রংপুরে বলাৎকারের অভিযোগে এসআই গ্রেপ্তার
ভ্যান চালককে বিকৃত যৌনচার বলাৎকারের অভিযোগে রংপুরের পীরগাছা থানার এসআই স্বপন কুমারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই আজিজুল ইসলাম বাদি হয়ে বিকেলে পীরগাছা থানায় মামলা দায়ের করেছে। পীরগাছা থানার ওসি সরেস চন্দ্র বলৎকারের অভিযোগে মামলা হবার বিষয়টি ও পুলিশ কর্মকর্তা স্বপন কুমারকে পুলিশ লাইন থেকে গ্রেপ্তার করার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আগে বৃহসপতিবার গভীর রাতে এস আই স্বপন কুমারকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসি জানিয়েছেন স্বপন কুমার এসআই হিসেবে প্রায় ৬ মাস আগে পীরগাছা থানায় যোগ দেন। তিনি পীরগাছা বাজারে জনৈক রিপন স্বর্নকারের বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখানেই বসাবাস করতেন। গত ১৬ মার্চ সন্ধ্যার দিকে এসআই স্বপন কুমার উপজেলার সুখানপুকুর গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে রিকশা চালক আব্দুল মালেককে বাড়িতে কাজের কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে নিয়ে নেশা জাতীয় ট্যাবলেট খাইয়ে দেয়। এরপর আব্দুল মালেক অচেতন হয়ে পড়লে এসআই স্বপন তাকে বলৎকার করে। এতে সে গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে। বর্তমানে আব্দুল মালেক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আশফাক হোসেন জানিয়েছেন।
এদিকে বলৎকারের বিষয়টি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা স্বপন কুমারের বিচারের দাবিতে ফুলে ফেঁপে উঠেছে পীরগাছার নানা শ্রেণীর মানুষ। শুক্রবার বিকেলে রিপন স্বর্নকারের ভাড়া বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেছে।
জানাগেছে, এস আই স্বপন কুমার পীরগাছা উপজেলার অন্নদানগর গ্রামের মহেন্দ্র চন্দ্রের ছেলে এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ভবেশ চন্দ্রের ছোট ভাই ভুপতি চন্দ্রকে একই কায়দায় বাসায় ডেকে নিয়ে আসে। তবে আব্দুল মালেককে বলৎকারের বিষয়টি জানাজানি হলে পীরগাছা বাজারের ব্যবসায়ীরা এসআই স্বপনের ভাড়া বাসা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। খবর পেয়ে পীরগাছা থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এসআই স্বপনকে উদ্ধার করতে তার বাসায় গেলে সেখানে ভুপতি নামে আরো এক ব্যাক্তিকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। পুলিশ এসআই স্বপনকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পীরগাছা থানায় নিয়ে আসলে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আব্দুল মালেককে বলৎকার করার কথা স্বীকার করে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতেই এসআই স্বপন কুমারকে পীরগাছা থানা থেকে প্রত্যাহার করে রংপুর পুলিশ লাইনে ক্লোজ করে নিয়ে যায় পুলিশ।
পুলিশ ও বলৎকারের শিকার আব্দুল মালেক জানান, এসআই স্বপন একজন বিকৃত রুচির যুবক। সে পীরগাছা থানায় যোগদানের পর থেকে বেশ কয়েকজনকে বাসায় ডেকে ঘুমের ওষুদ খাইয়ে বলৎকার করেছে। লাজ লজ্জার ভয়ে মুখ খোলেনি কেউ। তবে আব্দুল মালেক গুরতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় বিষয়টি জানাজানি হয়। বিকৃত যৌনাচারের বিষয়টি সামনে আসে। তার বাসা থেকে পুলিশ কর্তৃক উদ্ধার হওয়া ভুপতি বর্ম্মনকেও সে বলৎকার করেছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে বলৎকারের শিকার আব্দুল মালেকের বড় ভাই আজিজুল ইসলাম জানান, ১৬ মার্চ এসআই স্বপন তাকে কৌশলে তার বাসায় নিয়ে গিয়ে বিস্কুট, মিষ্টি ও চা খাওয়ায় এর সাথে চেতনা নাশক ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে দিলে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে বলৎকার করেছে এস আই স্বপন কুমার। তিনি জানান পুরো ঘটনা বর্ণনা করে শুক্রবার বিকেলে পীরগাছা থানায় এসআই স্বপন কুমারকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
পুলিশের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সদস্য জানিয়েছে এস আই স্বপন তিন বছর আগে চাকুরিতে যোগদান করেছে। সে বিকৃত রুচির যৌনাচার প্রাথমিক ভাবে বেশ কয়েকজকনকে বলৎকার করার সত্যতা মিলেছে।
পীরগাছা থানার ওসি সরেস চন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলৎকার করার অভিযোগ সত্য বলে জানিয়ে বলেন এ ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই আজিজুল ইসলাম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করার পর পরেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান দেয়া হয়েছে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) আশরাফুল আলম পলাশ জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসআইকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।