শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ সবাই খালাস
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত
হাইকোর্টের রায়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জনসহ সকল আসামি খালাস পেয়েছেন। ১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এই রায় দেওয়া হয়।
আজ বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলাম ও বিচারপতি হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কায়সার কামাল ও মো. মাকসুদ উল্লাহ, আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান।
এর আগে, গত ৩০ জানুয়ারি মামলার ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিলের শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়।
২০১৯ সালের ৩ জুলাই পাবনার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক ও অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রুস্তম আলী এ মামলায় ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।
পরবর্তীতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয় এবং আসামিরা খালাস চেয়ে আপিল করেন। আজকের রায়ে সবাইকে খালাস দেওয়া হলো।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, "এই মামলায় আইনের চরম অপপ্রয়োগ হয়েছে। কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল একটি পক্ষপাতদুষ্ট রায়। মামলার তদন্তও ছিল দুর্বল, অবহেলাজনিত ও কাল্পনিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।"
তিনি আরও বলেন, "এই মামলায় দণ্ডিত ৪৭ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে দুজন মারা গেছেন। বাকি ৪৫ জনের মধ্যে ৯ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন, আর বাকিরা গত ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।"
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে হামলার শিকার হন। ট্রেন লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঈশ্বরদী জিআরপি থানার তৎকালীন ওসি নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। প্রথমদিকে বিএনপির ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।
পরের বছর তদন্তে কোনো সাক্ষী না পাওয়ায় পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, যা তৎকালীন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে গৃহীত হয়। তবে আদালত ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে পাঠান।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল পুলিশ বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ৫২ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগপত্র দাখিল করে। দীর্ঘদিন বিচারিক প্রক্রিয়া চলার পর অবশেষে আজ হাইকোর্টের রায়ে সকল আসামিকে খালাস দেওয়া হলো।