ন্যাক্কারজনক এ হামলার ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।’

তবে অভিযোগ ওঠা যুবকদের সাথে যোগাযোগ করা না গেলেও তাদের মধ্যে রিয়াজুল নামের এক অভিভাবক দায়সারা জবাব দেন। তিনি বলেন, ওই দুই যুবক-যুবতী অনৈতিক কার্যকলাপ করার জন্য এসেছিল। তাদের সন্দেহ হলে এলাকার ছেলেরা ধরে বিচার করতে চেয়েছিল। সিহাব এখানে এসে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে একটু হাতাহাতি হয়েছে বলে শুনেছি।

এ প্রসঙ্গে বুধবার (৫ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজাহান আলী ঢাকাপ্রকাশকে বলেন , ‘ছাত্রদল কর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখনো অভিযোগ হাতে আসেনি। তবে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা
হাসিনার বিচারের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান
মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কোপালেন আ'লীগের কর্মিরা
খুব দ্রুতই জবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে: ছাত্রদল সভাপতি
বগুড়ায় ৫০ টাকা অফারে টি-শার্ট কিনতে গিয়ে হুলস্থুল কান্ড, নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী
নওগাঁ সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
মোহাম্মদপুরে বিড়াল হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা, তদন্তের নির্দেশ
চুয়াডাঙ্গায় সার কাণ্ডে বিএনপি ও যুবদলের ৫ নেতা বহিষ্কার
আজ বন্ধুর সাথে গোসল করার দিন
২ আলাদা বিভাগসহ দেশকে ৪ প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ সবাই খালাস
হাসিনার লাইভ প্রচারের আগেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ উধাও
হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা
বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর
গাজীপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সবজিবাহী পিকআপ খাদে, চালকসহ নিহত ৩
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে জনগনের মতামত চাইলো হাসনাত  
এই ফটো তোলোস কেন? আদালত চত্বরে শাহজাহান ওমর  
মনে হচ্ছে বিবিসি বাংলা গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার ভক্ত : প্রেস সচিব  
পটুয়াখালীতে বাংলাভিশনের সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম  
উত্তরবঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল বিক্রি বন্ধ