'ভাই তুই একবার সাড়া দে'
'এতো ডাকি, ভাই তুই একবার সাড়া দে। সবার ভাই আইছে, মোর ভাইও আইছে, কিন্তু ভাই তুমি কতা কও না ক্যা?'
বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রকেট হামলায় নিহত 'বাংলার সমৃদ্ধি' জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স।
কাঁদতে কাঁদতে প্রিন্স বলেন, 'ভাই কি আমারে আর ডাক দেবে না। ভাই আমার ঠান্ডা সহ্য করতে পারত না। সেই ভাই আজ লাশ হইয়া ফ্রিজার গাড়িতে বাড়ি আইছে।'
সোমবার (১৪ মার্চ) রাত পৌনে ১০টার দিকে ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজে রকেট হামলায় নিহত নাবিক হাদিসুর রহমানের (৩৩) মরদেহ বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে তার নিজ বাড়িতে পৌঁছায়। এর আগে দুপুরে তার মরদেহ নিয়ে বরগুনার পথে রওনা হন স্বজনরা।
ফ্রিজার অ্যাম্বুলেন্সে হাদিসুরের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছাতেই মা-বাবা, ভাই-বোন ও স্বজনদের আহাজারিতে সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে উঠে। হাজারো মানুষের ভীড় জমে যায় বাড়িতে। অপরদিকে শোকে মুহ্যমান মা-বাবা ফ্যালফ্যাল করে শুধু প্রিয় সন্তানের মুখ খুঁজছিলেন।
হাদিসুর রহমানের বড় বোন সানজিদা আক্তার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'ও বলেছিল, বিয়েটা তো করব তার আগে ওদের দুজনের পড়াশোনা শেষ হোক। আমার ছোট দুই ভাই এখনও পড়া শেষ করতে পারেনি। সে কারণেই বিয়ে করতে চাইছিল না হাদিসুর। ও বলছিল, ঘরটা একটু ঠিক করে নেই, পরের বার এসে বিয়ে করব। সেই ভাই আমার বাড়িতে ফিরল, কিন্তু লাশ হয়ে।'
তিনি বলেন, 'সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এই ২ মাস জাহাজের চাকরিতে অবসর থাকে। মারা যাওয়ার ৩-৪ দিন আগে ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। বলেছিলাম ভাই এইবার ছুটিতে বাড়িতে এসে বিয়েটা করে নে। মা প্রায়ই অসুস্থ থাকে। আম্মাকে দেখাশোনার জন্য তো একটা লোক দরকার। ছোট দুই ভাইয়ের পড়া শেষে বিয়ে করবে বলেছিল।'
হাদিসুরের আরেক ভাই (মেজ) তারিকুল ইসলাম লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের দরজা ধরে বিলাপ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'ভাইয়া কোথায় গেলি তুই? তোর তো ওখানে থাকার কথা না। তোমার তো শেরওয়ানি পড়ে আসার কথা ছিল ভাইয়া, কিন্তু এটা কি করলা তুমি আসলা লাশ হইয়া।'
বেতাগী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও হাদিসুরে চাচা মাকসুদুর রহমান ফোরকান বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে দাদা-দাদির কবরের পাশে হাদিসুরকে দাফন করা হবে।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুহৃদ সালেহিন জানান, মরদেহ দাফনের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
টিটি/