রংপুরের আলু রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে
রংপুর থেকে উন্নত জাতের আলু রপ্তানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (১৯ মার্চ) থেকে সৌদি আরব, মালেয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে এসব আলু রপ্তানি করা হচ্ছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, প্রাথমিকভাবে সাড়ে চার হাজার মেট্রিকটন আলু রপ্তানির অর্ডার পাওয়া গেছে। সাদা জাতের আলুর প্রতিটির ওজন একশ গ্রামের উপরে। এসব আলু মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের পছন্দ। আলু রপ্তানি করতে পেরে এবং ভালো দাম পাওয়ায় আলু চাষিরাও খুব খুশি।
জেলার পীরগাছা উপজেলার বেলতলি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আলু চাষিরা শ্রমিক দিয়ে উন্নতমানের বস্তায় আলু ভর্তি করে ট্রাকে লোড করছেন।
আলু চাষিরা জানান, রংপরের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বিদেশের চাহিদার কথা চিন্তা করে জেলায় ৪০০ আলুচাষিকে উন্নত আলু চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে চাষিদের উন্নত জাতের আলু বীজও সরবরাহ করেছেন।
পীরগাছা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা প্রাথমিকভাবে সাড়ে চার হাজার মেট্রিকটন আলু রপ্তানির অর্ডার পেয়েছি। সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, মালেয়শিয়াসহ মধ্য প্রাচ্যে সাদা আলুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ওদের পছন্দ প্রতিটি আলু একশ গ্রামের উপরে হতে হবে। তাদের চাহিদার কথা বিবেবচনা করে আমরা সান্তা, ডায়মন্ড, কুমারিকা, গ্রানুলা, কুম্বিকা এলুয়েট, এস্টারিকস, সানসাইনসহ বিভিন্ন জাতের সাদা আলু উৎপাদনের জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও উন্নত জাতের আলু বীজ সরবরাহ করছি।
তিনি আরও জানান, মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সাদা আলুর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও নেপাল, শ্রীলংকা ও ভুটানে লাল আলুর চাহিদা রয়েছে। তারা সাদা আলু খেতে অভ্যস্ত নয়। ফলে তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে উন্নত জাতের লাল আলু উৎপাদন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এদিকে রাশিয়া বাংলাদেশ থেকে আলু কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অচিরেই এ ব্যাপারে চুক্তি হবে। ফলে রংপুর থেকেই প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিকটন আলু রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
আলু চাষিরা জানান, তারা সাধারণত যে আলু চাষ করেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ সেই আলু পছন্দ করে না। দেশের মানুষ ছোট আলু পছন্দ করে, বড় জাতের আলু কিনতে চায় না। তবে আলুর ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে হলে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আলু চাষ করতে হবে।
পীরগাছার আলুচাষি সাহেব আলী জানান, তিনি ৮ একর জমিতে উন্নত জাতের আলু চাষ করেছেন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব কম থাকায় ভালো ফলন হয়েছে। তিনি ২০০ মেট্রিকটন আলু রপ্তানি করছেন বলে জানান।
একই কথা জানান আলুচাষি সরোয়ার আলম। তিনি ১০ একর জমিতে উন্নত জাতের আলু উৎপাদন করেছেন। তার আলুর চাহিদা থাকায় পুরোটাই রপ্তানি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ওবাইদুর রহমান মণ্ডল বলেন, এবার রংপুর জেলায় রেকর্ড পরিমাণ ৫২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। যা দেশের মোট চাহিদার ২৫ ভাগেরও বেশি পূরণ করা সম্ভব হবে। তবে আমাদের রংপুরে যে আলু চাষ হয় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশে তার চাহিদা নেই। সে কারণে উন্নত জাতের বীজ এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কারণে আমরা এবার বিদেশে আলু রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছি। যেভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে চাহিদা আসছে তাতে করে এবার রংপুর থেকে আলু রপ্তানির পরিমাণ ৫০ হাজার টনের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। আলুচাষি কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবেন, দেশও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হবে।
এসএন