আবারও গ্রেপ্তার ‘লেডি কিলার’ পুলিশপুত্র অর্ণব
ছবি: সংগৃহীত
আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তার পুত্র লেডি কিলার রাহমাতুর রাফসান অর্ণবকে আবারো গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনাজপুর কোতয়ালী থানা পুলিশ অর্ণবকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠিয়েছে।
শুক্রবার দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফরিদ হোসেন সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, একটি প্রেন্ডিং মামলায় ওই যুবকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।
রাহমাতুর রাফসান অর্ণব (২৫) সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার কর্ণমুর্তি গ্রামের পুলিশ পরিদর্শক মো.জাহিদুল ইসলামের ছেলে। বর্তমানে তিনি পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটে কর্মরত। জাহিদুল দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় কর্মরত থাকাকালীন তৎকালীন এক বিএনপি নেতার বোনকে বিয়ে করেন। অথচ নিজেকে ডিআইজির ছেলে পরিচয় দিয়ে ভয়ংকর প্রতারণায় নেমেছেন পুলিশ কর্মকর্তার পুত্র অর্ণব।
ছেলে রাহমাতুর রাফসান অর্ণব এর আগে দিনাজপুর শহরের গণেশতলাস্থ মার্টিন চাইনিজ রেস্তরাঁর উপরে ‘লেগেসি রেস্টুরেন্ট’ নামে প্রতিষ্ঠান দিয়ে শহরে পাহাড়পুর ষষ্টিতলা এলাকায় ভাড়া থাকাকালীন এক ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়। সে সময় তাকে দু’দিনের রিমান্ড নেয় পুলিশ।
রাহমাতুর রাফসান অর্ণবের বিরুদ্ধে একাধিক তরুণী ও নারীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে এ ছাড়া ভুক্তভোগী তরুণী ও নারীকে ব্ল্যাকমেইল করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
উঠতি বয়সী অনেক তরুণী ও নব্য বিবাহিত প্রবাসী স্বামীর স্ত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব হারাতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দিনাজপুর ও রাজধানী ঢাকায় একাধিক মামলা করেছেন। এ ছাড়া মাদক ব্যবসা, চাকুরি দেওয়া ও বিদেশ লোক পাঠানোর নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিওয়ারো অভিযোগ রয়েছে। দিনাজপুর শহরে তার মালিকানাধীন লিগেসি নামের একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টের আড়ালে তরুণীদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় ও ধর্ষণ মামলায় জেল খেটেছেন তিনি।
রাজধানীর ধানমণ্ডির এক শিল্পপতির মেয়ে দিনাজপুরে গিয়ে অর্ণবের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে একটি মামলা করেন। তার অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে দিনাজপুর কোতয়ালী পুলিশ। তরুণীর অভিযোগে বলা হয়, পরিচয়ের পর প্রেমের সম্পর্ক করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন অর্ণব। বিয়ের কথা বলে অর্ণব তার কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকা, ৫০ ভরি সোনা ও দুটি প্রাইভেট কার হাতিয়ে নেন। অর্ণব তার কাছ থেকে সব মিলিয়ে প্রায় এক কোটি ২৭ লাখ টাকার জিনিসপত্র নিয়েছেন।
এই মামলার বিষয়ে জানতে চাইছে দিনাজপুর কোতয়ালী থানার সাব ইন্সপেক্টর মো. নূর আলম বলেন, ওই মামলায় তরুণীর করা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত তরুণের বিরুদ্ধে এমন আরো অভিযোগ রয়েছে এই থানায়।
জানা যায়, পুলিশের ডিআইজির ছেলের ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে পুলিশের ভ্যান ব্যবহার করে ও ঢাকা মহানগর পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে, হুডার ব্যবহার করে অর্ণব কক্সবাজার থেকে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য নিয়ে এসে সারা দেশে ছড়িয়ে দেন। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন শিল্পপতি ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে সেসব ভিডিও ধারণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।
যার প্রেমের ফাঁদে পড়ে অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েও সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে এ তালিকায় উঠে আসা ভুক্তভোগীর সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। দামি ব্র্যান্ডের গাড়িতে ডিএমপির লোগো ব্যবহার করে চলাচল করেন হিরো বনে যাওয়া এই ভিলেন। যার টার্গেটের শিকার ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েরা। শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ছাড়াও উদ্দেশ্য নানা কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া।
এদিকে ভুক্তভোগী তরুণীদের কয়েকজন অর্ণবের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন দিনাজপুরে। মাথার ওপর ঝুলছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও। কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে হওয়ায় কোনো কিছুই মানছেন না তিনি।
বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক করতে না চাইলে সে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। আবার কাউকে নেশা জাতীয় জুস, শরবত কিংবা কফি খাইয়ে ধর্ষণ করে। কিন্তু সে শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয় না, সব কিছু ভিডিও করে রাখে। পরে এই ভিডিও দেখিয়ে ফের ধর্ষণ এবং বিপুল অঙ্কের টাকা দাবি করে বসে।
জানতে চাইলে দিনাজপুর পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘অর্ণবের বিষয়ে বেশকিছু অভিযোগ এসেছে। ভিকটিম যারা আইনি সহযোগিতার জন্য এসেছিলেন তাদের প্রতি শতভাগ পেশাদারিত্ব বজায় রাখা হয়েছে। একজন পুলিশ সদস্যের ছেলে হলেও তাকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হয়নি।’