মশায় অতিষ্ঠ নওগাঁ পৌরবাসী
নওগাঁ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় মশার উপদ্রবে টেকা কঠিন হয়ে পড়েছে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও রেহাই মিলছে না। মশার জ্বালায় শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। শহরের মাঝখান দিয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীতে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা দীর্ঘদিনেও পরিষ্কার না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এতে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন পৌরবাসী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নওগাঁ শুধু কাগজ-কলমে একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। পৌরসভার নালা-নর্দমায় অপরিষ্কার পানি জমে থাকা, নিয়মিত পরিষ্কার না করা এবং যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে সম্প্রতি মশার উৎপাত বেড়েছে অনেক বেশি। বাসা-বাড়ি, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না কেউই। মশার কয়েল, স্প্রে সব কিছুই মশার কাছে হার মানছে। এ ছাড়া পৌরসভার মশক নিধন কার্যক্রমের অভাবে মশার বিস্তার চরম আকার ধারণ করেছে বলে মনে করেন তারা।
কালিতলা এলাকার বাসিন্দা প্রবীর লাহিড়ী বলেন, 'সন্ধ্যা হলেই বাড়ছে মশার উপদ্রব। কিছুদিন থেকেই মশার উপদ্রব বেড়েছে। ঘরে-বাইরে কোথাও শান্তি নেই। মশক নিধনে পৌরসভার কোনো কর্মীদের ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়নি। এ সুযোগে বেড়েছে মশা। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ঘরের বাইরে কোথাও দাঁড়ালেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঘিরে ধরছে। বাসায় তো মশারি ছাড়া টেকাই যায় না।
শহরের চকদেব এলাকার নূর হোসেন বলেন, মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় পৌরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। পৌর কর্তৃপক্ষ নালা-নর্দমাগুলোতে মশক নিধন স্প্রে না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। নিয়মিত মশা নিধনকরী ওষুধ প্রয়োগ করা হলে হয়তো পৌরবাসীকে এ দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
মাস্টার পাড়া এলাকার তাওহীদা নাসরিন বলেন, শুধু রাতে না, দিনেও ঘর একটু অন্ধকার হলেই মশা কামড়াচ্ছে। ফলে অনেক সময় দিনেও মশারি ব্যবহার করতে হচ্ছে।
বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকার সুলতানা বেগম বলেন, মশার বংশবিস্তার রোধে ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষের ওষুধ ছিটানোর কোনো খবর নেই। সম্প্রতি এ শহরে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেলেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
পার নওগাঁ মধ্য পাড়ার জাকিয়া জেসমিন বলেন, এত বেশি মশা হয়েছে যে বাজারের কয়েলেও কাজ হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে দিনের বেলায় মশারি টাঙিয়ে শিশুদের মশার হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করছি।
বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকার শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলেন, সন্ধ্যার পর ঠিকভাবে মশার কামড়ে পড়ালেখা করা যায় না। ঝাঁকে-ঝাকেঁ মশা ধরে। কামড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুলে যায় ও জ্বলে। এজন্য অনেক কষ্ট হয়। পড়াশুনাও ঠিকমতো করতে পারি না।
মুন্সিপাড়া এলাকার ফয়সাল বলেন, যত্রতত্র ময়লার ভাগাড় তৈরি করে মশার কারখানা বানিয়েছে পৌরসভা। অপরিকল্পিত ড্রেনগুলোতে পানি জমে মশার প্রজনন হচ্ছে, এর দায় পৌরসভার। আমাদের ওর্য়াডে কখনো মশক নিধন কার্যক্রম দেখিনি। পৌরসভায় ট্যাক্স দেওয়া হয় মূলত সেবা পাওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা তো কোনো সেবাই পাই না।
এ বিষয়ে নওগাঁ পৌরসভার মেয়র নজমুল হক সনি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ইতিমধ্যে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তিনটি ফগার মেশিনের মাধ্যমে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ফগার মেশিনের পাশাপাশি হ্যান্ড স্প্রে এর মাধ্যমে ড্রেনে যেসব মশার ডিম বা লার্ভা থাকে সেগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বর্ষা মৌসুমের আগে প্রত্যেকটি বড় বড় ড্রেন পরিস্কার করা হয়। যাতে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের কোনো সমস্যা না হয় এবং পানি জমে মশা বংশবিস্তার না করতে পারে।
টিটি/