বাড়ছে রাতের তাপমাত্রা, অসহনীয় লোডশেডিং
চুয়াডাঙ্গায় আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০ দশমিক ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রাতে এ তাপমাত্রা আরও বাড়বে। সেই সাথে আগামী ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত এ তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে। এর মধ্যে তাপমাত্রা কমার এবং বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা নেই। আবহাওয়ার এ তথ্য দুপুরে নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ মোঃ জামিনুর রহমান। এদিকে রাতে-দিনে বিদ্যুতের অসহনীয় লোড শেডিংয়ে ক্ষুব্দ এ জেলার সাধারণ মানুষ।
জামিনুর রহমান বলেন, প্রতিদিনই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড হচ্ছে। গত টানা ১৫ দিন ধরে জেলায় সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় ছিল ৩১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এরপর দুপুর ১২ টায় তাপমাত্রা বেড়ে ৩৬.৬ ডিগ্রী হয়ে যায়। এরপর বেলা ৩টায় ৪০.৯ ডিগ্রীতে পৌঁছায়। দিনের চাইতে রাতের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
তিনি আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গায় তেমন নদ-নদী নেই। যা আছে সেগুলো প্রায় শুকিয়ে যাচ্ছে। সেচ কাজের জন্য মাত্রাতিরিক্ত ভুগর্ভস্থ পানি উঠানো হচ্ছে। এতে পানির স্তর নীচে থেকে আরও নীচে নেমে যাচ্ছে। গাছ-পালার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এ ছাড়াও কক্রটকান্তি রো বরাবর চুয়াডাঙ্গার অবস্থান হওয়ায় এ জেলায় গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং শীতকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গায় টানা ১৫ দিন ধরে তীব্র দাবদহে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। গত শনিবার থেকে শুরু হয়েছে অতি দাবদাহ। সেই সাথে কয়দিন ধরে দিনে-রাতে যুক্ত হয়েছে অসহনীয় লোড শেডিং। এতে একেবারে কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঝাঁঝাঁলো রোদ আর গরমে রোজাদারদের অবস্থাও ওষ্ঠাগত। সামনে ঈদ। তাই মানুষ জীবন-জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে বাইওে বের হচ্ছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে বাইরে বের হওয়া দায় হয়ে পড়ছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে যাতে হিট স্ট্রক, পানি শুন্যতা ও ডায়রিয়া আক্রান্ত না হয় সাধারন মানুষ। প্রতিদিন প্রায় শতাধিক মানুষ ডায়রিয়া, পানি শুন্যতায় আক্রান্ত হয়ে নদও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
সকালে সৃর্য ওঠার সাথে সাথে তীব্র রোদ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে এ রোদ যেন আগুনের ফুলকি হয়ে ঝরছে। বিশেষ করে দুপুরের পর আগুন ঝরা রোদের তেজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা বিরাজ করছে সুর্য একেবারে ডুবে যাবার আগ পর্যন্ত। চলমান তাপপ্রবাহে সবচেয়ে কষ্টে পড়েছে খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালক ও কৃষকেরা। তীব্র রোদে মাঠে টিকতে পারছেনা কৃষক ও দিনমজুর।
রাস্তায় ভাড়া মারতে পারছেনা রিক্সা-ভ্যান চালকরা। এদিকে তীব্র খরায় ঝরে যাচ্ছে আম-লিচুর গুটি। বোরো ধান, সবজি ক্ষেতে প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। বাড়তি দামে প্রতিদিন ডিজেল কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস ছুটে যাচ্ছে তাদের। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগার কেন্দ্রের রেকর্ড অনুযায়ী, গত সোমবার ছিল ৪২.৬ ডিগ্রী। রবিবার ছিল ৪১.৮ ডিগ্রী।
শনিবার এ জেলায় মওসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২.২ ডিগ্রী, শুক্রবার ৪১.৭ ডিগ্রী, বৃহস্পতিবার ছিল ৪১ ডিগ্রী, বুধবার ছিল ৩৯.৭ ডিগ্রী, মঙ্গলবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সোমবার জেলায় সর্বোচ্চ ৩৯.২ ডিগ্রী, রবিবার তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি, শনিবার ছিল ৩৮.৫ ডিগ্রি, শুক্রবার ৩৮ ডিগ্রি, বৃহস্পতিবার ৩৭.৫ ডিগ্রি, বুধবার ৩৭ ডিগ্রি, মঙ্গলবার ৩৭ ডিগ্রি, সোমবার ৩৫.৫ ডিগ্রি, রবিবার ৩৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে এ জেলায় দিনে-রাতে অসহনীয় লোড শেডিং শুরু হয়েছে। একদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আর গরম অন্যদিকে তীব্র লোডশেডিং। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বলছে, দেশে চলমান গ্রীষ্ম মওসুমে তীব্র দাবদাহ এবং পবিত্র রমজান মাস এর জন্য বিদ্যুতের চাহিদা অত্যধিক পরিমাএন বেড়ে যাওয়া, রামপাল ৫০ মেগা ওয়াট থার্মাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আশুগঞ্জ ৯০০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও চট্টগ্রাম (রাউজান) ২১০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ত্রুটির কারণে বন্ধ থাকা এবং হাটহাজারি ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের পিটি বিস্ফোরনের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে সহসাই এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে।
এএজেড