বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২২ মাঘ ১৪৩১
Dhaka Prokash

মতিঝিলে ধারাবাহিক খুন! পরবর্তী টার্গেট কে?

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে একের পর এক খুন হচ্ছে অনেকেই। সম্প্রতি এ খুনের সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। অপরাধ বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, মতিঝিল নিয়ন্ত্রণকারী গ্যাং মিল্কি, রিজভি হাসান বাবু ও টিপু হত্যার পর পরবর্তী টার্গেট কে?

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, মতিঝিল নিয়ন্ত্রন মানে পুরো ঢাকা নিয়ন্ত্রণ। মতিঝিল কেন্দ্রিক চাঁদাও উঠে মাসে কোটি টাকার উপরে। শুধু কি চাঁদা? বিভিন্ন টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণও এখান থেকে। আর নিয়ন্ত্রণ নিতেই একের পর এক নেতার উত্থান। আর এসব নেতারাও টিকতে পারছেন না। এক সময়ের ঢাকা কাঁপানো শীর্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের কথা না শুনলেই দেশের বাইরে থেকেই নিখুঁত পরিকল্পনায় হত্যা করে যাচ্ছে। গত ৭/৮ বছরে মতিঝিল কেন্দ্রিক আন্ডারওয়ার্ল্ডের ঝামেলায় খুন হয়েছে তিন নেতা।

এছাড়াও বাড্ডার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাহাবুবুর রহমান গামাসহ ৪ হত্যার পেছনেও একই আন্ডারওয়ার্ল্ড কাজ করেছে। যার কারণে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে এখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নেতারা বলছেন, ধারাবাহিক হত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে। এখন পরবর্তী টার্গেট কে সেটাই দেখার অপেক্ষা।

টিপু হত্যাকান্ডে আতঙ্কিত ঠিকাদারী ব্যবসায়ীরা
একটি তথ্য বলছে, টিপু হত্যাকান্ডের পর সারাদেশে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে‌। রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, শাহাজানপুর, রামপুরা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের অনেক নেতারাই আতঙ্কিত। বিশেষ করে যে সকল নেতারা ঠিকাদারী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তারা আরও বেশি আতঙ্কিত।

মতিঝিল কেন্দ্রিক রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ঝড়
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন নেতা জানান, জাহিদ হাসান মিল্কি হত্যাকান্ডের পর থেকে মতিঝিল কেন্দ্রিক রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে একটি ঝড় বয়ে গেছে। মিল্কি হত্যার পরে জাহিদ সিদ্দিকি তারেক র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। এরপর মতিঝিলের নিয়ন্ত্রণ কে নেবে তা নিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। মিল্কি হত্যার পর টিপুসহ অনেক নেতাই যখন আসামি, আবার অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে জেলখানায় ঠিক সেই সময় সম্রাট সেই জায়গা দখলে নেয়।

এরপর মতিঝিল নয়, পুরো দক্ষিণ মহানগরে সম্রাটের একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি হয়। এক পর্যায়ে আধিপত্যের মাত্রা এমন হয়ে যায় শুধু দক্ষিণের নয়, উত্তর দক্ষিণের একক আধিপত্য চলে আসে তার নিয়ন্ত্রণে। রাজধানী জুড়ে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু হলে সম্রাট, খালেদ গ্রেপ্তার হলে আবারও শুরু হয় আধিপত্যের লড়াই।

এই এলাকায় রাজনীতি করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, মিল্কি মার্ডারের পর থেকে মূলত শুরু হয়েছে আধিপত্যের লড়াই। মিল্কি হত্যার সঙ্গে জড়িতরা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলে বোচা বাবু হত্যাকান্ড ঘটে। সর্বশেষ টিপু হত্যাকান্ড সংঘঠিত হয়।

বিভিন্ন রাজনৈতিক সূত্র বলছে, টিপু হত্যাকান্ডের পর সম্রাট ও খালেদের কাছেও খবর পৌঁছে যায়। বর্তমানে এ এলাকার আধিপত্য নিতে কারাগারে থাকা সম্রাট, খালেদ এমনকি গোল্ডেন মনিরের কাছে অনেকেই ধর্না দিচ্ছে।

