চট্টগ্রামে মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি যেন চলন্ত বোমা!
চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়কে চলাচলরত সহস্রাধিক মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজিচালিত অটোরিকশা যেন একেকটি চলন্ত বোমা। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এসব সিএনজিতে প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। না বুঝে এসব যানবাহনে যাতায়াত করছে সাধারণ যাত্রীরা। বিপাকে পড়েছেন চালক-মালিকরাও। অথচ এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই বিআরটিএ
কর্তৃপক্ষের।
এমন অভিযোগ চালক-মালিক ও যাত্রী সাধারণের। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৬ ডিসেম্বর বিআরটিএ চেয়ারম্যান ও সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব বরাবরে আবেদন করেছেন চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটো টেম্পু শ্রমিক লীগ।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন বলেন, ২০০৫ সিরিয়ালের ১ হাজার ১৭১টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা মোয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অন্তত ২ বছর আগে। এর মধ্যে ২০০১ সিরিয়ালের কিছু অটোরিকশাও রয়েছে। এসব গাড়ি স্ক্র্যাপ করে নতুনভাবে রিপ্লেস করার নিয়ম থাকলেও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছে। ফলে চালক-মালিকরা বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে সড়কে এসব গাড়ি সচল রেখেছে। এ সুবাধে পুলিশ প্রশাসন নানাভাবে হয়রানি করছে। সেই সঙ্গে এসব গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব সিএনজি এখন একেকটি চলন্ত বোমা। যাত্রীরা না বুঝে তুলনামূলক কম ভাড়ায় এসব গাড়িতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে। বিপুল অঙ্কের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকারও।
এ বিষয়ে সিএনজি মালিকদের ভাষ্য, দুই বছর আগে এসব সিএনজি অটোরিকশার মেয়াদ শেষে হলেও কাগজপত্র নবায়ন করছে না বিআরটিএ। যেকোনো সময় এসব গাড়ি স্ক্র্যাপ করা হতে পারে এই শঙ্কায় গাড়ি মেরামতও কাজ করা হচ্ছে না। তাই গাড়ি নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি।
এদিকে চালকদের ভাষ্য, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলেই ট্রাফিক পুলিশ নগদ টাকা আদায় করে। না হয় মামলা দেয়। মামলা ছাড়ানোর টাকাও দিতে চায় না মালিকরা। মালিকরা গাড়ি ভেঙ্গে ফেলবে বলে কাজও করে না। তাই রি-ফুয়েলিং করার সময় বা গাড়ি চালানোর সময় অনেক সময় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পেটের তাড়নায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে হয়।
সূত্র মতে, গত ২৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৮ টায় চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারি উপজেলার গোল চত্বরে সিএনজির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় চালক দ্বগ্ধ হলেও সিএনজিতে কোন যাত্রী ছিল না। এছাড়া একইদিন রাত সাড়ে ৮টায় জেলার কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ফোর স্টার সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশনে একটি সিএনজির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সিএনজি স্টেশনের অফিস রুম ও স্টেশনের টিনশেড উড়ে যায় এবং অফিসের গ্লাস ভেঙে যায়। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনা সুলতানা।
এর আগে গত ৯ জুলাই চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভার মনটানা ক্লাবের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশাার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৫ যাত্রী দ্বগ্ধ হন। তার আগে ২৬ মে দিবাগত রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রামের বন্দর থানার কলসীদিঘীর পাড় এলাকার সিএনজির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনজন দগ্ধ হন।
এ ব্যাপারে জানতে চট্টগ্রাম বিআরটিএ‘র চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদাররের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে বিআরটিএ চট্টগ্রামের বিভাগীয় উপপরিচালক শফিকুজ্জামান ভুঁইয়া ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ক্র্যাপ করে নতুন নাম্বার প্রদানের বিষয়ে সংখ্যাভিত্তিক একটি তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা আসলে আমরা সেই মতাবেক ব্যবস্থা নেব। আশা করছি, নতুন বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যে সেটা হয়ে যাবে।
এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজির নাম্বার রিপ্লেস করা জরুরি বলে মনে করেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, কারণ মেয়াদোত্তীর্ণ এসব সিএনজি এখন একেকটি চলন্ত বোমা। যেকোনো সময় বিস্ফোরিত হয়ে চালক ও যাত্রীদের প্রাণহানির ঘটাতে পারে। তাই এসব সিএনজি স্ক্র্যাপ করে নতুন সিএনজিতে নাম্বার সংযুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
চট্টগ্রাম বিআরটিএ'র তথ্যমতে, ২০০১ থেকে ২০০৫ মডেলের ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ক্র্যাপ করে নতুন গাড়িতে নাম্বার রিপ্লেস করার উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। সেই মোতাবেক এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৮২৯টি গাড়ি স্ক্র্যাপ করে নতুন নাম্বার দেওয়া হয়েছে। বাকি আছে ১ হাজার ৫টি গাড়ি।
এসআইএইচ/