ফেনীতে খালের বাঁধ কাটতে এসে বিজিবির বাধায় পিছু হটলো বিএসএফ
ফেনীতে খালের বাঁধ কাটতে এসে বিজিবির বাধায় পিছু হটলো বিএসএফ। ছবি: সংগৃহীত
ফেনীর পরশুরাম সীমান্তে বল্লামুখার বাঁধ কাটতে এসে স্থানীয়দের বাধায় পিছু হটে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত ২০ আগস্ট রাতে উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের নিজ কালিকাপুর সীমান্তের শূন্যরেখায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএসএফ ৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
বন্যার কারণে বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন ও মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্ক না থাকায় বিএসএফের বাঁধ কাটার চেষ্টার বিষয় জানাজানি হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার রাতে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের চাপে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিলোনিয়া শহর প্লাবিত হয়। পরে বল্লামুখা খালের মুখে ভারতীয় অংশে বিএসএফের সদস্যদের সহযোগিতায় বাঁধ কেটে দেয় ভারতীয়রা। এতে সিলোনিয়া নদীর পানি বেড়ে অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়। একপর্যায়ে বাংলাদেশ অংশে বাঁধটি কেটে দিতে জোর চেষ্টা করলেও বিজিবি ও স্থানীয়দের বাধার মুখে তা ব্যর্থ হয়েছে। বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন ও মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্ক না থাকায় বিষয়টি এত দিন জানাজানি না হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় শুরু হয়েছে আলোচনা।
মো. মোস্তফা, দেলোয়ার হোসেন, মো. ইসমাইল হোসেনসহ নিজ কালিকাপুর গ্রামের একাধিক বাসিন্দা বলেন, গত ২০ আগস্ট সকালে বিভিন্ন মসজিদে মাইকিং করে বল্লামুখার খালের বাঁধের বিষয়ে গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়। ওই দিন রাত ৮টার দিকে বাংলাদেশ অংশের বাঁধ কাটতে চেষ্টা করে বিএসএফ। তাদের সহযোগিতায় ভারতীয় নাগরিকেরা এগিয়ে আসেন। বাঁধে অবস্থান নেওয়া বাংলাদেশি স্থানীয় বাসিন্দাদের ছত্রভঙ্গ করতে বিএসএফ পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে গ্রামবাসীকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন নিজ কালিকাপুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা। তাঁদের বাধার মুখে খালের বাঁধটি কাটতে পারেননি বিএসএফ ও ভারতীয়রা। এতে বন্যায় আরও বেশি দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে মির্জানগর ইউনিয়নসহ পরশুরামের নিম্নাঞ্চল।
ইউনুছ মিয়া নামে এক বৃদ্ধ বলেন, বাঁধটি কেটে দেওয়া হলে মির্জানগর ইউনিয়নসহ পরশুরামে আরও বেশি পানি প্রবেশ করতে। ১৯৮৩ সালের বন্যার সময়ও এই বাঁধ কেটে দেওয়ায় পরশুরামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
নিজ কালিকাপুর বিজিবি ক্যাম্পের নায়েক রুম্মান শরীফ বলেন, বাঁধটি যেন কোনোভাবে কাটতে না পারে, সে জন্য আমরা গ্রামবাসীর সঙ্গে সেদিন বাঁধের ওপরে অবস্থান নিয়েছিলাম।
বিজিবির ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, ‘ওই এলাকায় সীমান্তের শূন্যরেখায় ভারতের অংশে বাঁধ কাটার চেষ্টা করা হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা এতে বাধা দেয়। পরে বিজিবি সদস্যরা গেলে তাঁরা সরে যান।’
উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের নিজ কালিকাপুরে ভারত সীমান্তে মুহুরি নদী সংলগ্ন চরের পশ্চিমে-দক্ষিণে রয়েছে একটি মরা নদী। সেটি বল্লামুখার খাল নামে পরিচিত। বল্লামুখার খাল নিজ কালিকাপুর থেকে শুরু হয়ে রাঙ্গামাটিয়া, ফকিরের খিল, উত্তর কাউতলী, বাইন্যা গ্রাম, ডিএম সাহেবনগর, মেলাঘর, মির্জানগর, গদানগর, পূর্ব সাহেবনগর, কালীকৃষ্ণনগর গ্রাম দিয়ে সিলোনিয়া নদীতে মিলিত হয়েছে।