যা বলছে যুবলীগ নেতারা
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের এক নেতা বলেন, দক্ষিণ যুবলীগের মধ্যে মতিঝিল, পল্টন, শাহজাহানপুর এলাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক নেতা ঠিকাদারী কাজ করেন। বড় কোন কাজ হলেই এই তিন থানা এলাকার ছোট নেতা হলেও তাদের সমিহ করে টাকা দিতে হয়। তা না হলে করুন পরিনতি ভোগ করতে হবে।

বর্তমান যুবলীগের কেন্দ্রীয় আরেক নেতা বলেন, সম্রাট-খালিদও একই পথ অবলম্বন করত। বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের নামে চাঁদা উঠতো। পাশাপাশি ক্যাসিনো থেকেও উঠতো টাকা। এই টাকাও তাদের দুবাইসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিকট বিভিন্ন মাধ্যমে পৌঁছে দিতে হত।

এদিকে মিল্কি, বোঁচা বাবু হত্যার পর সম্রাট-খালিদ ম্যানেজিং এর কাজটি ভালোভাবেই করত। এ কারণে তাদের সমস্যাও হয়নি। কিন্তু ক্যাসিনো কান্ডে তারা গ্রেপ্তার হয় এবং কারাগারে রয়েছে।

যুবলীগের বেশ কিছু নেতা বলছেন, সম্রাট একবার অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। ওই সময় আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার ঝামেলা বাধে। ওই সময় হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তাকে হত্যা করতে কিলার ভাড়া করে পাঠানো হয়। অল্পের জন্য বেঁচেও যায় সে। তবে গ্রেপ্তার হয়ে সম্রাট খালেদ জেলহাজতে থাকায় টিপু অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে চেয়েছিল।

টিপুর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এরপর যা বলছে গোয়েন্দারা

এদিকে র‌্যাব জানায়, ২০১৩ সালে রাজধানীর গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে মিল্কী হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়। টিপু হত্যায় গ্রেপ্তারকৃত ওমর ফারুক (৫২), আবু সালেহ শিকদার (৩৮), নাছির উদ্দিন (৩৮) ও মোরশেদুল আলম (৫১)। গ্রেপ্তারকৃতরা মিল্কীর সহযোগী ছিল। মিল্কী হত্যার সঙ্গে টিপু জড়িত ছিল বলে গ্রেপ্তারকৃতরা সন্দেহ করত।

মিল্কী হত্যার মামলার এজহারে টিপুর নামও দেয় তারা। কিন্তু বিচারিক কার্যক্রমে টিপুর নাম বাদ পড়ায় গ্রেপ্তারদের মনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

দীর্ঘদিন ধরে ভিকটিম ও হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বিরোধ ছিল উল্লেখ করে র‌্যাব জানায়, মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছিল। এছাড়া এলাকার আধিপত্য বিস্তারসহ মামলা সংক্রান্ত বিষয়েও টিপুর সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃতদের দ্বন্দ্ব ছিল। আর এসব দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করেই টিপুকে হত্যা করা হয়।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেছেন, টিপুকে হত্যা করার জন্য ১৫ লাখ টাকা বাজেট করে পরিকল্পনাকারীরা। আন্ডার ওয়ার্ল্ড ডন মুসাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এ হত্যাকাণ্ডে। ঘটনার ১২ দিন আগে মুসা দুবাই চলে যায়। সেখানে বসে তিনি কিলার নিয়োগ করা থেকে শুরু করে হত্যার ফাইনাল মিশন শেষ করে।

এর আগে টিপু-প্রীতি হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টা পর মো. মাসুম ওরফে আকাশ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মতিঝিল বিভাগ। পুলিশ বলছে, মাসুমই ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে টিপুকে গুলি করে হত্যা করে।

যে ভাবে দুবাই বসেই ফাইনাল ছক করে মুসা

গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যানুসারে, টিপুকে দুবাই বসে হত্যার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেন সুমন শিকদার ওরফে মুসা। টিপু হত্যাকাণ্ডের ঠিক ১২ দিন আগে দুবাই চলে যায় মুসা। দুবাই বসে হত্যার পুরো ছক কষে। টিপুকে হত্যায় চুক্তি হয় ১৫ লাখ টাকা। এই ১৫ লাখ টাকা কে কত দেবে তাও ভাগ করে দেয় মুসা। নয় লাখ টাকা দেয় ওমর ফারুক। অবশিষ্ট ছয় লাখ টাকা দেয় গ্রেপ্তার নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ ও মুসা।

