বুলবুলকে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে খুন, নাকি অন্য কিছু?
দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে মারা যাওয়া গরিবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত দন্ত চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনেররা। স্বজনদের দাবি, হয়তো তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পেলে সে বেঁচে যেত।
তবে, বুলবুলকে ছিনতায়য়ের উদ্দেশ্য খুন করা হয়েছে, নাকি অন্য কোনো কারণে? সব বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছে সচেতন মহল।
এর আগে শনিবার (২৬ মার্চ) রাজধানীর সবুজবাগের একটি বাসায় দুই শিশুসন্তানের মুখ বেঁধে রেখে তাদের মা মুক্তা আক্তারকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর আজ ভোরে আবার ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল ডা. বুলবুলের।
জানা যায়, বুলবুল দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। শুধু স্বাবলম্বীদের কাছ থেকে ফি নিতেন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ডা. বুলবুলের মগবাজারে রংপুর ডেন্টাল নামে একটি চেম্বার রয়েছে। সেখানে গরিব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়ে প্রশংসিত ছিলেন তিনি। তিনি দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। শুধু স্বাবলম্বীদের কাছ থেকে ফি নিতেন। এ কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার কথা ছিল।
রিকশাচালককে খুজছে পুলিশ
পুলিশি তথ্য মতে জানা গেছে, বুলবুলকে বহনকারী রিকশাচালককে পাওয়া যায়নি। তদন্তের জন্য তাকে ও খুজছে পুলিশ।
তদন্তকারী এক কর্মকর্তার তথ্য মতে জানা যায়, প্রথমে ছিনতায়ের কবলে পড়ে বুলবুল খুন হয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছে। পরে বেশ কিছু আলামতের তথ্য উপাত্ত বলছে, বুলবুলকে খুন করা হয়েছে। কেন তাকে খুন করার হয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন তারা।
রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় রবিবার (২৭ মার্চ) ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে খুন হন তিনি। এরপর এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করে থানা পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
যা বলছেন বুলবুলের স্ত্রী শাম্মী
বুলবুলের স্ত্রী শাম্মী আক্তার জানান, রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে নিজের ঠিকাদারি ব্যবসার কাজে নোয়াখালী যাওয়ার জন্য ভোরে ফজরের নামাজ শেষে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন বুলবুল।
শাম্মী আক্তার আরও বলেন, সকালে বড় মেয়েকে নিয়ে বাসার কাছেই মনিপুর স্কুলে যাবার সময় তার বাবা মো. ইয়াকুব এর ফোন 'মারে, বুলবুল নাই।' যেন আকাশ ভেঙে মাথার মাথার উপর পড়ল। রিকশা নিয়ে প্রতিবেশী এক নারীর সহযোগিতায় দুই সন্তানকে কোলে করে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে তারা সেখানে বুলবুলের লাশ দেখতে পান।
এ বিষয়ে শাম্মী আক্তার মিরপুর মডেল থানায় এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা করেছেন বলে জানা গেছে।
যা বলছে পুলিশ ও মামলার ততদন্তকারী সংস্থা পিবিআই
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এ ঘটনায় বুলবুলের সহকারী সৌরভকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার আ স ম মাহতাব উদ্দিন বলেন, বুলবুল নামের এক ব্যক্তি ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে মারা গেছেন। তার পায়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়েটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানতে চাইলে পিবিআই এর এডিশনাল এএসপি মিয়া কুতুবুর রহমান চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি একটি ঠিকাদারি কাজের জন্য বুলবুল রাজধানীর শেওড়াপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন এলাকা থেকে ভোরে নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশে বের হন।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যা কি না তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো যাবে। হামলার পর তার কাছ থেকে টাকা-পয়সা কিছুই নেয়নি হামলাকারীরা।
মিয়া কুতুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, বুলবুলের বিষয়ে জানার জন্য আমরা তার সহকারী সৌরভকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তবে, এ ঘটনায় আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি সেগুলো নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে আপাতত তেমন কিছু বলা যাচ্ছে না।
অধিক রক্তক্ষরণে চিকিৎসা দেওয়ার আগেই মারা যান বুলবুল
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, বুলবুলের উরুতে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তিনি মারা গেছেন।
এ বিষয়ে মিরপুর আল-হেলাল হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবু শামীম রবিবার রাতে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমি হাসপাতালের সমস্ত সিসি ক্যামেরা দেখেছি। তাতে দেখলাম আমাদের সমস্ত চিকিৎসক ও সিস্টার, ব্রাদাররা নিচে গিয়ে রোগীকে দেখেছেন। তাতে তারা দেখতে পান, রোগী প্রাথমিক চিকিৎসার অবস্থায় ছিলেন না। আগেই তিনি মারা গেছেন। অনেক ব্লিডিং হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, যেহেতু আইনি একটা বিষয় আছে। আমাদের কাছে নির্দেশনা আছে, এ ঘটনায় সরকারি হাসপাতালে পাঠানোর। সেটাই করা হয়েছে।
দুই থানার টানাহেচড়ায় বুলবুলের চিকিৎসায় দেরি
স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, কাফরুল না মিরপুর মডেল থানায় ঘটনাটি ঘটেছে এ নিয়ে দুই থানার টানাহেচড়ায় চিকিৎসা দিতে দেরি হয় বুলবুলের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে নিহতকে কাফরুল থানাধীন আল-হেলাল হসপিটালে নিয়ে আসা হয়। এরপর সেখানেই তাকে পুলিশের সহায়তায় চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি ঘটনাটি মিরপুর মডেল থানা এলাকার, এরপর মডেল থানা পুলিশকে জানালে নিহতকে সোহরাওয়ার্দী হসপিটালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
দুই থানার টানাটানিতে হাসপাতালে তাকে ঠিকমত চিকিৎসা দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ভিত্তিহীন কথা। থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে সোহরাওয়ার্দী হসপিটাল এ পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে রোববার সন্ধ্যায় মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, রোববার ভোর ৫টার পর শেওড়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় ওই চিকিৎসক রিকশায় ছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে রিকশাচালককে এখনও পাওয়া যায়নি। ছিনতাইকারী কতজন ছিল এটাও জানা যায়নি। আমাদের এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রথমে কাফরুল থানা আমাদের এ বিষয়টি জানায়।
ওসি বলেন, এ ঘটনায় ডা. আহমেদ মাহী বুলবুলের পরিবার থানায় মামলা করেছে। এটা কি ছিনতায়য়ের উদ্দেশ্য খুন, নাকি অন্য কোনো কারণ আছে সবকিছু মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। খুব দ্রুত আমরা মামলার রহস্য ও জড়িত যে বা যারা ছিল তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
/এএস