সমরাস্ত্র কেনা নিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ
সমরাস্ত্র কেনা নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। দাম বেশি হলেও ভালো মানের সমরাস্ত্র বিক্রি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাদের সমরাস্ত্র কিনতে গেলে অনেক শর্ত মেনে চলতে হয়। এ ছাড়া জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্টে (জিসোমিয়া) সই করতে হয়। আবার তুলনামূলক সস্তায় রাশিয়া থেকেও ভালো সমারস্ত্র কেনা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা থেকে যায়।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি আইন আছে, ক্যাটসা। কাট্যাসর ফুল অর্থ হলো— কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাডভারসারিস থ্রু স্যাঙ্কশনস অ্যাক্ট। এটি এমন একটি আইন যেটি দিয়ে সেই সব দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ ইরান, উত্তর কোরিয়া, চীন বা রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনে। এর ফলে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশের অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।
ফলে উল্লিখিত দেশগুলো থেকে অস্ত্র কিনলে ক্যাটসার অধীনে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার একটি আশঙ্কা থেকেই যায়। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আগামীকাল বুধবার (৬ এপ্রিল)। পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের এই সংলাপ হচ্ছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহেই।
এ প্রসঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, আসলে অস্ত্র বিক্রি করলেও টেকনোলজি ট্রান্সফার করা যাবে না এমন শর্ত দেয় বিক্রেতা দেশগুলো। সব বিক্রেতা দেশই এমন শর্ত দেয়। যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে বেশি কড়াকড়ি করে।
এক প্রশ্নের জবাবে হুমায়ুন কবির বলেন, অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে ডাইভারসিফিকেশন দরকার। শুধু চীনের মতো একটি দেশ থেকে অস্ত্র কিনলে সমস্যা। ইউরোপের দেশগুলো শুধু রাশিয়া থেকে গ্যাস কেনায় ইউরোপের দেশগুলো এখন কি সংকটে পড়েছে আমরা দেখছি। তাই একটি দেশ থেকে অস্ত্র কিনলে যদি কোনো কারণে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না থাকে তাহলে সমস্যা তৈরি হয়।
অন্য দেশ থেকে অস্ত্র কিনলে ক্যাটসার অধীনে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা প্রসঙ্গে সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, সেই আশঙ্কা তো থাকেই। তবে সেটি তো অন্য দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নিষেধাজ্ঞা অন্য অস্ত্র বিক্রেতা দেশও দিতে পারে। কাজেই এগুলো কোনো বিষয় নয়। এগুলো ব্যালান্স করে আমাদের একটি দেশ নয়, অনেকগুলো দেশ থেকে অস্ত্র কেনা উচিত।
ঢাকা-ওয়াশিংটন নিরাপত্তা সংলাপ
বুধবার (৬ এপ্রিল) দিনভর আলোচনা হবে দুদেশের মধ্যে। নিরাপত্তা সহযোগিতা, সন্ত্রাস দমন, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও শান্তিরক্ষা-মোট চারটি বড় সেশনে আলোচনা হবে।
সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি আন্ডার সেক্রেটারি বনি ডেনিস জেনকিনস।
জানা যায়, এর আগেও এ ধরনের সাতটি বৈঠক হয়েছিল দুদেশের মধ্যে। তবে আগের বৈঠকগুলো হতো মহাপরিচালক পর্যায়ে। কিন্তু এবারই প্রথম পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক হচ্ছে এবং তাও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে।
আলোচনায় গুরুত্ব পাবে ক্যাটসা, ফোর্সেস গোল-২০৩০, সমুদ্র নিরাপত্তা ও জিসোমিয়া চুক্তি। এছাড়া রোহিঙ্গা, কোভিড সহযোগিতা ও উগ্রবাদ মোকাবিলার মতো বিষয়গুলোও থাকছে আলোচনায়। বিভিন্ন মহড়া, প্রশিক্ষণ, কোস্টগার্ডের সহযোগিতা, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা হবে।
গত মার্চের ২০ তারিখে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ঢাকা সফরকালে জিসোমিয়া চুক্তির খসড়া হস্তান্তর করেছেন বাংলাদেশের কাছে। এখন খসড়াটি যাচাই-বাছাই করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্য কর্তৃপক্ষগুলো।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন রবিবার (৩ এপ্রিল) ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে খসড়ার বিষয়ে বলেন, এটি একটি লম্বা প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের সম্পৃক্ত কর্তৃপক্ষগুলো যাচাই-বাছাই করছে।
আরইউ/আরএ/