খন্দকার আল মঈন জানান, দুবাই যাওয়ার আগে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে যায় মুসা, হুন্ডির মাধ্যমে আরও চার লাখ টাকা মুসাকে দেওয়া হয়। বাকি ছয় লাখ টাকা দেশে হস্তান্তর করার চুক্তি হয়। ছয় লাখের মধ্যে গ্রেপ্তারের সময় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা জব্দ করে র‌্যাব। দুবাই থাকা মুসা ২০১৬ সালে রিজভী হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের চার্জশিটভুক্ত ৩ নম্বর আসামি।

দেশে হত্যাকাণ্ড হলেও নিয়ন্ত্রণ হয় বাইরে থেকে

গ্রেপ্তারদের বারাত দিয়ে র‍্যাব কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, এ হত্যাকাণ্ডটি দেশে ঘটলেও নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই থেকে। দেশে থাকা নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশসহ আরও কয়েকজন জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে বেশ কয়েকদিন ধরে মুসার কাছে তথ্য প্রেরণ করত। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর গ্রেপ্তার নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির আনুমানিক চারবার জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসাকে অবহিত করে। পরে জাহিদুল ইসলাম টিপু গ্রান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় গ্রেপ্তার মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ তাকে নজরদারিতে রাখে এবং তার অবস্থান সম্পর্কে ফ্রিডম মানিককে অবহিত করে। টিপুর অবস্থান সম্পর্কে জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের তত্ত্বাবধানে কিলার কর্তৃক হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়।

টিপু হত্যার পর চরম আতঙ্কে মতিঝিল সিন্ডিকেট
এদিকে টিপু হত্যাকান্ডের পর স্থানীয় নেতারা চরমভাবে আতঙ্ককিত। তারা বলছে, হত্যাকান্ডের মূল বিষয় হলো আধিপত্য আর চাঁদাবাজি। সন্ত্রাসীরা এতটাই বেপরোয়া চাঁদা না দিলেই গুলি করে দেবে। নেতারা বলছেন, পরিস্থিতি এখন উত্তপ্ত। কিছুদিন পর হয়তো ঠিক হবে। কিন্তু এখন চলাফেরা করাই দায় হয়ে পড়েছে।

টিপু হত্যায় মতিঝিল রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের একটি বিশ্বস্ত তথ্য বলছে, জীবনের থেকে টাকা বড় নয়। পরিস্থিতি হয়তো এক সময় স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সবাই নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। মতিঝিল সিন্ডিকেটের দাবি, সবাই যদি মিলেমিশে না চলে তাহলে এমন নির্মম ভাবে আরও অনেককেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হবে।

হঠাৎ সারা দেশের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হচ্ছে কেন এর সমাধান কি এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, মানুষ যতদিন লোভ লালসা থেকে বের হয়ে না আসতে পারবে ততদিন এমন মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটতে থাকবে। বর্তমানে মানুষের প্রতি মানুষের মায়া-মমতা নাই এজন্য আরো বেশী অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে।

রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা সততার সাথে বিগত দিনের রাজনীতি করেছেন তারা কিন্তু কেউ এ ধরনের নির্মম খুনের শিকার হননি। যারাই সন্ত্রাসের রাজত্ব করেছে সাংগঠনিকভাবে সন্ত্রাসীদের নেতৃত্ব দিয়েছে তারাই এমন হত্যাকাণ্ডের সম্মুখীন হয়েছে।

মানুষ সততার সাথে রাজনীতি এবং ব্যবসা বাণিজ্য করলে হয়তো এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা কমে আসবে বলে মনে করেন এই অপরাধ বিশেষজ্ঞ।

কেএম/এএস

Header Ad
Header Ad

আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা কী করলাম বা করলাম না- ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেটি দিয়ে আমাদের বিচার করবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ড. ইউনূস বলেন, দেশের রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে এবং এর ভিত্তিতেই সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। তিনি আরও বলেন, "এটি জাতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। আমি জাতির পক্ষ থেকে কমিশনের দুই চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্যকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।"

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "এই দুটি প্রতিবেদন দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে। আপনি দরিদ্র, মধ্যবিত্ত বা ধনী যেই হোন না কেন, এই সংস্কারের প্রভাব থেকে কেউই বাদ যাবেন না।"

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, "কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নাগরিকরা তাদের প্রকৃত অধিকার ফিরে পাবেন। আমরা যেন সত্যিকারের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাই, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।"

