ঢাকা-ওয়াশিংটন বৈঠক
গুরুত্ব পাবে নিষেধাজ্ঞা, কোয়াড-আইপিএস, রোহিঙ্গা ও খুনি রাশেদকে ফেরানো
ঢাকা-ওয়াশিংটন বৈঠকে গুরুত্ব পাবে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, কোয়াড-আইপিএস, রোহিঙ্গা ইস্যু ও বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদকে ফেরানোর মতো বিষয়গুলো। এর বাইরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
আজ শনিবার (২ এপ্রিল) রাতে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন। আগামী ৪ এপ্রিল ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন ড. মোমেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি। গত ২০ মার্চ ঢাকায় মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেছে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। বৈঠকে র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ।
তবে বাংলাদেশ উদ্বেগ প্রকাশ করলেও খুব শিগগিরই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে না বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেছেন, মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। যদিও গত তিন মাসের বিচার বাহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে ঘটেনি বলেও জানিয়েছেন তিনি। মার্কিন প্রশাসন বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছে বলেও জানান ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের সফরকালে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আশ্বাস না পাওয়ায় বাংলাদেশ একরকম হতাশ। এখন ৪ এপ্রিলের বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে কথা হবে ড. মোমেনের।
এ ব্যপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সম্প্রতি কয়েকজন সাংবাদিককে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বলেন, মির্জা ফখরুলসহ অনেকেই বলছেন আরও অনেকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে। আদতে এমন কিছু নয়। তারা বলেছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। কিন্তু ইইউ বিবৃতি দিয়ে বলেছে, এটি তাদের একজন সদস্যের ব্যক্তিগত মত। ইইউয়ের সঙ্গে এই বক্তব্যের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও নিষেধাজ্ঞার তেমন কোনো প্রভাব নেই।
র্যাবকে বাংলাদেশের গর্বের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাদেরকে প্রটেক্ট করা, তাদের কর্মকর্তাদের প্রটেক্ট করা আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। সেই জায়গা থেকে আমরা বিষয়গুলো দেখছি। এর বেশি কিছু এখনই বলা সম্ভব না।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত আতিকুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, আমাার মনে হচ্ছে বৈঠকে র্যাবের ইস্যু ওঠাবে বাংলাদেশ। কারণ এটা বাংলাদেশের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে আছে।
মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারির ঢাকা সফরের সময় তেমন কোনো আশ্বাস না পাওয়া আতিকুর রহমান বলেন, এখানে কিছু টেকনিক্যাল বিষয় আছে যুক্তরাষ্ট্রের। সেটা আমরা কেউ জানি না। হিউম্যান রাইটস দিয়ে ওরা অনেক কিছু বিচার করে পৃথিবীর। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যপার। তবে আমাদের যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আছে সেই দিক বিবেচনা করে এটি তাদের মাথায় রাখা উচিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে আলাপ আলোচনা করা উচিত ছিল। যেহেতু দুদেশের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক আছে।
কোয়াড-আইপিএস
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট কোয়াডে যোগদানের বিষয়ে চাপ রয়েছে বাংলাদেশের ওপরে। কোয়াডে এখন পর্যন্ত যোগ দেওয়া বাকি তিনটি দেশ হলো ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া।
গত বছরে কোয়াডে যোগদান নিয়ে চীন সরাসরিই হুমকি দিয়েছিল বাংলাদেশকে। কোয়াডে যোগ দিলে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে বলে তখন চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং হুমকি দিয়েছিলেন। সেই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, চীন আমাদের সঙ্গে আলোচনা করলেও পারত। এভাবে হুমকি না দিয়ে। তখন কোয়াডে যোগদানের বিষয়টিও অস্বীকার করেছিলেন ড. মোমেন।
একই অবস্থা ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি বা আইপিএস নিয়েও বলা যায়। এক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে থাকার চাপ রয়েছে বাংলাদেশের ওপরে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের ঢাকা সফরের সময়ও বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। হুমকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার কথা বলেছিলেন ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড।
এ প্রসঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলছেন, কোয়াড-আইপিএস নিয়ে বাংলাদেশ বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্ত নেবেই প্রত্যাশা করে চীন।
রোহিঙ্গা ইস্যু
বৈঠকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো রোহিঙ্গা ইস্যু। বাংলাদেশে প্রায় ১৪ লাখ মিয়ানমারের নাগরিক রয়েছে যাদের দেশটি ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করছে। নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছে দেশটি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অতীতেও অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রেরও সহযোগিতা চেয়েছে।
এক পর্যায়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন হতাশ হয়েই বলেছিলেন, বড় বড় দেশগুলো মিয়ানমারকে চাপে না রেখে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াচ্ছে। তিনি বাণিজ্য বৃদ্ধির একটি উপাত্তও সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেছিলেন।
যদিও মিয়ানমারের সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কানাডা খুন হওয়ার রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছে।
খুনি রাশেদকে ফেরানো
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক পাঁচ খুনির একজন রাশেদ চৌধুরী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ বিভিন্ন সময় রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানোর চেষ্টা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বহু দেনদরবার করেছে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আইনের দোহাই দিয়ে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের আইন মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী। তাই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দেওয়া যাবে না বলে বিভিন্ন সময় জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় সরকারের শীর্ষ কর্তারা হতাশ হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৪ এপ্রিলের বৈঠকে অন্যতম মূল এজেন্ডা হবে খুনি রাশেদকে ফিরিয়ে আনার বিষয় নিয়ে। আইনগত ফাঁকফোকর দিয়েও কোনোভাবে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানো যায় কীনা সেটা নিয়ে আলোচনা হবে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর।
আরইউ/