নতুন দামের লেবেল লাগেনি তাই তেল মিলছে না

সয়াবিন তেল নেই, আছে সূর্যমুখি ও সরিষার তেল
বাজারে হঠাৎ করেই আবার ভোজ্যতেলের সংকট দেখাচ্ছেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীরা। যেসব প্রতিষ্ঠান ভোজ্যতেল আমদানি করে তাদের গুদামে তেল থাকলেও বাজারে সংকট দেখানো হচ্ছে। নতুন বেধে দেওয়া দরের লেবেল বোতলে লাগলেই সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন খুচরা বিক্রেতারা। দাম বাড়ানোর পর যে সংকট দেখানো হচ্ছে সেটা লেবেলের অপেক্ষা। রাজধানীর বড় পাইকারি বাজার কাওরান বাজারে অন্তত ৭টি ডিলার ভোজ্যতেল বিক্রি করে। তবে শুক্রবার (০৬ মে) বিকালে কাওরান বাজার ঘুরে মাত্র একটি ডিলারের দোকান খোলা পাওয়া যায়। আঁখি এন্টারপ্রাইজ নামে ওই ডিলারের কাছে পুষ্টি তেল রয়েছে।
আঁখি এন্টারপ্রাইজের মালিক সিদ্দিক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, বাজারে আরও ৬ টি ডিলার রয়েছে। কোনো ডিলারই তেল দিচ্ছে না। আমি ২ লিটার বোতলের ২০০ কার্টুনি তেল পেয়েছি। সব কাস্টমার এখন আমার দোকানে ভিড় করছে। আমার নিয়মিত কাস্টমার যেসব দোকানদার তাদের দেব নাকি খুচরা কাস্টমারদের দেব। অনেকে এক বোতল নিয়ে আবার এসে একটি বোতল চাচ্ছে কিভাবে তাদের বোঝাবো? আমার যদি ২ হাজার কার্টুন থাকত আমি সবাইকে দিতাম।
কাওরান বাজারে আঁখি এন্টারপ্রাইজ ছাড়াও রয়েছে বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ (সানফ্লাওয়ার), ইয়াসিন এন্টারপ্রাইজ (ফ্রেশ), আল আমিন এন্টারপ্রাইজ, গিয়াস এন্টারপ্রাইজ, মিলু এন্টারপ্রাইজ এরা সকলেই ভোজ্য তেলের ডিলার। তবে শুক্রবার বিকালে আঁখি এন্টারপ্রাইজ ছাড়া আর কেউ দোকান খোলেননি।
সকালে দোকান খুললেও কাস্টমারদের চাপের ভয়ে দুপুরে বন্ধ করে বাসায় চলে যান মিলু এন্টারপ্রাইজের মালিক বিপ্লব। ব্যবসায়ী পরিচয়ে এক কার্টুন তেল চাইলে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘তেল নাই দাদা। এক কার্টুনও নাই। পরশু আসলে পাবেন। নতুন লেবেলটা লাগলেই তেলের সংকট কেটে যাবে।’
কাস্টমারের চাপ সামলাতে না পেরে সোয়াবিন বিক্রি বন্ধই করে দিয়েছেন হাজী স্টোরের কামাল হোসেন। তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, কাস্টমার সব মিল নেওয়ার পর যখন তেল চায়, দিতে পারি না। পরে রাগ করে চলে যায়। তেল যদি সাপ্লাই না থাকে আমরা কোথা থেকে দেব? ঈদের আগ থেকেই তেল সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছে। দাম বাড়ানোর জন্যই এটি করা হয়েছে। এখন সরকার দাম বৃদ্ধি করেছে বোতলের গায়ে নতুন লেবেল লাগতে সময় লাগবে তো। আজ রাতটা গেলেই কাল বা পরশু থেকে বাজারে তেলের সংকট থাকবে না। নতুন দামে সব তেল পাবেন।’
দোকানে যখন বোতলজাত সোয়াবিন তেল মিলছে না তখন বাধ্য হয়ে খুচরা ক্রেতারা ডিলারে কাছে লাইন দিচ্ছে। কাওরান বাজার আঁখি এন্টারপ্রাইজের সামনে গিয়ে দেখা যায় তেলের জন্য লাইন ধরে অপেক্ষা করছে অনেকে। তাদের অধিকাংশই খুচরা ক্রেতা। আবার কেউ কেউ দোকানের জন্য তেল কিনতে আসছেন। খুচরা ক্রেতাদের দুই লিটারের একটি করে বোতল নিয়ে যেতে দেখা যায়।
কাওরানবাজারেই কাজ করেন মাসুদ। তিনি লাইন দাড়িয়ে দুই লিটারের একটা বোতল হাতে পেয়ে খুব খুশি। তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে কিনলেন নাকি নিতান্তই প্রয়োজন এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদের সোজা উত্তর ‘দরকার ছিল’ গ্রামে গেছিলাম সকালে আসছি। বাসায় তেল নাই।’
মাসুদের পরিবারের সদস্য দুই জন। তিনি বলেন আমার পরিবারে ৩ থেকে ৪ লিটার তেল হলে ভালোভাবে মাস চলে যায়। অর্থাৎ নতুন বর্ধিত দামে তাঁর চারজনের পরিবারের কমপক্ষে ১৬০ টাকা বেশি লাগবে এক মাসে। তাই টাকা বাঁচাতেই লাইন ধরে বসে আছেন তার মতো অনেকে।
আর একজন ক্রেতা মোতালেব তিনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, তেলটা আজ আমার লাগতই। নতুন দাম ধরছে দুই দিন পর এমনিতেই মার্কেটে আসবে। আমার এরকম অবস্থা না হলেই না। এজন্য লাইনে দাঁড়িয়ে নিচ্ছি। আমার লাইন ধরে নেওয়ার দরকার হতো না, আজ একদমই তেল নাই। সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে ৫ লিটার ৯৯৫ টাকা এটা দিতে বাধ্য। যেভাবে দাম বাড়ছে আগে খেতাম ৫ লিটার, এখন ৪ লিটার খাব।
ঈদের আগে থেকে বাজারে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। অবশেষে সরকার ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নিয়ে বৃহস্পতিবার (৫ মে) বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৩৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ৪৪ টাকা ও পাম তেলের দাম লিটারে ৪২ টাকা বাড়ায়। নতুন নির্ধারণ করা দাম অনুযায়ী প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল খুচরা বাজারে বিক্রি হবে ১৮০ টাকা। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯৮ টাকা এবং পাম সুপারের দাম ১৭২ টাকা। সরকার বেঁধে দেওয়া এ দাম শুক্রবার (৬ মে) থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন নতুন লেবেল না আসায় তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
এসএম/
