সুন্দরবনে বেড়েছে বাঘের সংখ্যা, একসঙ্গে তিন-চারটি
সুন্দরবন ভ্রমণে এসে ভয়ংকর সুন্দর ডোরাকাটা বাঘ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মেলাটা পর্যটকদের কাছে দুঃস্বপ্নের মতোই। বাঘ দেখার কৌতুহল নিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী এলেও বাঘের দেখা মিলেছে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই নগন্য। তাই হরহামেশা দর্শনার্থীদের চোখে বাঘের দেখা না মিললেও প্রায় দেখতে পান বনপ্রহরীরা। পর্যটকরা ভ্রমণে এসে বনের প্রহরীদের কাছে বাঘ দেখার গল্প শুনে থাকেন।
বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনে দিনের বেলায় বাঘের দেখা মেলার সুযোগ খুবই কম। কারণ দিনের বেলায় সুন্দরবনের অভ্যন্তর দিয়ে পর্যটনবাহী নৌযান চলাচল ও পর্যটকদের আনাগোনা থাকায় বন্যপ্রাণীরা বনের গহীনে বিচরণ করে থাকে। আর রাত হলে মিষ্টি পানি খাওয়ার জন্য ক্যাম্প ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সুপেয় পানির পুকুরে আসে বন্যপ্রাণীরা। তাই ভাগ্যে থাকলে জ্যোস্না রাতে পুকুর পাড়ের সুউচ্চ টাওয়ারে বসার পর দেখাও মিলে যেতে পারে বনের রাজা বাঘের।
কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন বছরের শুরু থেকে এখন দিনেও বাঘের বিচরণ চোখে পড়ছে দর্শনার্থীদের। তাও একটি নয়, দিনের বেলায় এক সঙ্গে কয়েকটি বাঘের নদী পার হওয়া ও নদীর পাড়ে দাড়ানো, বসা এবং হাটাহাটির দৃশ্য ধরা পড়েছে বন বিভাগ, ট্যুরিস্ট গাইড ও পর্যটকদের ক্যামেরার ফ্রেমে। আর যারা নিজের চোখে দেখেছেন তাদেরই সুন্দরবনের বাঘ দেখার শখ পূরণ হয়েছে। আর এই বাঘ দেখায় কারো কারো জীবনের সেরা ইতিহাসের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি সময়ে ৩টি বাঘের একসঙ্গে নদী পার হওয়া এবং ৪টি বাঘের একসঙ্গে বিচরণের দৃশ্য এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির বলেন, গত ১৮ জানুয়ারী পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের শ্যালা নদীর এক পাড় থেকে সাঁতরিয়ে অন্য পাড়ে ৩টি বাঘের পার হওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে দর্শনার্থী ও বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আর সর্বশেষ গত ১২ মার্চ একই রেঞ্জের ছিটে/ছিটা কটকা এলাকার খালের পাড়ে এক জায়গায় চারটি বাঘের দেখা মিলে। এ ছাড়াও বাঘের দেখা মিলছে পূর্ব সুন্দরবনের করমজল, হাড়বাড়ীয়া, আন্ধারমানিক, চরাপুটিয়া ও কটকা ক্যাম্প এবং পর্যটন স্পটগুলোতে। আর গত ৯, ১০ ও ১২ ফেব্রুয়ারী করমজলে দেখা গেছে জোড়া বাঘের।
তিনি আরো জানান, সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর বাঘ দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে তিনটি বাঘকে এক সঙ্গে নদী পাড়ি দিতে দেখা, আর এক সঙ্গে ৪টি বাঘকে এক জায়গায় খেলা করতে দেখা, বিভিন্ন ক্যাম্পে বাঘের আনাগোনা, পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে। এটি খুবই ভালো দিক। এতে বুঝা যাচ্ছে বনে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আজাদ কবির বলেন, সর্বশেষ ২০১৮ সালে বাঘ গণনা হয়েছে। ক্যামেরা ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে এ গণনায় তখন বনে ১১৪টি বাঘের অস্তিত্ব মিলে। এর আগে গত ২০১৫ সালে একই পদ্ধতিতে গণনায় বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি। ক্যামেরা ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে ছবি তুলে বাঘের গায়ের ডোরা গুনে ও দেখে গণনা করা হয়। এটাই বনবিভাগের তথ্য মতে আধুনিক পদ্ধতি। কারণ এক মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্টি যেমন অন্য আরেকজনের সঙ্গে মিলে নাতেমনি একটি বাঘের গায়ের ডোরা অন্য বাঘের সঙ্গেও মিলে না। আর এর আগে গণনা হতো বাঘের পায়ের ছাপ দিয়ে। পায়ের ছাপে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ওই পদ্ধতি বাতিল করা হয়। কারণ শুকনা মাটি ও কাঁদা মাটিতে এক বাঘের পায়ের ছাপ দুই রকম হয়ে থাকে। এর ফলে ২০০৪ সালের গণনায় বাঘের সংখ্যা দাঁড়িয়ে ছিল ৪৪১টিতে। এ সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি হওয়ায় ওই পদ্ধতি বাতিল করা হয়।
তবে চলতি বছরের নভেম্বরে আবারও শুরু হতে পারে বাঘ গণনার কাজ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত ফান্ডের অনুমোদন হলেই মূলত নভেম্বরে নতুন করে বাঘ গণনার কাজ শুরু করা যাবে বলে জানিয়েছেন এই বন কর্মকর্তা।
এসআইএইচ