সুন্দরবন ভ্রমণে খরচ বৃদ্ধি, ক্ষতির মুখে পর্যটন ব্যবসায়ীরা
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে দৈনিক ভিত্তিতে ভ্রমণ ফি, প্রবেশ ফি, তথ্য কেন্দ্রের ফি, গাইড ফি, লঞ্চ ক্রু ফি, নিরাপত্তা গার্ড ফি, টেলিকমিউনিকেশন ফি, ভিডিও ক্যামেরা ফি, তীর্থ ফি, ট্রলার ফি ও বিশ্রামাগার ভাড়াসহ বিভিন্ন খাতে সরকারকে টাকা দিতে হয়।
তবে এর প্রায় সব খাতে কর ও ফি বাড়িয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
সুন্দরবনে পর্যটনের পাশাপাশি দুবলারচরে রাসমেলায় পুণ্যার্থী ও সুন্দরবনে সবধরনের বনজীবীদের জন্যও নতুন রাজস্ব হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে নতুন করে রাজস্ব বাড়ানোয় তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, সুন্দরবনের ভেতরে কটকা, কচিখালী, নীলকমল, হিরণ পয়েন্ট, নোটাবেকী, পুষ্পকাঠী, মান্দারবাড়িয়া, হলদেবুনিয়ার মতো সরকার ঘোষিত অভয়ারণ্যগুলোতে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের প্রতিদিন ভ্রমণ ফি দিতে হতো যথাক্রমে ১৫০ ও ১৫০০ টাকা। এখন তা দ্বিগুণ বেড়ে যথাক্রমে ৩০০ ও ৩০০০ টাকা হয়েছে।
প্রতিযাত্রায় সুন্দরবনের পর্যটকবাহী নৌযান বনে প্রবেশ এবং অবস্থানের জন্য নির্ধারিত হারে ফি দিতে হয়। ১০০ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের নিবন্ধিত নৌযানের ক্ষেত্রে আগে প্রবেশ ফি ছিল এক হাজার টাকা। তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫০০ টাকা। ৫০ ফুট থেকে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের নৌযানের ক্ষেত্রে তা ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০০ টাকা হয়েছে। একইভাবে সুন্দরবনে সবপ্রকার নৌযানের অবস্থান ফিও বেড়ে আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদের দেশ যেহেতু পর্যটনবান্ধব নয়, তাই আমাদের বিদেশি পর্যটক আনতে হয় কষ্ট করে।
এই মূল্যবৃদ্ধি সুন্দরবনে বিদেশি পর্যটককে সুন্দরবন বিমুখ করবে। সরকার দেশীয় পর্যটনের বিকাশের কথা বললেও হঠাৎ করে এই রাজস্ব বাড়ানোর ফলে নতুন করে ক্ষতির মুখে পড়ছে সুন্দরবনের পর্যটনশিল্প। এর ফলে সুন্দরবনের প্যাকেজ ভ্রমণের খরচ অনেক বাড়ছে।
১৯ অর্থবছরে ২ লাখ ৫১ হাজার পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন। এই সংখ্যা তার আগের বছরের চেয়ে ৩০ হাজার বেশি। এ খাত থেকে সরকারের বছরে দুই কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও স্বচ্ছন্দে ভ্রমণের ব্যবস্থা না থাকার নানা রকম অভিযোগ রয়েছে পর্যটকদের।
তবে রাজস্ব বাড়ানোকে ’স্বাভাবিক’ হিসেবেই দেখছেন খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো।
বনবিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ১০ বছর পর নতুন রাজস্ব তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রাজস্ব বাড়ানো যুক্তিসংগত মনে করেছেন বলেই নতুন রাজস্ব হার বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বিদেশি পর্যটকদের রাজস্ব বেশি বাড়ানো নিয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে প্রবেশমূল্য ও অন্যান্য রাজস্ব এখনও অনেক কম। এতে পর্যটনে কোনো প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি না।
সুন্দরবনে অনেকদিন ধরে পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত আছেন পাগমার্ক ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম বাচ্চু। তিনি বলেন, সুন্দরবনে সিংহভাগ পর্যটককেই কোনো না কোনো ট্যুর অপারেটরের সাহায্য নিয়ে প্যাকেজ ভ্রমণে যেতে হয়। এখন ফি ও রাজস্ব বৃদ্ধির ফলে প্যাকেজ মূল্য বেড়ে যাবে।
তিনি জানান, সুন্দরবনে দুইরাত তিনদিনের একটি ভ্রমণের প্যাকেজ আগে যেখানে ১০ হাজার টাকা লাগত, এখন দেশি পর্যটকের ক্ষেত্রে তা দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বেড়ে হচ্ছে। আর বিদেশি পর্যটকের অন্তত ছয় হাজার টাকা বাড়তি গুণতে হবে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসেসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) সাধারণ সম্পাদক ও রূপান্তর ইকো ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল আজম ডেভিড বলেন, নতুন করে রাজস্ব বাড়ানোয় বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। এতে পর্যটন ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
টিটি/