সূর্যমুখীর হাসিতে হাসছে কৃষক!
সূর্যমুখীর হাসিতে হাসছে গ্রাম-বাংলার ফসলি মাঠ। ভোর হলেই সোনা রোদে চোখ মেলে সূর্যমুখী। সূয্যি মামার সঙ্গে সূর্যমুখীর বাগানও জেগে উঠে। সবুজ পাতার আড়ালে মুখ উচু করে আছে সূর্যমুখী। দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে তাই এ ফুলের নাম সূর্যমুখী।
সূর্যমুখীর বাগানে প্রায় প্রতিদিন বসে প্রজাপতি আর মৌমাছির মেলা। নয়ন জুড়ানো এ দৃশ্য মোহিত করছে মানুষকে। এ ফুল দেখতে যেমন অদ্ভুত আকষর্ণীয়, তেমনি রয়েছে হাজার গুণাগুণ। তাই কম খরচে বেশি লাভের আশায় সূর্যমুখী চাষ করছেন টাঙ্গাইলের কৃষকরা।
টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ২২৮ হেক্টর জমিতে চাষিরা সূর্যমুখীর আবাদ করেছেন। তারমধ্যে ১২টি উপজেলার মধ্যে বাসাইল, ঘাটাইল, নাগরপু্র, মধুপু্র, ভূঞাপুর ও ধনবাড়ী উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের আবাদ বেশি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দশর্নার্থীরা ভিড় করছেন সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন বয়সীরা ভিড় করেছেন সূর্যমুখী ফুলের মাঠে।
সূর্যমুখী ফুল দেখতে আসা মাসুম মিয়া বলেন, সূর্যমুখী ফুল দেখতে সূর্যের মতো। মাঠ জুড়ে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহ দেখতেই ভালো লাগছে। বন্ধুদের সঙ্গে এসে সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে পারলাম। রোদের মধ্যে সূর্যমুখী ফুল গুলো চকচক করছে। জমিতে হাজারো সূর্যমুখী ফুল যেন খেলা করছে।
বাসাইলের সূর্যমুখী চাষি আলম খান বলেন, সূর্যমুখীর ভালো ফলন হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে এক কেজি বীজ আর ২০ কেজি সার দিয়েছিল। প্রতিটি সূর্যমুখী ফুল থেকে ২৫০-৩০০ গ্রাম বীজ হবে। ৫ কেজি সূর্যমুখীর বীজ থেকে দেড় কেজি তেল হয়।
তিনি বলেন, সূর্যমুখীর তেল খুবই পুষ্টিকর আমাদের জন্য। প্রতি কেজি সূর্যমুখীর তেল ৩৫০-৪৫০ টাকা বিক্রি করা যায়। এ মৌসুমে ৪০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেছি। সরিষার চেয়ে সূর্যমুখীর বেশি ফলন হয়।
সূর্যমুখী চাষি ছোরহাব মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে ৫০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। সূর্যমুখীর তেল সরিষার চেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। প্রতিটি ফুল থেকে ২৫০-৩০০ গ্রাম বীজ পাওয়া যাবে। বাজারে সরিষা ও সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখীর তেলের চাহিদা বেশি।
গতবছর সূর্যমুখী আবাদ করে লাভবান হয়েছিলাম। কৃষি অফিস থেকে ৩ কেজি বীজ ও ১০০ কেজি সার দেওয়া হয়েছিল। সূর্যমুখী আবাদে আমার ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি ৫০ শতাংশ জমিতে ১০ মণ সূর্যমুখীর বীজ হবে। প্রতি মণ ৩৫০০-৪০০০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব। খরচ বাদে ২৫ হাজার টাকা লাভ থাকবে। সূর্যমুখীর ফুল দেখতে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ভিড় করছে।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মোহাম্মদ দুলাল উদ্দিন জানান, চাষিদের বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। চাষিদের সূর্যমুখী আবাদে বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে করে চাষিরা সূর্যমুখী চাষাবাদে আরও অধিক লাভবান হয়।
তিনি আরও জানান, সূর্যমুখী হলো ভোজ্য তেল। সূর্যমুখীর তেল শরীরের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত। সূর্যমুখী থেকে ৪৫-৫০ শতাংশ তেল পাওয়া যায়। সরিষার থেকে ১০-১৫ শতাংশ বেশি তেল হয়। অন্য সব তেলের চেয়ে সূর্যমুখীর তেলে পুষ্টিগুণ বেশি। বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদাও বেশি।
টিটি/