‘স্বর্ণ চুরি করিনি, ওরা আমার মাথা পা দিয়ে চাপা দিছে’
‘স্বর্ণ চুরি করছি বলে ওরা আমাকে প্রচুর মারছে। আমি স্বর্ণ চুরি করিনি। পা দিয়ে মাথা চাপা দিছে। পিঠে বেল্ট দিয়ে মারছে। সলার ঝাড়ুর আগা দিয়ে আমাকে মারছে। হিমেল (ইউপি চেয়ারম্যান জসীমের বড় ছেলে) ঘরের দরজা বন্ধ করে আমাকে মারছে।’ এ কথাগুলো বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশু সোয়াদের।
জানা গেছে, গত শনিবার বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জসীম উদ্দীনের বাসায় শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশু সোয়াদ আজিজ নগর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
সোয়াদ আরও বলে, ‘ওরা আমাকে বলছে আমার মা-বাবাকে মেরে ফেলবে। চেয়ারম্যানও আমার মাকে মারছে। আমার মাকে দেওয়ালে বারি খাওয়ায়ছে। আমি কোনো স্বর্ণ নেইনি। মারের ভয়ে আমি তাদের বলছি স্বর্ণ চুরি করে আমি আমার মাকে দিয়ে দিয়েছি।’
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুটির সঙ্গে থাকা মা সেলিনা আক্তার বলেন, গত ২ বছর আগে থেকে আমার ছেলেকে ওদের বাসায় দিয়েছি। আমার ছেলে আজ পর্যন্ত কোনো দিন কোনো টাকা-পয়সা চুরি করে নাই। গত বুধবার হঠাৎ করে আমাকে মোবাইল করে ওদের বাসায় যাবার জন্য বলে । আমি বৃহস্পতিবার ওদের বাসায় যাই। ওরা ইফতার দেয় আমি চলে আসি। তারা আবারও শনিবার আমাকে মোবাইল করে জানায় আমার ছেলে স্বর্ণ চুরি করছে এবং আমাকে আসতে বলে। আমি ওদের বাসায় আসি। আমি ছেলেকে চুরির বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে জসীম চেয়ারম্যান আমার ঘাড়ে মারে এবং জানালায় আঘাত করে। মার খাওয়ার পরে আমি আমার ছেলেকে স্বর্ণ চুরি করছে কি-না সেটা জিজ্ঞেস করছি। ছেলে তখন ওদের মারের ভয়ে বলে স্বর্ণ চুরি করে আমাকে দিছে। আমার ছেলে স্বর্ণ চুরি করে নাই ।
তিনি আরো বলেন, জসীম চেয়ারম্যানের বড় ছেলের নির্যাতনের বিষয়টি আমার ছেলে গেঞ্জি উঠিয়ে দেখায়। তখন উনি কিছু বলেননি। তবে আমাদের বলা হয়-টাকা তিন লাখ টাকা দিয়ে যাবি আর না হয় স্বর্ণ দিয়ে যাবি। আর টাকা না থাকলে জমির কাগজ দিয়ে যাবি। আমরা দিনমজুর মানুষ। আমরা স্বর্ণ চুরি করিনি। ওরা বলতেছে আমার ছেলে একটা স্বর্ণের চুরি, একটা কানের দুল ও একটা আংটি চুরি করেছে।
শিশুটির মা বলেন, এ ঘটনায় ওর বাবা লামা থানায় বাদী হয়ে মামলা করলে জসীম চেয়ারম্যানও স্বর্ণ চুরি নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে।
বান্দরবান সদর হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা ডা. মো. ইস্তিয়াকুর রহমান জানান, শিশুটির মুখে, কপালে আঘাতের চিহ্ন আছে। তবে মায়ের ক্ষেত্রে আঘাতের চিহ্ণ তেমন দেখা যায়নি।
এদিকে আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, অহেতুক
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার বিরুদ্ধে একটা মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। মানহানির অংশ হিসেবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছন। যাহা প্রচার করা হচ্ছে তাহা আদৌ সত্য নয়। আমার নির্বাচনী প্রতিপক্ষ এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যোগসাজশে এই নীল নকশা তৈরি করছেন। ধরা কে শরা জ্ঞান মনে করে এই অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন তারা। সব সাংবাদিক ভাইদের আরো সংযত আচরণ করার জন্য এবং বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করছি। আমিও চাই প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটন হোক এবং ষড়যন্ত্রকারীর মুখোশ উম্মোচন হোক।
এ ব্যাপারে লামা থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ধারায় চেয়ারম্যানের পরিবারের চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এসআইএইচ