শ্রমিকদের অযৌক্তিক-অমানবিক দাবির কাছে জিম্মি হবিগঞ্জবাসী
হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অ্যাম্বুলেন্স পার্কিংসহ কয়েকটি অযৌক্তিক দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে হবিগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। রবিবার (১৯ মার্চ) থেকে এই অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে জেলা বাস মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন।
কিন্তু তাদের দেওয়া ৯ দফা দাবিকে অযৌক্তিক ও অমানবিক আখ্যা দিয়েছে হবিগঞ্জের সচেতন মহল। তাদের দাবি, শ্রমিক ইউনিয়ন নিজেদের পেশীশক্তি ব্যবহার করে হবিগঞ্জবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে।
অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট আহ্বানে ৯ দফা দাবিগুলো হলো-
১। হবিগঞ্জ হাসপাতাল প্রাঙ্গণেও আম্বুলেন্স পার্কিংয়ের ব্যবস্থা
২। পুলিশ দ্বারা অহেতুক আম্বুলেন্সচালকদের হয়রানি করা বন্ধ
৩। হাসপাতাল থেকে দালালচক্র উচ্ছেদ
৪। হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল পরিচালনা কমিটি ও হবিগঞ্জ জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে হবিগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত
৫। বদমেজাজি তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল ইসলাম সরকারকে প্রত্যাহার
৬। অবিলম্বে চালকদের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ডোপ টেস্ট চালু
৭। জেলা আনসার কমান্ডার অফিসের পশ্চিম দিকে রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের খালি জায়গায় মাইক্রোবাস পার্কিংয়ের জন্য স্ট্যান্ডের জায়গা নির্ধারণ
৮। জেলাব্যাপী বিভিন্ন রাস্তায় চলাচলরত অবৈধ গাড়ি চলাচল বন্ধ
৯। যাত্রীবাহী গাড়ি রিকুইজিশন বন্ধ
হবিগঞ্জ পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সজিব বলেন, ৯ দফা দাবি আদায়ে রবিবার সকাল থেকে হবিগঞ্জের ৯টি রুটে সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু হয়েছে। দাবি পূরণ না হলে কিংবা আলোচনা ভিত্তিতে কোনো সমাধান না করা হলে ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স রাখার কারণে চিকিৎসা কাজ ব্যাহত হচ্ছিল। কোনো কোনো অ্যাম্বুলেন্সচালক রোগীকে রেফার করার জন্য বিভিন্নভাবে চিকিৎসকদের চাপ সৃষ্টি করে। হাসপাতাল চত্বরে অসংখ্য অ্যাম্বুলেন্স থাকায় মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে স্বজনরা প্রবেশ করতে পারে না। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সকে হাসপাতাল আঙ্গিনায় পার্কিংয়ে নিষেধ করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা যাত্রী কল্যাণ পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরহাদ বলেন, হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতে আসা মুমূর্ষু রোগীদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স মালিক ও শ্রমিকদের আচরণ এক কথায় অমানবিক এবং বর্বরতার সমতুল্য। আন্তর্জাতিক রীতি-নীতি অনুযায়ী যুদ্ধকালীন সময়ে মরদেহ পরিবহনে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হলেও হবিগঞ্জের প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স মালিক সিন্ডিকেটের ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিন যাবৎ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা নানাবিধ হয়রানির শিকার হচ্ছে। এমনকি অন্য কোনো গাড়িতে হাসপাতালে রোগী বা লাশ আনা-নেওয়া করতেও বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, হবিগঞ্জে পরিবহন শ্রমিকরা যে আন্দোলন শুরু করেছেন তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অমানবিক। সাধারণ মানুষ এই আন্দোলনকে সমর্থন করছেন না। বিষয়টি নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের আরও মানবিক হওয়া দরকার।
হবিগঞ্জের বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক হুমায়ুন খান বলেন, অ্যাম্বুলেন্স এভাবে জরুরি সেবা বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা ঠিক হয়নি। জেলা সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে স্থান কম থাকায় রোগী নিয়ে চলাফেরা করা কঠিন। তাই অ্যাম্বুলেন্সকে হাসপাতালের বাইরে রাখার প্রশাসনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত।
হবিগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি পীযুষ চক্রবর্তী বলেন, শ্রমিক নেতারা হবিগঞ্জবাসীকে জিম্মি করে ঠিক কাজ করেনি। আমরা নাগরিকদের পক্ষ থেকে এর প্রতিকারে কর্মসূচি গ্রহণ করব।
এদিকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের মতে, অ্যাম্বুলেন্স শ্রমিকদের দাবি অযৌক্তিক ও অমানবিক। গত ৯ মার্চ হবিগঞ্জ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং উচ্ছেদ করার পর থেকে অ্যাম্বুলেন্সচালক ধর্মঘট পালন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সমগ্র জেলাব্যাপী পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে।
এসজি