বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৭৭৬ মণ্ডপে দুর্গাপূজা
শরৎ পা দিয়েছে মধ্য বয়সে। তবে তার আগেই মৃদুমন্দ হাওয়ার দোলা লেগেছে কাশবনে। বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ আশ্বিনের প্রথম দিন। ভ্রাদ্রের শেষ দিকেই ফুটতে শুরু করেছে কাশফুল। দোল খাচ্ছে বাতাসে। ঢলে পড়ছে এ ওর গায়ে। এদিকে প্রাতস্নাতা শিউলিরাও জানান দিচ্ছে শারদ আসছে। শারদের আমন্ত্রণের বার্তাতেই রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবী দুর্গার আবাহনের হাতছানি।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে পুরোদমে। প্রতিমা নির্মাণের জন্য ব্যস্ত সময় পর করেছেন মৃৎশিল্পীরা। অনেক মন্দিরে প্রতিমা তৈরির প্রথম ধাপের কাজ সমাপ্তও হয়েছে। তার মধ্যে অনেকে আবার ব্যস্ত সময় পার করছে মন্দির-আঙিনা সাজাতে। তবে এ বছর পূজা উদযাপন পরিষদ থেকে সব মন্দিরের জন্য মহালয়ার আয়োজন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত এবং প্রতিটি মন্দিরে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ২৬ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকাপ্রকাশ-এর জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বরিশাল বিভাগে ৬ জেলার ৪২টি উপজেলায় মোট ১ হাজার ৭৬৬টি মণ্ডপে পূজা হবে। ইতোমধ্যে মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিতে জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মন্দির কমিটি ও পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী মানিক মুখার্জী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘বরিশাল জেলায় এ বছর মোট ৬০০ মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। তার মধ্যে বরিশাল মহানগরীতে ৪৫টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। এ ছাড়া বরিশাল জেলায় নতুন ১১টি মন্দিরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্র থেকে পাঠানো ২৬ দফার নির্দেশনা সব মন্দির ও পূজা কমিটির কাছে পাঠানোর কাজ চলছে। এই নির্দেশনা মেনেই সবাইকে পূজা উদযাপন করার অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেক মন্দিরে সিসি ক্যামেরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে প্রত্যেক মন্দিরে স্বেচ্ছাসেবকের তালিকা বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।' পুলিশ সদস্যরা যখন থাকবেন না, তখন তারাই মন্দির আঙিনায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন বলে জানান তিনি।
বরগুনা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খোকন কর্মকার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘এবার সব মিলিয়ে জেলায় ১৬১টি মণ্ডপ নির্মাণ হচ্ছে। এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় ৩১, পাথরঘাটা ৫০, আমতলী ১৪, বামনা ১৭, বেতাগীতে ৩৭ এবং তালতলী উপজেলায় ১২টি পূজা মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে।’
ঝালকাঠির পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডা. অসীম কুমার সাহা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘ঝালকাঠি সদর উপজেলায় ৭২, রাজাপুর ৫২, নলছিটি ২২ এবং কাঁঠালিয়া উপজেলায় ২২টিসহ মোট ১৬৮ মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।’
পিরোজপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গৌরঙ্গ চন্দ্র দে ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, ‘শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে এ বছর জেলার ৭টি উপজেলায় মোট ৫৩৬ টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।'
ভোলা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘ শারদীয় দুর্গা উৎসব ২০২২-এ ভোলায় মোট ১১৬টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।’
এ ছাড়া পটুয়াখালী জেলায় মোট ১৮৫টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকাপ্রকাশের-এর পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি।
এদিকে ২৬ দফার নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে মণ্ডপকেন্দ্রিক ‘শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি’ গঠন, গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো করা এবং প্রতিমা বির্সজনে শোভাযাত্রা পরিহার করতে হবে। অন্যদিকে পূজামণ্ডপে অগ্নি-নিরাপত্তাসহ অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, যেকোনো প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহায়তা চাওয়ার কথা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
হিন্দু রীতি অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে অনুষ্ঠিত হয় দুর্গোৎসব। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন হয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। আশ্বিন মাসের এই শুক্লপক্ষকে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের শুরু হয় যে অমাবস্যায়, সেই দিনটিকে বলা হয় মহালয়া। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সেদিন ‘কন্যারূপে’ মর্ত্যে আসেন দেবী দুর্গা।
এসএন