বিষ মেশানো মিষ্টি কিনে দেন শিশু দুটির মায়ের প্রেমিক সফিউল্লাহ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে প্রেমিককে বিয়ে করে নতুন সংসার করার জন্য দুই ছেলেকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন মা রিমা বেগম। নতুন জীবনের পথে বাধা হওয়ায় দুই ছেলেকে মিষ্টির সঙ্গে বিষ খাইয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে নাপা সিরাপ সেবনে তাদের মৃত্যুর কথা রটানোর বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। আর সেই মিষ্টি কিনে দিয়েছিল তার প্রেমিক ও শ্রমিক সর্দার সফিউল্লাহ।
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আনিসুর রহমান তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। এর আগে দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক বেগম আফরিন আহমেদের কাছে জবানবন্দি দেন অভিযুক্ত শিশু দুটির মা রিমা বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে রিমা বেগমের জবানবন্দির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ১২ বছর আগে পারিবারিকভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে রিমার বিয়ে হয়। তাদের দুই ছেলে- ইয়াসিন খান (৭) ও মুরসালিন খান (৪)।
ইসমাইল সিলেটের গোলাপগঞ্জের বৈটিঘর এলাকায় ইটভাটার শ্রমিকদের গাড়ির টিকিট বিলির কাজ করেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে রিমা স্থানীয় একটি চাতালকলে কাজ শুরু করেন। সেখানে শ্রমিকদের সর্দার সফিউল্লাহর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তবে এ ক্ষেত্রে রিমার দুই ছেলে ছিল বাধা। তারা দুই শিশুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পুলিশ সুপার জানান, ১০ মার্চ বিকাল ৫টার দিকে সফিউল্লাহ বাড়িতে এসে রিমাকে বিষ মেশানো পাঁচটি মিষ্টি দিয়ে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী, জ্বর এসেছে বলে শিশুদের দাদিকে দিয়ে স্থানীয় মা ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ আনতে পাঠান। সে সময় রিমা বড় ছেলে ইয়াছিনকে তিনটি ও ছোট ছেলে মুরসালিনকে দুটি মিষ্টি খাওয়ান। শিশুদের দাদি নাপা সিরাপ নিয়ে বাড়িতে এলে সেখান থেকে আধা চামচ করে দুই সন্তানকে খাওয়ান রিমা। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই শিশুর মুখ দিয়ে লালা বের হয়। পরে তারা বমি শুরু করে। তাদের প্রথমে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বাড়ি নেওয়ার পথে রাস্তায় রাত ৯টার দিকে মুরসালিন ও রাত ১০টার দিকে ইয়াছিনের মৃত্যু হয়।
রিমার জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্বামী ও দাম্পত্যজীবন নিয়ে রিমা ভালো ছিলেন না। সফিউল্লাহ যখন তাকে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখান, তিনিও এর সঙ্গে একমত হন। পরে নিজেরা পরিকল্পনা করে দুই শিশুকে হত্যা করেন।
পুলিশ সুপার আনিসুর বলেন, ‘বিভিন্ন দিক থেকে আমরা ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছিলাম। ঘটনার পর থেকে শিশুদের মায়ের আচরণে আমাদের সন্দেহ হয়। তার মুঠোফোনের কলের তালিকা সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করি। ঘটনার দিন সফিউল্লাহর সঙ্গে রিমার ১৫ বার মুঠোফোনে কথা হয়। বিষয়টিতে আমাদের সন্দেহ হয়। এ নিয়ে জানতে চাইলে রিমা সবকিছু স্বীকার করেন। আজ তিনি জবানবন্দি দেন।’ সফিউল্লাহকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার রাতে তাদের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাবা ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় শিশুদের মাসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়। এরপর পুলিশ দুই শিশুর মা রিমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে।
এমএসপি