দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মাংস পেলেন না সালাউদ্দিন
‘বাসায় বলে এসেছি গরুর মাংস নিয়ে যাব। গরুর মাংস রান্না হবে। কিন্তু দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মাংস পাইনি। এখন বাসায় গিয়ে কি বলব।’
এভাবেই আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরে সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি দুপুরে রাজধানীর আব্দুল গনি সড়কে ভ্রাম্যমান দোকান থেকে সুলভ মূল্যে গরুর মাংস কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছার আগেই শেষ। তার আর মাংস কেনা হয়নি।
তিনি বলেন, ‘দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে শুধু দুধ আর ডিম কিনতে পারলাম। মাংসের দেখা পেলাম না।’
শুধু সালাহউদ্দিন নয়, আরও অনেকেই এভাবে খালি হাতে ফিরে গেছেন মাংস না পেয়ে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সুলভ মূল্যে বিক্রি হওয়া পণ্য নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে। চাহিদার তুলনায় পণ্য কম হওয়ায় ক্রেতারা খালি হাতে ফিরছেন পণ্যবাহী গাড়ির কাছ থেকে। যে পরিমাণ পণ্য নিয়ে আসা হচ্ছে সেগুলো এক ঘণ্টার ব্যবধানে শেষ হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে কোনো কোনো ব্যক্তি বেশি পরিমাণে পণ্য কিনে নিচ্ছেন। যার ফলে লাইনে দাঁড়ালেও সেই পণ্য পাচ্ছেন না বেশিরভাগ মানুষ।
পণ্য বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা পর্যাপ্ত পণ্য নিয়ে আসছেন। কিন্তু ক্রেতা বেশি হওয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানী ঢাকার ১০টি স্পটে বিক্রি করা হচ্ছে গরু, খাসি ও মুরগির মাংস, দুধ ও ডিম। প্রথম রমজান থেকে শুরু হওয়া ভ্রাম্যমাণ এই বিক্রয় কার্যক্রম চলবে ২৮ রমজান পর্যন্ত।
মঙ্গলবার (৫ প্রপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর আব্দুল গনি রোড ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন এর সামনে গিয়ে দেখা যায় মাংস, দুধ, ডিম বাহি গাড়িটি ঘিরে মানুষের জটলা। কিন্তু গাড়িতে কোনো পণ্য নেই। এ নিয়েই মানুষের ক্ষোভ।
অনেকে মতিঝিল আরামবাগ এলাকা থেকে গরুর মাংস কিনতে আব্দুল গনি রোডে এসেছিলেন। কিন্তু মাংস না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে।
রফিকুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘এখানে যে সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে তাতে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। মহিলারা ২০ জন পেলে পুরুষ একজন কিনতে পারছেন। আধ ঘণ্টা হলো এসেছি কিছুই পাইনি। সব পণ্য শেষ হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘একটা সিস্টেমের মধ্যে বিক্রি করলে খুবই ভালো হয়। তাহলে সবাই কিনতে পারবে। নয় তো একজন পাবে ৫ কেজি, আরেকজন খালি হাতে ফিরে যাবে।’
ভ্রাম্যমান গাড়িতে বিতরণ কাজে নিয়োজিত খন্দকার বাবুল বলছিলেন, চাহিদার তুলনায় পণ্য কম। ফলে লোকজনকে পর্যাপ্ত পণ্য দেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি জানান, মঙ্গলবার তার গাড়িতে ১০০ কেজি গরুর মাংস, খাসির মাংস পাঁচ কেজি, ৩০ কেজি মুরগি, ৯০০ ডিম এবং ২০০ লিটার দুধ ছিল। এই পণ্য নিয়ে তিনি বেলা ১১ টার দিকে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন এর সামনে আসেন। এরপর দুপুর বারোটার মধ্যে সব কিছু বিক্রি হয়ে যায়।
বাবুল জানান, মানুষের অনেক চাহিদা আছে কিন্তু আমরাতো যে পরিমাণ পণ্য পাই সেগুলি নিয়ে আসি। আমাদেরকে যেগুলো দেওয়া হয় তার বেশি তো নিয়ে আসতে পারিনা। পণ্য বাড়ালে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মচারী মনিরুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, প্রচণ্ড রোদের মধ্যে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। কিছুই কিনতে পারিনি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এখানে ডিসট্রিবিউশন সুন্দরভাবে হচ্ছে না। মহিলারা বেশি সুবিধা পাচ্ছেন। একেকজন ৫-৭ কেজি করে পণ্য নিয়ে যাচ্ছে।’
অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ বাবুল খন্দকার। তিনি বলছিলেন, ‘যারা পণ্য পায়নি তারা অভিযোগ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়নি। আমরা সবাইকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। পর্যাপ্ত পণ্য থাকলে এই সঙ্কট তৈরি হবে না।’
সরেজমিন দেখা গেছে, রমজান উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চালু হওয়া ভ্রাম্যমান মাংস, দুধ ও ডিম বিক্রির কার্যক্রম সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পণ্য সরবরাহ না থাকায় মানুষের মধ্যে এজন্য কাড়াকাড়ি শুরু হয়। মাংস, দুধ ও ডিম কিনতে আসা সাধারণ মানুষ বলেছেন ভ্রাম্যমাণ গাড়িগুলোতে পর্যাপ্ত পণ্য দিলে কোথাও কোনো সংকট তৈরি হবে না। বরং মানুষ বেশি করে কেনার সুযোগ পাবে।’
এনএইচবি/এমএমএ/