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, "যাতে সবাই মনে করতে পারে, এখানে প্রকৃত সত্য বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীদের বাস্তব চিত্র উঠে এসেছে। আমাদের তো পণ্ডিত হতে হবে না এটি বোঝার জন্য, কারণ প্রতিদিনই আমরা নানা অবিচারের শিকার হই।"

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, "সংস্কার কমিশনের কাজ শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বিশ্বের দরবারে এটি তুলে ধরতে হলে এর ইংরেজি অনুবাদ করা প্রয়োজন।"

কমিশনের সদস্যদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, "আপনাদের প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও গবেষণার সংমিশ্রণে এই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় দলিল হয়ে থাকবে।"

তিনি আরও বলেন, "আমরা কী করলাম বা করলাম না, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের সেই কাজের জন্যই বিচার করবে। তারা প্রশ্ন করতে পারে, আপনারা তো পেয়েছিলেন, তাহলে বাস্তবায়ন করেননি কেন? কারণ, সবকিছু তো বইয়ের পাতায় লেখা আছে। এই কাজ জাতির জন্য এক মূল্যবান স্মারক হয়ে থাকবে।"

Header Ad
Header Ad

হাসিনার বিচারের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান

সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। বিএনপি নেতাকর্মীসহ অসংখ্য মানুষকে গুম ও খুন করে স্বৈরাচার ভারতে পালিয়ে গেছে। যে কোন মূল্যে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের বিচার করতে হবে। এই প্রশ্ন গণতান্ত্রিক সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে 'আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় জুলাই আগস্ট বিপ্লবে নিহত ৪৫ শহীদ পরিবারকে আর্থিক অনুদান এবং ‌র‌্যাবের গুলিতে নিহত যুবদল নেতা মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে ঘর উপহার উপলক্ষ্যে সোনাগাজী সরকারি ছাবের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

তারেক রহমান আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের কথা বলে যে সময়ক্ষেপণ করছে এবং সংস্কার কাজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর করছে, তা কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ কি-না সে ব্যাপরে সবাই সজাগ থাকতে হবে।

এ সময় তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার বিগত ১৭ বছর মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল । সে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে লড়াই করে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ, বিগত ১৭ বছরের লড়াই এবং ২৪এর জুলাই আগস্টের বিপ্লবের চেতনায় আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে সবাইকে সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। এখন দেশে যে সংস্কারের আলোচনা চলছে সেই সংস্কার প্রস্তাব বিগত আড়াই বছর পূ্র্বে আমরাই দিয়েছিলাম। স্বৈরাচার আমাদের সংস্কার প্রস্তাব আমলে নেয়নি। আর সেই বিশ্বাস থেকেই আমরা জাতির সামনে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি। কারণ বিএনপি দেশ ও জনগণ নিয়ে ভাবে। দেশের কল্যাণে কাজ করতে চায়।

দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে এবং শহীদদের স্বপ্নের দেশ বিনির্মাণ হবে।

বিএনপি দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে প্রস্তুত উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি সব সময়ই দেশ ও জনগণের কল্যাণ নিয়ে ভাবে। এর বড় কারণ হলো- দেশের জনগণ বিএনপির উপর আস্থা রাখতে চায়। কীভাবে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজে আসবে নেতাকর্মীদের সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

আমরা বিএনপি পরিবার কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও ফেনী পৌর বিএনপি'র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া ও আমরা বিএনপি পরিবার কেন্দ্রীয় কমটির সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুনের যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভেকেট রুহুল কবির রেজভী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক,জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ হারুন, সহ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ, অ্যাডভোকেট শাহানা আক্তার শানু, আবদুল লতিফ জনি, জালাল আহমদ মজুমদার, মামুনুর রশিদ মামুন, মশিউর রহমান বিপ্লব, ফেনী জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন খান, জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার, যুগ্ম আহবায়ক গাজী হাবিব উল্লাহ মানিক, সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, সোনাগাজী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জামাল উদ্দিন সেন্টু, সদস্য সচিব সৈয়দ আলম ভূঞা, শহীদ ছাত্রদল নেতা কাওছার উদ্দিনের পিতা ফিরোজ আলম, শহীদ মেহাম্মদ মাসুদের কন্যা মুনতাহা বিনতে মাসুদ ও শহীদ জাফর আহমদের কন্যা জাহানারা বেগম প্রমুখ।

