পি কে হালদারকে পেলে এস কে সুর ও শাহ আলমের বক্তব্য মিলিয়ে দেখা যাবে
প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারে অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) কবে নাগাদ-কীভাবে দেশে ফেরানা যাবে, এই নিয়ে চলছে নানামূখী আলোচনা। আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর (এস কে সুর) চৌধুরী এবং নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম প্রসঙ্গও।
কারণ পি কে হালদারের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় এই দুই জনকে মাস দেড়েক আগে তলব করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বর্তমানে পি কে হালদারকে পাশ্ববর্তী দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করার পর এই দুইজনকে নিয়েও হচ্ছে আলোচনা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টে দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, পি কে হালদারের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় এস কে সুর ও শাহ আলমকে তলব করেছিল কমিশন। এখন পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলে আদালতের অনুমতি নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। তারপর তার বক্তব্যের সঙ্গে এস কে সুর ও শাহ আলমদের দেয়া বক্তব্য মিলিয়ে দেখা যাবে।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘এস কে সুর ও শাহ আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি পি কে হালদারের বিষয়ে তদন্তের একটা অংশ।’
প্রসঙ্গত, দুদকের তলবে গত ২৯ মার্চ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন এস কে সুর চৌধুরী ও শাহ আলম।
কমিশনের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক ওই দিন জানিয়েছিলেন, ওইদিন সকাল ১০টা পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়, অনুসন্ধান কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর আগে, গত ২৪ একই কর্মকর্তা তাদেরকে তলব করে নোটিশ পাঠান।
উল্লেখ্য ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে ‘অস্তিত্বহীন’ প্রতিষ্ঠানের নামে আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছিল তাদের।
কমিশন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইএলএফএসএল থেকে ‘কাগুজে’ প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ইতোমধ্যে ২২টি মামলা করেছে। তা ছাড়া এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ‘কাগুজে’ প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আরও ১৩টি মামলা করেছে কমিশন। এসব মামলায় পি কে হালদারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, পি কে হালদারের দুই সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক ও পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী আদালতে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন, সেখানে এস কে সুর ও শাহ আলমের নাম আসে।
পিপলস লিজিংয়ের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীরাও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন। তাদের আবেদনে হাইকোর্ট গতবছর যে ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তাদের মধ্যে এস কে সুর চৌধুরীর নামও ছিল।
২০২১ সালের জুলাই মাসে এস কে সুর চৌধুরী ও তার স্ত্রী সুপর্ণা সুর চৌধুরীর সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধেরও (ফ্রিজ) নির্দেশনা দেয় এনবিআর।
এস কে সুর চৌধুরী ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডেপুটি গভর্নরের পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি অবসরে রয়েছেন।
আর অভিযোগ ওঠার পর ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলমকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে তিনি অন্য বিভাগে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এমএ/এমএমএ/