সাতক্ষীরায় মরুপ্রাণী দুম্বার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় প্রথমবারের মতো গড়ে উঠেছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিতে বেড়ে উঠা প্রাণী দুম্বার খামার। ছোট আকারের কৃত্রিম মরুভূমি তৈরি করে লালন-পালন করা হচ্ছে এসব দুম্বা। এলাকার আবহাওয়া দুম্বা পালনের অনুকূল হওয়ায় দেখা দিয়েছে নতুন বাণিজ্যিক সম্ভাবনা।
জানা যায়, ২০২১ সালে শখের বসে দুইটা দুম্বা কেনেন সাতক্ষীরা শহরের লস্করপাড়া এলাকার মৃত কাজী আব্দুল মোকিতের ছেলে আব্দুস সালাম খোকা। গরু ছাগলের মতোই লালনপালন ও বেশি লাভবান হওয়ার আশায় ওইসময় আরও দুইটা দুম্বা কিনে সাতক্ষীরা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে চুপড়িয়া গ্রামে ছোট্ট পরিসরে খামারটি গড়ে তোলেন। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ৫টি দুম্বা।
সাতক্ষীরার প্রথম এই দুম্বার খামার দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে খামারটিতে।
খামারী আব্দুস সালাম খোকা জানান, 'ছেলের পরামর্শে, গরু থেকে দুম্বা পালনে লাভবান হওয়ায় গতবছর ৪ লাখ টাকা দিয়ে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ২টি ও ঢাকার জয়দেবপুর থেকে তিনলাখ টাকা দিয়ে আরও ২টি দুম্বা কিনে এনেছিলাম। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক দুম্বা প্রতি ৬ মাস পর পর বাচ্চা দেয়। ইতিমধ্যে একটি দুম্বার বাচ্চাও জন্ম নিয়েছে। বাচ্চাটির বর্তমান মূল্য দেড় লক্ষ টাকা।'
তিনি বলেন, 'বর্তমানে তার খামারে ৫টি দুম্বা রয়েছে। খামারটি দেখভাল করার জন্য একজন শ্রমিকও রাখা হয়েছে। প্রতিটি দুম্বার পেছনে দৈনিক ৬০ টাকা খরচ হয়। ছাগল-ভেড়া সেসব খাবার খায় দুম্বাও সেগুলো খাচ্ছে। বাড়তি বা ভিন্ন ধরনের খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। খামারটি বড় পরিসরে করার ইচ্ছে আছে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।'
খামারটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা আশরাফ আলী বলেন, 'এদের সকাল ও বিকালে দুইবার খাবার দেওয়া হয়। নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করতে হয়। এরা খুব শান্ত প্রাণী। এদের শরীরে শক্তি অনেক। তবে রেগে গেলে সামলাতে কষ্টকর হয়ে যায়।'
কালিগঞ্জ থেকে খামার দেখতে আসা আরাফাত আলী বলেন, 'দুম্বা আগে কখনো সরাসরি এভাবে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। সাতক্ষীরার প্রথম একটি খামার গড়ে তুলছে দেখে খুব ভালো লাগছে। কারণ মরুভূমির দেশের প্রাণী সাতক্ষীরায় প্রথম দেখলাম।'
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ.বি.এম. আব্দুর রউফ জানান, 'দুম্বা মরুভূমির প্রাণী। তবে সাতক্ষীরা অঞ্চলের আবহাওয়ায় পশুটি পালনের জন্য বেশ উপযোগী। দুম্বা পালন করে আর্থিকভাবে প্রচুর লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে কুরবানীর সময় পশুটির চাহিদা ও প্রচুর দুম্বা পালনের ফলে একদিকে যেমন আমিষের চাহিদা পূরণ করবে অন্যদিকে আর্থিকভাবেও লাভবান হবে খামারীদের। বাংলাদেশে তথা সাতক্ষীরা উপকূলীয় অঞ্চলে এটা সম্ভাবনাময় একটি প্রাণী। আব্দুস সালাম খোকা নামের একজন খামারী সাতক্ষীরায় প্রথম দুম্বা পালন শুরু করেছেন। আমরা তাকে পরামর্শসহ ঔষধপত্র দিয়ে সহযোগিতা করব।'
টিটি/