শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষ পালনে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় এবং সারা দেশে ১০ হাজারেরও বেশি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে অর্থ অপচয় এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এই অনুসন্ধান পরিচালিত হচ্ছে। দুদক সম্প্রতি এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম বুধবার (৯ এপ্রিল) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদক জানায়, অনুসন্ধান পরিচালনার জন্য দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমের সদস্যরা হলেন— সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস. এম. রাশেদুল হাসান, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এবং উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
অভিযোগ অনুযায়ী, মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সারা দেশে প্রায় ১০ হাজার ম্যুরাল এবং ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়, যার মোট ব্যয় হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল ব্যয়কে অপ্রয়োজনীয় এবং অপচয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের ১৭ই মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুজিববর্ষের কার্যক্রম চলছিল, তবে করোনা মহামারির কারণে অনুষ্ঠানগুলি যথাসময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি, তাই এর মেয়াদ বাড়ানো হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে ১ হাজার ২২০টি ম্যুরাল ও ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়, তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় প্রশাসনসহ ৭০০-এর বেশি স্থানে এই নির্মাণ কাজ করা হয়, যার ফলে প্রায় ১০ হাজার ম্যুরাল ও ভাস্কর্য গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে প্রতিটির নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকার মধ্যে। সড়কের বিভিন্ন জায়গা, চৌরাস্তায়, নদী বা পুকুরপাড়ে এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির প্রবেশপথেও বসানো হয়েছে এসব ভাস্কর্য।
মাসখানেক আগে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ম্যুরালের ডিজাইন ও নকশা তৈরিতে খরচ হয় ৫০ লাখ টাকা, এবং অন্যান্য খরচসহ এর মোট ব্যয় দাঁড়ায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) কর্তৃক নির্মিত ১০ ফুট উচ্চতা এবং ৮ ফুট প্রস্থের একটি ম্যুরালের নির্মাণে প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বাংলাদেশের বেতার ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় একটি ম্যুরাল নির্মাণ করেছে।
এছাড়া, এসব ম্যুরাল এবং ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য কোন পৃথক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি, এবং স্থানীয় প্রশাসন সরকারি অর্থে এসব নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে।
দুদকের অনুসন্ধান এখনো চলমান, এবং এই তদন্তের মাধ্যমে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।