জুনেই শেষ হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাজ
পদ্মা সেতুর কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যেই শেষ হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের শেষেই পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার জন্য সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
বুধবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনের শেষ দিনে লিখিত প্রশ্নত্তোর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, ‘২০২২ সালের শেষ নাগাদ পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে পদ্মা সেতু নিয়ে নানামুখি আলোচনা শুরু হয়েছে।
একই দিনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘পদ্মা সেতুর সিডিউল টাইম হচ্ছে ডিসেম্বর ২২ পর্যন্ত। আমরা চেষ্টা করছি যদি সম্ভব হয়…দেখা যাক, আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব, দেখি তিনি কি বলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেটা বলছেন তার একটা লজিক হল রিসেন্টলি কিছু মালামাল আসতে অসুবিধা হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য। যেগুলো মার্চ মাসে আসার কথা ছিল সেগুলো আনসার্টেনিটি চলে আসছে। সে জন্য আমাদের একটা সেফটি মেজারমেন্ট...আমদের টাইম আছে ডিসেম্বর ২২ পর্যন্ত। পদ্মা সেতুর কিছু মালামাল ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আনতে হচ্ছে। আর কিছু কিছু মাল আছে একটি বা দু’টি দেশই বানায়। পদ্মাতে এমন সব জিনিষ ইউজ করা হয়েছে যেগুলো পৃথিবীর সব জায়গায় পাওয়া যায় না। একটা বা দুইটা দেশে আছে। এমনিতেই কোভিডের জন্য এসব মালামাল আসতে দেরি হচ্ছিল তার মধ্যে এই যুদ্ধের কারণে আরও দেরি হচ্ছে। এটা আমরা কথা বলে নেব।’
অন্যদিকে সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বার বার বলে আসছিলেন জুনেই পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এ বছরের শেষের দিকে পদ্মা সেতু চালু হবে। প্রত্যাশা করে আছি, এ বছরের শেষ নাগাদ এটি চালু করতে পারব। আমাদের অর্থবছর শেষ হবে জুন মাসে। আমরা বিশ্বাস করি, এর মধ্যে এটি চালু করতে পারব।’
বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। মানুষ প্রতীক্ষায় আছে জুনেই পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। পদ্মার দুই পাড় একই সুতোয় বুনবে নতুন স্বপ্ন। ঠিক সেই সময়ে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে মানুষের মধ্যে আবারও কৌতুহল তৈরি হয়েছে। অনেকের মনেই সন্দেহ দানা বাঁধছে আগামী জুনে পদ্মা সেতু খুলবে কি না।
বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ জুনের মধ্যেই শেষ হবে। সেই লক্ষ্যেই তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদ্মা সেতু প্রকল্পের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, জুনের মধ্যেই সব কাজ শেষ হবে। ইতিমধ্যে মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে মোট ৯৭ শতাংশ। বাকি তিন শতাংশ শেষ করতে দ্রুত গতিতে কাজ চলছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। সেতুর কাজে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেতুর সড়ক অংশ খুলে দেওয়ার জন্য ৩০ জুনের মধ্যেই তারা বাকি কাজ শেষ করে ফেলবেন।
পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এখন মূল সেতুর উপরি অংশে চলছে দুই লেয়ার বা স্তরের পিচ ঢালাইয়ের কাজ। একই সঙ্গে ভায়াডাক্ট কার্পেটিং-এর কাজও চলছে দ্রুত গতিতে। ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজও দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
এ ছাড়া সেতুর ল্যাম্পপোস্ট লাগানো, অ্যালুমিনিয়াম রেলিং নির্মাণ, সিগন্যাল সিস্টেম ও অন্যান্য কাজও চলছে সমানতালে। এসব কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে।
এর বাইরে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন এবং ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ লাইন টানার কাজ শেষ পর্যায়ে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, বছরের শেষেই পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে। আমরা বছরের শেষ বলতে অর্থবছর বুঝি। জুলাই থেকে জুন হচ্ছে অর্থবছর। অর্থাৎ ৩০ জুন বছর শেষ হচ্ছে। ১ জুলাই নতুন অর্থবছর শুরু হবে।
সে হিসেবে জুন মাসেই সেতু খুলে দেওয়া হবে। জুনকে টার্গেট করেই সব কাজ শেষ করা হচ্ছে।
অপর একজন কর্মকর্তা জানান, কিছু জিনিষপত্র ইউরোপ থেকে আসবে, এটা সত্য। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেগুলো আসতে বিলম্ব হচ্ছে। এ জন্য অবশ্য সেতুর কাজ বন্ধ নেই।
তিনি জানান, নির্ধারিত সময়ের আগেই এসব মালামল চলে আসবে। এ নিয়েও কোনোরকম উৎকণ্ঠা নেই।
এদিকে চলতি অর্থবছরের শেষ দিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর সেতুর রেল পথের কাজ করার জন্য রেলওয়ে মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ওই সময় সেতুর নিচ তলায় রেলপথের কাজ করতে গিয়ে কোন রকম সমস্যা দেখা দিলে প্রয়োজনে সেতুর উপর অংশে চলাচলকারি যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পর সেতুতে যান চলাচল বন্ধ করা হবে না।
এনএইচবি/এমএমএ/