এসময় ২০১৬ সালের ২৫ জুন র‌্যাবের গুলিতে নিহত মোহাম্মদ মাসুদের পরিবারকে ঘর এবং ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন চলাকালে নিহত ৪৫ শহীদ পরিবারসহ আহতদের প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাঝে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।

Header Ad
Header Ad

মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কোপালেন আ'লীগের কর্মিরা

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

নওগাঁর বদলগাছীতে মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়েছে স্থানীয় আ'লীগের কর্মিরা। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধায় উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের কটকবাড়ি এলাকায় তাকে কুপিয়ে আহত করা হয়। আহত অবস্থায় তাঁকে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত সিহাব নওগাঁ নামাজগড় গাউসুল আজম কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য ও একই এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বদলগাছী সদর এলাকার রাসেল ও সাথী নামে দুই যুবক-যুবতী গতকাল বিকালে নওগাঁ থেকে মার্কেট করে ফেরার পথে কটকবাড়ী এলাকায় মোটরসাইকেল থামিয়ে নদীর ধারে ঘোরাঘুরি করছিল। সন্দেহ হলে ঐ এলাকার আওয়ামী লীগের কর্মি প্লাবন,অনিক,আশিক, রাকিব,ইয়াজুলসহ ১০-১৫ জন কর্মি তাদের আটক করে মারধর করে। পরে তাদের নদীর ধারে নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে দশ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবি করে। বিষয়টি জানাজানি হলে ছাত্রদল কর্মী সিহাব সহ গ্রামবাসি ঐ ছেলে মেয়েকে উদ্ধার করে থানায় খবর দেয়। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামী লীগের কর্মি কয়েকজন অতর্কিতভাবে তাঁর ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে ধারালো কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে সিহাব কে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্বজনেরা সেখানে গিয়ে সিহাব কে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন।

বদলগাছি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাহিদ রানা ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতা কর্মি। মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় তার ওপরে হামলা করেছে।’

বদলগাছী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সুমন হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘দলের দুঃসময়ের কর্মী সিহাব। ন্যাক্কারজনক এ হামলার ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।’

তবে অভিযোগ ওঠা যুবকদের সাথে যোগাযোগ করা না গেলেও তাদের মধ্যে রিয়াজুল নামের এক অভিভাবক দায়সারা জবাব দেন। তিনি বলেন, ওই দুই যুবক-যুবতী অনৈতিক কার্যকলাপ করার জন্য এসেছিল। তাদের সন্দেহ হলে এলাকার ছেলেরা ধরে বিচার করতে চেয়েছিল। সিহাব এখানে এসে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে একটু হাতাহাতি হয়েছে বলে শুনেছি।

এ প্রসঙ্গে বুধবার (৫ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজাহান আলী ঢাকাপ্রকাশকে বলেন , ‘ছাত্রদল কর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এখনো অভিযোগ হাতে আসেনি। তবে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

আমরা কী করলাম, সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিচার করবে : প্রধান উপদেষ্টা
হাসিনার বিচারের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক রহমান
মুক্তিপনের প্রতিবাদ করায় ছাত্রদল নেতাকে কুড়াল দিয়ে কোপালেন আ'লীগের কর্মিরা
খুব দ্রুতই জবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হবে: ছাত্রদল সভাপতি
বগুড়ায় ৫০ টাকা অফারে টি-শার্ট কিনতে গিয়ে হুলস্থুল কান্ড, নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী
নওগাঁ সীমান্তে বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
মোহাম্মদপুরে বিড়াল হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা, তদন্তের নির্দেশ
চুয়াডাঙ্গায় সার কাণ্ডে বিএনপি ও যুবদলের ৫ নেতা বহিষ্কার
আজ বন্ধুর সাথে গোসল করার দিন
২ আলাদা বিভাগসহ দেশকে ৪ প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ সবাই খালাস
হাসিনার লাইভ প্রচারের আগেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ উধাও
হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা
বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর
গাজীপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সবজিবাহী পিকআপ খাদে, চালকসহ নিহত ৩
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে জনগনের মতামত চাইলো হাসনাত  
এই ফটো তোলোস কেন? আদালত চত্বরে শাহজাহান ওমর  
মনে হচ্ছে বিবিসি বাংলা গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার ভক্ত : প্রেস সচিব  
পটুয়াখালীতে বাংলাভিশনের সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম  
উত্তরবঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল বিক্রি বন্ধ