ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে আছে মেট্রোরেলের নর্দার্ন রুট
ভুমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে আছে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পভুক্ত মেট্রোরেল লাইন-৫ নর্দার্ন রুটের কাজ। ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের মনিটরিং ট্রাস্ক ফোর্সের ১৬তম সভায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
সভায় বলা হয়েছে, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) আওতায় বাস্তবায়নাধীন চারটি ফাস্ট প্রকল্প ফাস্ট ট্র্যাকের অন্তর্ভুক্ত। এরমধ্যে একটি হচ্ছে এমআরটি লাইন-৫ নর্দার্ন রুট।
সভা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পভুক্ত এমআরটি লাইন-৫ নর্দার্ন রুটের সর্বশেষ অবস্থা বর্ণনা করে বলা হয়েছে, সাভারের বিলামালিয়া ও কোন্ডা মৌজায় প্রথম পর্যায়ে ৪০ দশমিক ১৮২২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে। এটিই হচ্ছে এখন এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সাভারের বিলামালিয়া ও কোন্ডা মৌজায় প্রথম পর্যায়ে ভূমি অধিগ্রহণের যে প্রস্তাব গিয়েছিল সেটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। ফলে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয়নি।
অবশ্য ওই সভার আর প্রায় এক সপ্তাহ পর গত ২৪ মার্চ এমআরটি লাইন-৫ নর্দার্ন রুটের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত অনুমোদন দিলেও এখনো অনেক কাজ বাকি। আগামী জুনের মধ্যে এসব কাজ সম্পন্ন করা বেশ কঠিন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, প্রকল্পটির ভূমি অধিগগ্রহণ করতে না পারলে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা ফেরত যাবে। আগামী জুনের মধ্যে এই অর্থ খরচ করে ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। গত ফেব্রুয়ারি মাসেই অর্থ মন্ত্রণালয় ভূমি অধিগ্রহণের জন্য এই অর্থ বরাদ্দ করেছিল।
রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত এবং নগরবাসীর যাতায়াত সহজ করে একটি গতিশীল নগর গড়ে তুলতে সরকার রাজধানীতে ছয়টি মেট্রোরেলের সমন্বয়ে ১২৯ দশমিক ৯০১ কিলোমটিার দীর্ঘ শক্তিশালী একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলার উদ্যোগ নেয়। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে এই যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলার কথা। মেট্রোরেলের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
এমআরটি লাইন-৫ নর্দার্ন রুট হবে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটেরা পর্যন্ত এই লাইনের ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমটিার থাকবে সাবওয়ে বা মাটির নিচে। এলিভেটেড হবে ৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। এই রুটে স্টেশন থাকবে মোট ১৪টি। যারমধ্যে নয়টি থাকবে সাবওয়ে বা পাতালে এবং পাঁচটি থাকবে উপরে অর্থাৎ উড়াল সড়কে।
নর্দার্ন রুটের স্টেশনগুলো হচ্ছে-হেমায়েতপুর, বালিয়ারপুর, বালিয়ামালিয়া, আমিনবাজার, গাবতলী, দারুসসালাম, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান-২, নতুন বাজার ও ভাটেরা। এটি হবে রাজধানী ঢাকার প্রথম পূর্ব-পশ্চিম মেট্রোরেল (এমআরটি) লাইন।
ডিএমটিসিএল এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সম্ভাব্যতা যাচাই ও মূল নকশা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এখন বিভিন্ন সার্ভে, পূর্ণাঙ্গ নকশা এবং ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে পূর্ণাঙ্গ নকশার কাজ ৩৮ শতাংশ শেষ হয়েছে।
ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ২০২১ সালের আগস্ট মাসে সাভারের বিলামালিয়া ও কোন্ডা মৌজায় প্রথম পর্যায়ে ৪০ দশমিক ১৮২২ শতাংশ ভূমির উপর যৌথ তদন্ত শেষ হয়েছে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে আর কোন অগ্রগতি হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক সোমবার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন,প্রধানমন্ত্রী ২৪ মার্চ ভূমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন। রাজধানী এবং আশপাশের এলাকার ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগে। এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়ার পর এখন আমরা কাজ শুরু করেছি।
তিনি বলেন আমরা বসতি জমির মূল্য, ছোটখাটো যে সব স্থাপনা রয়েছে সেগুলোর এবং গাছপালার হিসাব করছি। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সাব রেজিস্ট্রি অফিস গণপূর্ত অধিদপ্তর, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বন বিভাগের সঙ্গে আমাদের মেট্রোরেল প্রকল্পের লোকজন একসঙ্গে কাজ করছেন।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন আমরা আশা করছি দ্রুততার সঙ্গে জমি, স্থাপনা এবং গাছপালার মূল্য নির্ধারণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ সম্পন্ন করতে পারব। তিনি বলেন আশা করছি জুনের মধ্যেই এই কাজ করা যাবে।
এনএইচবি/এমএমএ/