মা ছাড়া শিশু ওহী-রাহীর নিরানন্দ ঈদ

ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বরে ডেন্টাল কলেজের সামনে বাসের ধাক্কায় সাবিনা ইয়াসমিন (৩১) নামে এক নারী মারা যান। এ দুর্ঘটনায় তার দুই মেয়ে হুমায়রা ইয়াসমিন ওহী (১০) ও রাফিয়া ইয়াসমিন রাহী (৮) আহত হয়। ওহী ও রাহী বিএন স্কুলের শিক্ষার্থী। এবার মা ছাড়া তাদের ঈদ আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে। ঈদের দিনে শিশু ওহী ও রাহী তাদের বাবাকে বারবার মায়ের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাবা শফিকুল ইসলাম।
মা ছাড়া ঈদুল ফিতর কেমন কাটছে এ সব বিষয়ে কথা হলে মঙ্গলবার (৩ মে) শিশুদের বাবা মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে রফিকুল তাদের সার্বিক বিষয়ে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, এই ঈদে আমার বাচ্চারা তাদের মা ছাড়া ভালো নেই। তাদের মনে কোনো আনন্দ নেই। তারা বিষণ্নতায় ভুগছে।
নিহত সাবিনা ইয়াসমিনের গ্রামের বাড়ি বগুড়া সদর উপজেলায়। তার স্বামী রফিকুল ইসলাম। রফিকুল নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। দুই মেয়েকে নিয়ে তারা মিরপুরের বিআরবি কলোনির বি-৩৭ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায় বসবাস করতেন। প্রতিটা ঈদে ছুটির পর গ্রামের বাড়িতে যেতেন তারা সেখান থেকে বাচ্চাদের নিয়ে বগুড়ায় শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যেতে হয় এবার কোথাও যাচ্ছেন না রফিকুল।
সাবিনার ভাই মামুনুর রশীদ বলেন, বগুড়ার ধুনটে এলাকায় আমার বোনের দাফন সম্পন্ন হয়। বাচ্চাদের মায়ের কথা বেশি মনে পড়বে এ জন্য তারা গ্রামের বাড়িতে আসেনি। হয়ত ঈদের পর তারা আসতে পারে।
স্ত্রী সাবিনা মারা যাওয়ার পর তাদের দুই মেয়ে ওহী ও রাহীর দিন কেমন কাটছে এমন প্রশ্নের জবাবে নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, মেয়েদের সামনে নির্মমভাবে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আমার স্ত্রী মারা যান। ঈদে তারা তাদের মাকে প্রচণ্ড মনে করছে। মেয়েরা বারবার বলছে আমাদের মা কোথায় হারিয়ে গেল? আমার মেয়েরা মা ছাড়া ভালো নেই। বড় মেয়ে ওহী সব সময় চিন্তামগ্ন থাকে, পড়ালেখার প্রতি তেমন কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। মামাবাড়ির কারোর প্রতি ইন্টারেস্ট নেই তাদের। আসলে মা ছাড়া ভালো থাকা যায় না।
তিনি আরও বলেন, ওদের মা মারা যাওয়ার পর থেকেই তারা অনুশোচনায় ভুগছে বলে আমার মনে হচ্ছে। আর ছোট মেয়ে রাহী প্রায়ই মা মা বলে কান্নাকাটি করে। তাদের মা যে, আর পৃথীবিতে নেই, সে কোনো দিন আসবে না, এটাই আমি ওদের বুঝাতে পারছি না।
রমজানের পর আজ পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে কিন্তু এই আনন্দ আমার ঘরে নেই। বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকালে আমার খারাপ লাগে। আসলেই কোনো বাচ্চারা মা ছাড়া ভালো থাকতে পারেনা। ওরা ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকি। ওরা ওদের মায়ের কথা বারবার মনে করছে এটাতে আমার আরও খারাপ লাগছে। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
এ ঘটনার সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ভাষানটেক থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক অনয় চন্দ্র পাল ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। এটির তদন্ত চলমান রয়েছে। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
নিহতের শিশুরা কেমন আছে তাদের বিষয়ে সার্বিক কোনো খোঁজখবর নিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সব সময়ই তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি, তবে জানতে পেরেছি মা ছাড়া শিশুরা ভালো নেই।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ মার্চ দুপুরে অটোরিকশায় করে দুই সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন মা সাবিনা ইয়াসমিন। কিন্তু পথেই পেছন থেকে একটি বাস অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয় এরপর এ ঘটনায় মা ও মেয়েরা (দুজন) রাস্তায় ছিটকে পড়েন। সৌভাগ্যক্রমে দুই সন্তান বেঁচে গেলেও তাদের মা চিরতরে হারিয়ে যায়।
কেএম/আরএ/
