মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে জট খুললেও ভাঙছে না সিন্ডিকেট
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে সিন্ডিকেট প্রথা থেকেই যাচ্ছে বলে আশংকা করছেন সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্টরা। তারা বলছেন, আগে সরাসরি নির্দিষ্ট সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সির কথা বলা হলেও এখন সেটি বাদ দিয়ে কার্যত মালয়েশিয়ার হাতেই রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচনের ভার দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ একটু ইনিয়েবিনিয়ে আসলে সিন্ডিকেট ব্যবস্থাকেই বহাল রাখা হয়েছে।
‘নিষিদ্ধ হওয়ার ভয়ে’ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এই বিষয়ে অনরেকর্ড কথাও বলতে চাইছে না। বেশ কয়েকজন রিক্রুটিং এজেন্ট নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, সাধারণ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো তো ব্যবসাই করতে পারবে না। যে মালয়েশিয়া ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি দিয়ে সিন্ডিকেটের প্রস্তাব দিয়েছিল, সেই মালয়েশিয়ার হাতেই রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচনের ভার দেওয়া হয়েছে। এটা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক ব্যর্থতা।
সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ ছিল তিন বছর। সেই খরা কাটে ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে। সুযোগ তৈরি দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর।
কিন্তু এই যাত্রায় বাধ সাধে মালয়েশিয়ার একটি শর্ত। তাদের শর্ত ছিল মাত্র ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠাতে হবে। তবে রিক্রুটিং এজেন্টদের সংগঠন বায়রা এবং বাংলাদেশ সরকারও মালয়েশিয়ার শর্ত প্রত্যাখ্যান করে। বাংলাদেশ সরকার চিঠি দিয়ে সেটি জানিয়েও দেয় মালয়েশিয়াকে। এর ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়টি।
তবে গত ১ জুন ঢাকায় আসেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানন। গত ২ জুন তিনি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে।
বৈঠক শেষে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কর্মী পাঠানোর জট খুলেছে। ১৫২০টি রিক্রুটিং এজেন্সির সবগুলোই কর্মী পাঠাতে পারবে। তবে সবগুলো এজেন্সি তো সুযোগ পাবে না। কারা সুযোগ পাবে সেটা মালয়েশিয়া নির্ধারণ করবে।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী ১ জুন ঢাকায় আসার প্রাক্কালে কুয়ালালামপুরে সাংবাদিকদের জানান, তার সফরকালে ঢাকায় যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি বিক্ষোভ করবে সবগুলোকে নিষিদ্ধ করা হবে।
এম সারাভানন বলেন, ‘আমার ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে কিছু এজেন্সি বিক্ষোভ প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আমি এটা নিয়ে মোটেই ভীত নই। কারণ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যত বেশি হুমকি দেবে, ততো বেশি নিষিদ্ধ হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বায়রার এক নেতা বলেন, এরপর মালয়েশিয়ার মন্ত্রী এলেন। বৈঠক করলেন আমাদের মন্ত্রীর সঙ্গে। তারপর আমরা দেখলাম রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচনের ক্ষমতা মালয়েশিয়ার হাতে রাখা হয়েছে। তাহলে কি আর কথা বলার উপায় আছে?
এভাবে যদি রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচন হয় তাহলে সাধারণ এজেন্সিগুলো আদৌও ব্যবসা পাবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, কেউ যখন ব্যবসা শুরু করে তখন মার্কেটিং সম্পর্কেও সে ভেবেচিন্তেই ব্যবসায় নামে। কাজেই আমার তো মনে হয় পারবে।
মালয়েশিয়ার হাতে রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচনের ক্ষমতা প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, এটা তো তাদের হাতেই থাকবে। তারা আমাদের কাছ থেকে লোক নিবে। কীভাবে নেবে সেটা তো তাদের হাতেই রাখবে।
তবে বায়রার সাবেক সভাপতি বেনজীর আহমেদ বলছেন, কিছু বিতর্ক থাকলেও কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হওয়াটা ইতিবাচক। দ্রুত মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো যাবে এমন প্রত্যাশা করি।
আরইউ/এনএইচবি/