নৌকাডুবিতে নিখোঁজদের উদ্ধারে প্রশাসনের অবহেলার অভিযোগ
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় গতকাল রবিবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের উদ্ধার কাজে অবহেলা আছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ ব্যাপারে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর কুমার রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাট, খানসামা, দিনাজপুর, বীরগঞ্জের করতোয়া নদী থেকে ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন ডুবুরি দল ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
অন্যদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, ডুবুরিদল ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সঠিক ভাবে কাজ করছে না। আজ যে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে তা স্থানীয় লোকজন করেছেন।
৬ নম্বর মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুনসুর আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গতকাল থেকেই প্রশাসন, ডুবুরি দল ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দায়িত্ব নিলে রাতেই সব লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হতো। তারা কোনো কাজ করছে না। লাশ উদ্ধারে পযাপ্ত ডুবুরি দল নেই। স্থানীয় লোকজন আছে বলেই আজ লাশগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
দুই মেয়ে, মা, বোন, হারা আলো রানী রায় বলেন, ‘আমিসহ পরিবারের ৮ জন পূজার্চনা করতে মাড়েয়ার আউলিয়ার ঘাটে যাই। নৌকাতে সবাই উঠি। মাঝ পথে গিয়ে নৌকাটি তলিয়ে যায়। এ সময় আমি আর আমার ছোট বোন সাঁতার কেটে ডাঙ্গায় উঠে দেখি মা, ছোট বোন, কাকিমা, আমার দুই শিশু কন্যা নেই। আজ সকালে মা, বোন ও কাকিমার লাশ উদ্ধার হলেও আমার আদরের দুই কন্যার খোঁজ এখনো মেলেনি। ডুবুরি দল ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যদি
সঠিকভাবে কাজ করত তাহলে আমার মেয়ে দু'টা উদ্ধার হতো।
গতকাল থেকে শাশুড়ী সনেতা বালার লাশের জন্য আউলিয়ার ঘাটে অপেক্ষা করছেন নিরঞ্জন রায়। তিনিও প্রশাসনকে দোষ দিয়ে বলেন, ডুবুরি দল ও ফায়ার সার্ভিসের লোক খুবই কম। ডুবুরি দল ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মী না বাড়ালে ১০ দিনও লাশ খুজে পাওয়া যাবে না। জানি না প্রশাসন কেন দায়িত্বের অবহেলা করছে।
উল্লেখ্য, রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বদেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার জন্য নৌকায় করে রওনা হন দেবীগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি সনাতন ধর্মালম্বী পরিবার। কিন্তু সেই উৎসবের ক্ষণে দেখা দিল বিষাদের ছায়া। ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত লোক উঠায় করতোয়া নদীতে নৌকাটি ডুবে যায়। এতে ৪০ জনের মৃত্যু ও অর্ধশতাধিক নিখোঁজ হয়। মৃত্যু ও নিখোঁজদের পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতল। তাদের আহাজারিতে আউলিয়া ঘাটের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
এদিকে নৌকাডুবি ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারগুলোকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানান পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক (ডিসি) জহুরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নদীতে বেশি পানি ও নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার কারণে এত বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আজও ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা উদ্ধারে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত আমরা ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়েছি। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছে।
এসআইএইচ