নিহতদের লাশ হস্তান্তর, এখনো জনশূন্য খামতাংপাড়া
পাহাড়ের দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের গোলাগুলিতে নিহত আটজনের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রোয়াংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান। তিনি জানান, নিহত ৮ জনের লাশ বম সোশ্যাল কাউন্সিলের (বিএসসি) সভাপতি লালজার লম বম গ্রহণ করেছেন। নিহত ৮ জনই বম সম্প্রদায়ের। এর মধ্যে ৭ জনের বাড়ি বান্দরবানের রুমা উপজেলায় আর ১ জনের বাড়ি রোয়াংছড়ি উপজেলায়।
তিনি আরও বলেন, বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ এখনও পর্যন্ত নিহতের ঘটনায় কেউ মামলা করতে আসেনি। বম সোশ্যাল কাউন্সিলের (বিএসসি) সভাপতি লালজার লম বম জানান, নিহতদের লাশ গ্রহণ করেছি এবং জুরভারংপাড়ায় নিয়ে যাচ্ছি। লাশগুলো সমাধিস্ত করতে হবে।
বিএসসি সভাপতি লালজার লম বমের তালিকা অনুযায়ী জুরভারংপাড়ার নিহত ছয়জন হচ্ছেন লাল ঠাজার বম, সাংখুম বম, ভানলাল দু বম, সান থির থাং বম, বল রেম বম ও লাললিয়ান বম। এর মধ্যে লাল ঠাজার বম জুরভারংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি। পাইংখিয়াংপাড়ার নিহত একজন হচ্ছেন জিহিম বম। আরেকজনের রৌনিনপাড়ার বমরাম থাং।
এদিকে শনিবার সকালে বান্দরবান সদর হাসপাতালে লাশগুলো দেখতে এসেছে বম জনগোষ্ঠীর অনেকে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কেউ কেউ। রোয়াংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চহাই মং মারমা বলেন, সন্ত্রাসীদের গোলাগুলিতে আতঙ্কিত হয়ে ২০০ জনের অধিক রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, প্রশাসন সহ অনেকে তাদের সহযোগিতা করছে। আমরা তাদের খাবার, পানি, আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। যখন নিরাপদবোধ করবেন তখনই গ্রামে ফিরে যাবেন। আমাদের সম্মিলিত সহযোগিতা থাকবে। রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, রোয়াংছড়ির খামতংপাড়ায় কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এবং ইউপিডিএফের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনায় নিহত হয় ৮ জন।
মৃত্যুর বিভৎসতা দেখে খ্যায়ং সম্প্রদায়ের ৫০টি পরিবার রোয়াংছড়িতে চলে আসে আর ২০ পরিবার রুমা উপজেলায় আশ্রয় নেয়। পাড়া থেকে এসে এখানে আশ্রয় নেওয়াদের আমরা সবকিছু সহায়তা করছি, তত্বাবধান করছি। আশা করি সমস্যা হবে না।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকালে বিদ্যালয়ের বেঞ্চে অনেকে শুয়ে আছেন। আবার কেউ কেউ ঘুমাচ্ছেন। মাথার পাশে রেখেছেন ঘর থেকে নিয়ে আসা কাপড় চোপড়ের ব্যাগ। ছোট শিশুদের অনেকে বিদ্যালয়ের বারান্দায় খেলা করছেন। আশ্রয় নেওয়াদের জন্য বিদ্যালয়ের মাঠের এক কোণে দুপুরের রান্না করা হচ্ছে।
আশ্রয়কেন্দ্রে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা দিচ্ছেন। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসে আশ্রিতদের সাথে কথা বলছেন। খবর নিচ্ছেন এলাকার পরিস্থিতির বিষয়ে। রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া চিংথয়, মংথয়, অংসাচিংসহ আরও কয়েক জন বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা ঘরে ফিরে যেতে পারব না। আমরা আগের মতো বসবাস করতে চায়। সন্ত্রাসীদের ভয়ে এখানে চলে আসছি। গোলাগুলির ভয়ে ওখানে থাকতে পারছি না। ভয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি।
এদিকে কেএনএ, বম জনগোষ্ঠীর আট সদস্যকে হত্যার ঘটনায় রোয়াংছড়ি, রুমা এবং থানচি উপজেলায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে তাদের ফেসবুক পেজে ভাট তে কুকি পেজে স্ট্যাটাস দেয়। এছাড়াও ওই পেজে ঘোষণা না মানলে চলন্ত গাড়িতে ব্রাশফায়ার করার হুমকিও দিয়েছে সশস্ত্র সংগঠনটি। প্রসঙ্গত, বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে খামতাংপাড়া থেকে শুক্রবার দুপুরে গুলিবিদ্ধ আটজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এএজেড