দল গোছানোর সঙ্গে প্রার্থী বাছাইও শুরু করেছে আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনও ১৮ মাস। তবে এরইমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী মাঠ গোছাতে ব্যস্ত। সংবিধান অনুযায়ী ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই সময়কে রোডম্যাপ ধরেই নির্বাচনি মাঠ গোছাতে শুরু করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
আগামী সংসদ নির্বাচন অনেকটা চ্যালেঞ্জ হবে ধরে নিয়ে যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করতে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তৎপর। এদিকে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। সেই কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।
গেল দুই সংসদ নির্বাচনের মতো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বীতাহীন হবে না এটা ধরেই নিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় আন্তর্জাতিক চাপ মাথায় রেখে দল গোছাতে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ। সেজন্য আগামী ২২তম কাউন্সিলকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা।
ঈদুল ফিতরের পর আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড, জেলা, উপজেলা পর্যায়ের সকল কমিটি চূড়ান্ত করতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ। আর জেলাগুলোতে কমিটি দেওয়ার মাধ্যমে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বাছায়ের কাজও করে ফেলতে চায় দলটি। টানা তিন বার ক্ষমতায় থাকায় অনেক সংসদ সদস্য ও দলের নেতাদের মধ্যে গা ছাড়া ভাব দেখা দিয়েছে বলে হাই কমাণ্ডের দৃষ্টি গোচর হয়েছে।
যারা ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের তৃণমূলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিজস্ব বলায় সৃষ্টি করেছে তাদের বিষয়ে কঠোর নতুন করে ভাবতে চায় আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে যেসকল সংসদ সদস্য নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে তাদের আর সুযোগ দিতে চান না আওয়ামী লীগ সভাপতি। দলের নীতি নির্ধারণী মহলের কাছে এমন বার্তাই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ফলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অনেক সংসদ সদস্যের কপাল পুড়তে পারে। তাছাড়া কিছু আছে বার্ধক্যজনিত কারণে তৃণমূলে সময় দিতে পারছেন না তাদেরও বিকল্প খুঁজছে আওয়ামী লীগ। সামনের দিনগুলোতে মাঠের রাজনীতিতে যারা সময় দিতে পারবে এবং বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার মতো দক্ষতা যাদের আছে তাদেরই চায় আওয়ামী লীগ।
এবিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ দিন এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি সবই ভালো করে জানেন এবং বোঝেন। সব সময়, সময় উপযোগী করে দল সাজিয়ে থাকেন এবারও সেভাবেই সাজাবেন। সংসদ নির্বাচনের আগে দলের জাতীয় কাউন্সিল হওয়ায় এবারের কাউন্সিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের পূর্বে সারাদেশকে যেমন আমরা ঢেলে সাজাচ্ছি, তেমনি কেন্দ্রীয়-ভাবে দলকে ঢেলে সাজানোর ব্যাপার তো রয়েছেই। আগামী দিনে এই কেন্দ্রীয় কমিটি (নতুন যে কমিটি হবে) নির্বাচনকে নেতৃত্ব দেবে।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছায়ের কাজটি কিভাবে দেখছে দল এমন প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, ‘একেবারে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে দিতে হবে। অবশ্যই তাকে সৎ নির্ভীক হতে হবে, এমনতর প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। যাদের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে এবং যে বিষয়ে অভিযোগ সে সব কিছুর উপর একটি সার্ভে চলছে। বার বার মাঠ জরিপ করে আমলনামা নিচ্ছেন। সেই আমলনামা অনুসারে কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে কেউ রেহাই পাবে না, কেউ না। সে যত বড় নেতাই হোক, আর যত বড় যেই হোক, কেউ রেহাই পাবে না।’
ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, এরইমধ্যে আদের দলের সাধারণ সম্পাদক দলের জাতীয় কাউন্সিলের একটা সময়সীমা ঘোষণা করেছেন। তাই আমরা সাংগঠিনকভাবে জেলা উপজেলা, থানার কমিটি প্রস্তুত করতে পুরোদমে কাজ করছি। দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে নভেম্বরের আগেই সব মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন করে গঠন করতে হবে। সময় হাতে বেশি নেই, রোজার পর মে, জুন, জুলাই এই সময়টা বেশি কাজে লাগাতে হবে। আগস্ট মাস শোকের মাস তাই ওই সময় দলের অনেক কাজই সেভাবে করা হয় না। তাই সব জেলার কমিটি গঠনের জন্য সকল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন আমাদের নেত্রী।’
দলের কাউন্সিল উপলক্ষে তৃনমূল আওয়ামী লীগ ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে এক ধরণের বিরোধ প্রায়শই লক্ষ্য করা যায়। এবারও কাউন্সিলের আগে অনেক জেলাতেই সেই বিরোধটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এরইমধ্যে কোনও কোনো জেলার নেতৃত্ব থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে সংসদ সদস্যদের। নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম শিমুলকে। এরকম যাদের বিরুদ্ধে দলের বাইরে নিজ বলয় তৈরি করেছে তাদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় হাই কমাণ্ডের কঠোর বার্তা।
এসএম/
