সামেক হাসপাতালে জনবল সংকটে সেবাবঞ্চিত রোগীরা
সাতক্ষীরার সাত উপজেলার ২২ লাখ মানুষের আধুনিক চিকিৎসার সেবার একমাত্র ভরসা করোনা ডেডিকেটেড সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (সামেক)।
গেল দুই বছর করোনার মধ্যেও এই হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা ভালো সেবা দিয়ে সুনাম অর্জন করেছেন। বর্তমানে প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পার্শ্ববর্তী জেলা খুলনা ও যশোরের কয়েকটি উপজেলার রোগীরাও এখানে আসছেন চিকিৎসা নিতে। কিন্তু, জনবল সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের সর্বাধুনিক সুবিধা সংবলিত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট, আইসিইউ, সিসি ইউ, বান ইউনিটসহ অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি থাকার পরও সেবা প্রত্যাশী রোগীদের অধিকাংশ পরীক্ষা করাতে হয় বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়গনিস্টিক সেন্টার থেকে। হাসপাতালে ভেতরে দুর্গন্ধ ও নোংরা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে দুর্ভোগ পোহাতে হয় এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদেরকে।
রোগীর চাপ বাড়ায় গেল বছর তড়িঘড়ি করে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। অথচ এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে বাড়ানো হয়নি জনবল।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সামেক হাসপাতালে বর্তমানে সৃজিত পদ সংখ্যা ১৬৫টি। এর মধ্যে ৬৩টি চিকিৎসক পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারী পদ শূন্য আছে আরও ৭৬টি।
দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া থেকে অসুস্থ মাকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রুহুল আমিন জানান, 'তার বৃদ্ধা মা কয়েকমাস ধরে অসুস্থতায় ভুগছেন। অবস্থার অবনতি হলে গেল কয়েকদিন আগে তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু, এখানে নিয়মিত ডাক্তার দেখতে আসেন না। মাঝে মাঝে ইর্ন্টান ডাক্তার এসে দেখে যান। রক্ত পরীক্ষা হাসপাতালের প্যাথোলজি বিভাগে করা গেলেও বাকি পরীক্ষাগুলো বাইরে থেকে করতে হয়েছে।'
বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা কালিগঞ্জ উপজেলার হামিদুর রহমান বলেন, 'চোখের ডাক্তার দেখাবো বলে আগে একদিন এসেও ফিরে গিয়েছি ডাক্তার না থাকার কারণে। আজ রোগীর অনেক লম্বা সিরিয়াল, দীর্ঘ অপেক্ষার পরে ভেতরে গিয়ে দেখি, যাকে দেখাতে চেয়েছিলাম তিনি নেই। একজন ইর্ন্টান ডাক্তার রোগী দেখছে। বাধ্য হয়ে আজও ফিরে যেতে হচ্ছে।'
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'এখানে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি চিকিৎসকদের দেখা পাওয়া যায় না। তবে প্রাইভেট ক্লিনিকে গেলেই তাদের পাওয়া যায়।'
জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আনিছুর রহিম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, 'জেলা বাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর ২০১৭ সালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে ২৫০ শয্যা নিয়ে চালু করলেও বর্তমানে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে হাসপাতালটি। তবে জনবল সংকটের কারণে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।'
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালক ডা. এস জেড আতিক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, '২০১৭ সালে সামেক হাসপাতালে জন্য ১২৮২টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। চার বছর পর মাত্র ১৬৫টি পদ সৃষ্টি হয়েছে। এত কম জনবল দিয়ে এত বড় হাসপাতাল পরিচালনা কষ্টের ব্যাপার।'
তিনি বলেন, 'হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউ, সর্বাধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ বিশ্বমানের সব যন্ত্রপাতি দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। কিন্তু ইনস্টুমেন্ট কেয়ারটেকার, ইটিজি টেকনিশিয়ান, ইসিজি, ইকো টেকনিশিয়ান, ডাইলাসিস টেকনিশিয়ানসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য কোনো জনবল নেই। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নস্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা অধিকাংশ যন্ত্র।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরত-ই-খোদা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, 'বর্তমানে সিনিয়র, জুনিয়র এবং সহকারী সার্জনসহ মোট ৯৯টি চিকিৎসক কর্মকর্তা পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩৬ জন চিকিৎসক। তবে নার্সের কোনো সংকট নেই। এ ছাড়া কর্মকর্তা কর্মচারীর শূন্য পদ ৭৬ জন। আউটসোর্সিং কর্মচারী রয়েছেন মাত্র ৭৬ জন। এত অল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে এত বড় হাসপাতালে সেবা দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। তার ওপর গত বছর জরুরি বিভাগ চালু করা হয়েছে। কিন্তু, বার্ন ইউনিট, ক্যান্সার ইউনিট, নিউরো মেডিসিন নিউরো সার্জারি, সাইক্যটরি ইউনিটগুলো জনবল সংকটে চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে আশা, করছি দ্রুত এই সংকট নিরসন হবে।'
এমএসপি