সোনাগাজীতে ৩০টি সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ, জনভোগান্তি চরমে
নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ফেনীর সোনাগাজীতে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রায় ৩০টি সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা। এর ফলে ধুলোবালিতে একাকার হয়ে জনভোগান্তি চরমে উঠেছে। ধুলোবালির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সড়কগুলোর আশপাশের ঘরবাড়িতে বসবাসকারীদের। এমতাবস্থায় সর্দি-কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এ ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের ক্ষেত্রে নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের। এ নিয়ে গত কয়েক দিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। যদিও গণরোশ ঠেকাতে একাধিক সড়কে পানি ছিটিয়ে ধুলা-বালি নিবারনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারদের দাবি, ইট, বালি, পাথর, রড, সিমেন্ট ও বিটুমিনসহ সকল প্রকার নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। কোনও কোনও পণ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তির ধর্তব্য মূল্যের দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। এ ছাড়াও নির্মাণ সামগ্রীর দাম স্থির না হয়ে আকাশচুম্বি হতে চলেছে। পণ্যের দামে নেই কোনও নিয়ন্ত্রণ। এসব নির্মাণ সামগ্রীতে ১০-৩০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেলেও কম লোকসানের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ শেষ করা যেত। কিন্তু দ্বিগুণ বা তার চেয়ে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উপায় না দেখে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় সড়কগুলোর নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদাররা।
হক ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী ফজলুল হক বাবলু বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে ঠিকাদারদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। প্রতিটি পণ্যের দাম আকাশচুম্বি। জনভোগান্তির কথা চিন্তা করে ঠিকাদাররা বেশ কয়েকটি সড়কে পানি ছিটাচ্ছেন। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে ঠিকাদাররা সব হারিয়ে পথে বসতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাশার ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী ঠিকাদার আবুল বাশার বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর আকাশচুম্বি দামের কারণে লাভ তো দূরের কথা ঠিকাদাররা সহায় সম্বল বিক্রি করেও কাজ সম্পন্ন করতে পারবে না।
জানা গেছে, ওই সড়কগুলোর নির্মাণ কাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল।
তবে গুরুত্বপূর্ণ এসব সড়কে প্রতিনিয়ত যানবাহন চলাচলের কারণে মেকাডম খসে পড়ে লালছে আবরণ তৈরি হয়েছে। শত চেষ্টা করেও সড়কগুলোর পাশের ঘরবাড়িগুলো পরিস্কার রাখা যাচ্ছে না। নি:শ্বাসের সঙ্গে দেহে ঢুকছে লালচে বালি। আর কাশির সঙ্গে বের হচ্ছে লাল রংয়ের কফ। এমন অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন বাসিন্দা।
মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব সড়কের লালচে বালি দেহে ঢুকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
জনদুর্ভোগ ও ঠিকাদারদের দাবির সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপেজেলা প্রকৌশলী মো. মনির হোসেন খান বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সড়কগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ঠিকাদারদের দাবির বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। জনগণের ভোগান্তি দূর করতে ঠিকাদারদের দিয়ে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ বন্ধ থাকা সড়কগুলোর নির্মাণ শুরু করার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সোনাগাজী উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে একযোগে প্রায় ৩০টি সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। আর সবকটি সড়কেই মেকাডম করে ফেলে রাখা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে কার্পেটিং কার্যক্রম। সড়কগুলো হলো- মতিগঞ্জ-কারামতিয়া ভায়া কাজীর হাট, বখতারমুন্সি-কুঠির হাট, জমাদার বাজার-কারামতিয়া, সওদাগর হাট-হায়দারিয়া মাদ্রাসা, চেয়ারম্যান, গণস্বাস্থ্য, ভাইগ্যার হাট, হানিফ মাস্টার বাড়ি ও কামরুল ইসলাম টিপু সড়ক, পশ্চিম চরচান্দিয়া ডা. গোলাম মাওলা, মাঝি বাড়ি, বঙ্গবন্ধু সড়ক, আদর্শগ্রাম, মতিগঞ্জ জিসি, সোনাপুর ভায়া শহীদ মানু মিয়ার বাজার সড়ক, চরখোয়াজ-চরনারায়ণ, দাসের হাট-ফাজিলের ঘাট, ফতেহপুর, মান্দারি মুক্তিযোদ্ধা ভায়া তাকিয়া বাজার, আড়কাইম, গুণক-ধলিয়া বর্ডার সড়ক, লকুর বাজার-তাকিয়া বাজার সড়ক, সাতবাড়িয়া, রামচন্দ্রপুর ভায়া বখতারমুন্সি, দৌলতকান্দি-পানের বর ও স্বরাজপুর সড়ক ও পালগিরি মুক্তিযোদ্ধা সড়ক।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের বৃহত্তর নোয়াখালী উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর রশিদ চৌধুরী মাসুদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।