তনু হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর
এ দুনিয়ায় বিচারের আশা করি না: তনুর মা
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ছয় বছরেও ধর্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্তদের চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। গত এক বছরে তনুর পরিবারের কেউ কোনো খোঁজ-খবরও কেউ নেয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের। বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন তনুর বাবা-মা।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘কেউ আসে না, কেউ খবরও নেয় না। আমরা গরিব মানুষ। এ দুনিয়ায় বিচারের আশা করি না। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে রাখলাম। আল্লাহর বিচার বড় বিচার।’
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, তনুর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মসজিদে দোয়া ও এতিম শিশুদের খাওয়ানোর আয়োজন করছি।
বিচার না পাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, আমি আর বিচার চাই না। বিচার চেয়ে কী লাভ? গরিবের ওপর জুলুমের বিচার হয় না।
তনুর পরিবার সূত্র জানায়, তনুকে হত্যার পরদিন ২০১৬ সালের ২১ মার্চ তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর মধ্যে ২০২০ সালের নভেম্বরে মামলাটির দায়িত্ব পিবিআইকে দেওয়া হয়। পিবিআই ঢাকার একটি টিম দায়িত্ব পাওয়ার শুরুর দিকে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ঘুরে যায়। এরপর অন্ধকারে ঢাকা পড়ে মামলার কার্যক্রম।
পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, সিআইডি অনেক কাজ করেছিল। সে হিসেবে আমরা অতটা এগোতে পারিনি। ডিএনএ টেস্ট করে যেহেতু শুক্রানু পাওয়া গেছে, আমরা সন্দেহভাজনের সংখ্যা বাড়াব। সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।
২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর বাসায় ফিরেনি তনু। পরে স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনানিবাসের ভেতর একটি জঙ্গলে তনুর ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ পায়।
আরএম/এসএন