দফায় দফায় পেছানোর পর আলোর মুখ দেখছে জনশুমারি
করোনার থাবা আর ট্যাব কেনায় অনিয়মের অভিযোগ উঠায় কয়েক দফা পেছানোর পর অবশেষে দেশে ষষ্ঠ জনশুমারি হচ্ছে। আগামী ১৫ থেকে ২১ জুন সারাদেশে একযোগে জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২১ অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত বছরের ২ থেকে ৮ জানুয়ারি দেশে জনশুমারি ও গৃহগণনার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ট্যাব ক্রয় নিয়ে অনয়িমের অভিযোগ উঠার পর ওই সময়ে আর জনশুমারি আর হয়নি। এরপর আরও কয়েক দফা পিছিয়েছে একই সমস্যার কারণে। সঙ্গে করোনা মহামারিও ছিল একটা বড় কারণ।
প্রসঙ্গত, বিবিএস এবারই প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্যাবের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে জনশুমারি করার উদ্যোগ নিয়েছিল।
জানা গেছে, জনশুমারি ও গৃহগণণা ২০২১ ডিজিটাল পদ্ধতিতে করার জন্য সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রথমেই এই প্রকল্পের জন্য কার্যক্রম শুরুর আগে ট্যাব ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেখানে স্যামসাং অংশ নেয় এবং তারা প্রায় চার লাখ ট্যাব সরবারহের চুক্তি করে। এই ট্যাব কেনায় মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৩৭ কোটি ১২ লক্ষ ১০ হাজার ৩৯৫ টাকা।
কিন্তু এই ট্যাব সরবরাহের ক্ষেত্রে এবং স্যামসাং এর কাজ পাওয়ার বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে পরিকল্পনা মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেই চুক্তি বাতিল করা হয়। এ কারণে জনশুমারি ও গৃহগণনা পিছিয়ে যায়।
এরপর একই কোম্পানির কাছ থেকে ট্যাব কেনার জন্য বেশ কয়েক বার ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সেই প্রস্তাব চার দফা ফিরিয়ে দেয় ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। সর্বশেষ যখন বিবিএস এর প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয় তার ঠিক চার দিন পর ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর সারাদেশে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ শুরু হওয়ার কথা ছিল।
এর আগে ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর সময় জনশুমারি ও গৃহগণনার তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল । কিন্তু তখনও জনশুমারি করতে পারেনি বিবিএস। এইভাবে দফায় দফায় পিছিয়ে অবশেষে আগামী ১৫ থেকে ২১ জুন সারাদেশে একযোগে জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হবে।
জনশুমারির তারিখ বার বার পিছানোর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম অনেকটা বিরক্তির সুরে শনিবার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘কেন বার বার পিছিয়েছে, কী কারণে শুমারি এতদিন করতে পারিনি সেটা জেনে কী হবে। বরং বলেন, এবার যেন আমরা কাজটা করতে পারি। এবার যেন তারিখটা পেছাতে না হয়।’
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান শনিবার ঢাকাপ্রাকশ-কে বলেন, ‘জনশুমারি পিছিয়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ ছিল কোভিড-১৯। এ ছাড়া ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি ও গৃহগণনা করার জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে ট্যাব কিনতে গিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠার পর সেটি আমরা বাতিল করি। এ কারণেও পিছিয়ে গেছে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে আমরা নতুন করে পদক্ষেপ নেই। এ জন্য ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে বেশ কয়েকবার ঘুরতে হয়েছে। সেখানে সময় লেগেছে। এরপর আমরা নতুন করে দরপত্র আহ্বান করি। সেখানে বিট করেছে দেশি কোম্পানি ওয়ালটন। এখন তারা ট্যাব সাপ্লাই দেবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, গত মার্চ মাসেও আমরা একবার উদ্যোগ নিয়েছিল, তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম। কিন্তু সেটাও সম্ভব হয়নি। এবার ১৫ থেকে ২১ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও ইতিমধ্যে অনুমোদন দিয়েছেন। আশা করি, এই দফায় আমরা জনশুমারি সম্পন্ন করতে পারব।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে প্রথম আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চমবার দেশে আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়। ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ‘পরিসংখ্যান আইন-২০১৩’ অনুযায়ী ‘আদমশুমারি ও গৃহগণনার নাম পরিবর্তন করে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ করা হয়। ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার।
নিয়ম অনুযায়ী, দেশে প্রতি ১০ বছর পর জনশুমারি ও গৃহগণনা হয়ে থাকে। কিন্তু ২০১১ সালের পর ১২ বছর পার হয়ে গেলেও জনশুমারি ও গৃহগণনা করা যায়নি।
এবারই প্রথম দেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি ও গৃহগণণা অনুষ্ঠিত হবে। এবারের শুমারিতে জিআইএস বেইজড ডিজিটাল ম্যাপ ব্যবহার করে ট্যাবের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
জনশুমারির বার্তা জনসাধারণের কাছে পৌঁছাতে শুমারি শুরুর আগে অর্থাৎ ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
এনএইচবি/এমএমএ/