লক্ষ্মীপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় অংশ নিয়েছিল ৮ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী
লক্ষ্মীপুরের বশিকপুরে নোমান-রাকিব জোড়া খুনের ঘটনায় হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা দেওয়ান ফয়সাল। এ হত্যার ঘটনায় ৮ জন অংশ নেয় বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন তিনি।
দেওয়ান ফয়সাল রামগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। মঙ্গলবার (২ মে) রাত ৯টার দিকে লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ তার নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার জানান, আসামি দেওয়ান ফয়সাল তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অনেকের নাম বলেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে কারো নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
ফয়সালের জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, রামগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর পদে নির্বাচন ও উপজেলা যুবলীগের কমিটিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন থেকে যুবলীগ নেতা নোমানের সাথে দেওয়ান ফয়সালের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। ঘটনার দিন রাত ৮টায় দেওয়ান ফয়সালের কাছে ফোন আসে যুবলীগ নেতা নোমানকে মারতে হবে। এমন ফোন পেয়ে মোটরসাইকেলে করে রামগঞ্জ থেকে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট এলাকায় এসে মোটরসাইকেল রেখে নাগেরহাট সড়কের পোদ্দার বাজার স-মিল এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় ফয়সালসহ ৮ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা নোমান ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিবের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে শটগান থেকে গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে নোমান দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তিনজন অস্ত্রধারী নোমানের মাথায় ও বুকে গুলি করে রাস্তায় ফেলে যায়। হত্যাকাণ্ড শেষে ফয়সালসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে রামগঞ্জের দিকে চলে যায়। এরপর দেওয়ান ফয়সাল এক ব্যক্তির হলুদ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের পরদিন রামগঞ্জে অবস্থান করলেও এরপর গা ঢাকা দেয় দেওয়ান ফয়সাল। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সোমবার(১ মে) দেওয়ান ফয়সালকে ঠাকুরগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১। আজ (২ মে) দিনভর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিবে বলে পুলিশকে জানায়। এরপর বিকাল সাড়ে ৫টায় তাকে লক্ষ্মীপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ ঘটনায় এজাহার নামীয় ৬ আসামিসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন পর্যায়ে রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। ঘটনার পর একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে এজাহার নামীয় ৩ নম্বর আসামি দেওয়ান ফয়সাল ও আলমগীরসহ দুইজনকে শনাক্ত করে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ২৫ এপ্রিল রাতে সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজার এলাকায় জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন নিহত নোমানের বড় ভাই ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কাশেম জিহাদীকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ ৩৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
এসআইএইচ