৩ বছর পর ছাগলনাইয়া-শ্রীনগর সীমান্ত হাট চালু
দীর্ঘ ৩ বছর বন্ধ থাকার পর কিছু নিয়ম পরিবর্তন করে পুনরায় চালু হলো ফেনীর সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থাপিত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত হাট। মঙ্গলবার (৯ মে) আবারও বসেছে এ হাট। সপ্তাহে একদিন করে বসবে এ হাট।
এর আগে ২০২০ সালের ৩ মার্চ করোনা পরিস্থিতিতে উভয় দেশের কর্তাদের সম্মতিতে এ বাজারটি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় গত ২৬ এপ্রিল বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক শেষে আজ ৯ মে থেকে বাজারটি চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বাজার চালু হওয়ার কথা থাকলেও মালামাল সংগ্রহ বা পৌঁছাতে সময় লাগায় বেলা ১১টায় বাজারের কার্যক্রম শুরু হয়। বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান ফেনী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অভিষেক দাস ও ভারতের শ্রীনগরের এডিএম ধনবাবু রিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করে সীমান্ত হাট চালু করেন।
কর্তৃপক্ষ জানায়, সীমান্ত হাট সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এবার কিছু নীতিমালা পরিবর্তন করা হয়েছে। এ নিয়ে ২ মে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান অভিষেক দাশ স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ছাগলনাইয়া উপজেলার পূর্ব মধুগ্রাম ও ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার শ্রীনগরে স্থাপিত সীমান্ত হাটটি পুনরায় চালু হচ্ছে। বর্ডার হাটে প্রবেশের জন্য প্রতি টিকিটের মূল্য ২০ টাকা থেকে বর্ধিত করে ৫০ টাকা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর জন্য প্রতি সপ্তাহের হাট বারের আগের দিন ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় থেকে প্রবেশ টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। বাজারের দিন টিকিট সংগ্রহ করা যাবে না। নির্ধারিত হাটের দিন কোনো টিকেট বিক্রি করা হবে না। হাটে প্রবেশের সময় ক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভেন্ডি কার্ড প্রদর্শন করতে হবে। হাটে কোনো জাল জালিয়াতি ধরা পড়লে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দৈনন্দিন পণ্যের অতিরিক্ত পণ্য কেনা যা বেনা বলেও ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
জানা যায়, সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের মাঝে সম্প্রীতি বাড়ানো এবং বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি দেশের তৃতীয় সীমান্ত হাট হিসেবে চালু হয় ফেনীর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হাটটি। বাংলাদেশের ছাগলনাইয়া উপজেলার পূর্ব মধুগ্রাম ও ভারতের ত্রিপুরার শ্রীনগর এলাকার মাঝামাঝি স্থানে বাজারটি স্থাপন করা হয়। এখানে ২৬টি করে ৫২টি দোকান সমান ভাগে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এসব দোকানে সীমান্ত এলাকার ৫ কিলোমিটারের মাঝে উৎপাদিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারের বাংলাদেশি ক্রেতাদের কাছে ভারতীয় মসলা, কসমেটিকস, দুধ, হরলিক্সসহ বিভিন্ন পণ্যের কদর বেশি। অন্যদিকে ভারতীয় ক্রেতাদের বাংলাদেশি শুটকি, মুদিমাল, বেকারি, ফল ও প্লাস্টিকের পণ্যের প্রতি ঝোঁক বেশি। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার এ হাটে ভারতীয় দোকানিদের বিক্রির তুলনায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা হতো মাত্র ২০-২৫ ভাগ।
স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ মিয়া জানান, সীমান্ত হাট থেকে বাংলাদেশি ক্রেতারা বস্তা ভরে মালামাল ক্রয় করে থাকে। কিন্তু ভারতীয় ক্রেতারা যতসামান্য প্রয়োজনীয় বাজার করে বাজার ত্যাগ করেন। মূলত এ বাজারে বাংলাদেশিরা আসেন বাজার করতে আর ভারতীয়রা আসেন বাংলাদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে।
ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌমিতা দাশ জানান, সীমান্ত হাটে এবার কিছু নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। সেই আলোকে সুষ্ঠুভাবে বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বর্ডার হাট চালু থাকবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও বর্ডার হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান অভিষেক দাশ জানান, আগের সব নিয়ম অনুযায়ী ৯ মে থেকে সপ্তাহের প্রত্যেক মঙ্গলবার সীমান্ত হাট খোলা থাকবে। বাংলাদেশ অংশে প্রতি সপ্তাহের সোমবার অর্থাৎ হাটের আগের দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সীমান্ত হাটে প্রবেশের টিকিট বিক্রি করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত, চোরাচালান প্রতিরোধ ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের হয়রানি বন্ধে হাটে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখবে প্রশাসন।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ২ দেশের সীমান্ত হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩ মার্চের পর সীমান্ত হাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ২৬ এপ্রিল দুই দেশের প্রতিনিধিদলের উপস্থিতিতে সভায় হাটটি পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এসজি