পদ্মা সেতু/ পেশা হারাচ্ছেন তবুও আনন্দিত রেজাউল
রেজাউল করিম। বয়স ৫৯। কাঁচা-পাকা চুল। ধবধবে সাদা দাড়ি। জীবনের অর্ধেকটা সময় অর্থাৎ গত ২৭ বছর পত্রিকা বিক্রি করে কাটিয়ে দিয়েছেন মাওয়া ফেরি ঘাটে। দেখেছেন মাওয়া ঘাটের রংঢং। উত্তাল পদ্মায় কত প্রাণ চলে গেছে, দেখেছেন সেইসব দৃশ্যও। কিন্তু এখন আর তাকে মাওয়া ঘাটে পত্রিকা বিক্রি করতে করতে এসব দৃশ্য দেখতে হবে না।
আগামী ২৫ জুনের পর আর তাকে ফেরি করে সংবাদপত্র বিক্রি করতে হবে না। এ নিয়ে তার মনে অনেক কষ্ট। সংসার কীভাবে চলবে, আয় হবে কেমনে, তিনিই বা জীবন পার করবেন কীভাবে? এসব নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। বললেন, ভবিষ্যতে কী হবে জানি না। সবই আল্লাহই জানেন। খুবই চিন্তায় আছি, কী করব। এই বয়সে তো আর কিছুই করতে পারব না। এত দুশ্চিন্তার মধ্যেও রেজাউলের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। কারণ তার সেইসব কষ্ট চাপা পড়ে গেছে পদ্মা সেতুর নিচে।
তিনি বলেন, আমার একজনের কষ্ট হলে কী হবে। সেতু হওয়ায় ভালোই লাগছে। দেশের এত বড় একটা সম্পদ। বৃহত্তম একটা সম্পদ। দক্ষিণবঙ্গের লাখ লাখ মানুষ এই সেতুর জন্য কত কষ্ট করেছে। কত মানুষের কত স্বপ্ন এই পদ্মায় তলিয়ে গেছে। কত মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে ফেরির অপেক্ষায়। এখন আর কোন মানুষকে কষ্ট করতে হবে না।
রেজাউল বলেন, ১০ বছর আগেও ভাবিনি এখানে সেতু হবে। এখন সত্যি সত্যিই সেতু হয়ে গেছে। দক্ষিণবঙ্গের মানুষকে এখন কষ্ট করে ফেরি পার হতে হবে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে বসে থাকতে হবে না। লাখ লাখ মানুষ এখন শান্তিতে-স্বস্তিতে বাড়ি যেতে পারবেন।
জানালেন, গত ২৭ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন। আগে দিনে তিনশ কপি পত্রিকা বিক্রি করতেন। করোনার সময় বিক্রি কমে গেছে। এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫০ কপি পত্রিকা বিক্রি করেন। ২৫ জুনের পর তো এখানে আর পত্রিকা বিক্রি করতে পারব না। মানুষ থাকবে না। গাড়ি-ঘোড়া থাকবে না।
একেবারে বিরানভূমিতে পরিণত হবে পুরো মাওয়া ঘাট। পত্রিকা আর বিক্রি করব কোথায়? তার কথায় আক্ষেপের সুর বাজে। এই আক্ষেপের মধ্যেও তিনি খুশি, ভীষণ খুশি, পদ্মার বুকে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে পদ্মার এপার-ওপার যুক্ত করা বিশাল সেতু। এটাই তাকে এখন আনন্দ দিচ্ছে।
রেজাউল আরও জানালেন, এই মাওয়া ঘাটে শুধু তিনি নয়, তার মতো পাঁচ থেকে সাত হাজার হকার আছেন। যারা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পসরা বিক্রি করে সংসার চালান। এদের সবার অবস্থা আমার মতোই হবে। কিন্তু দেশের মানুষের তো বিরাট উপকার হবে।
এমএইচএ/এমএমএ/