হাওয়াই মিঠাই প্রেম
নদীর বুকে প্রবাহমান স্রোতের মতো মানুষের জীবন। যখন সুখ আসে, দুঃখের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না, কিন্তু যখন দুঃখ আসে সুখের নিশানা পাওয়া যায় না। নদীর স্রোত এক সময় প্রবাহমান হতে হতে নদীর তীরের দেখা পায়, তেমনি মানুষ এক সময় দুঃখ অতিক্রম করে সুখের দেখা পায়।
নানা প্রতিকূল পরস্থিতি পার করে আজ বেকার থেকে স্বাবলম্বী তাহমিদ। অনেক দুঃখ, কষ্ট অতিক্রম করে তার জীবনে কখনও প্রেম আসেনি। আর তার কাছে প্রেম মানে হাওয়াই মিঠাই। যত সময় মোড়কে থাকে সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু হাওয়া লাগলেই মিঠাই অদৃশ্য হয়ে যায়। যাইহোক, বাড়িতে এখন তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। কিন্তু তাহমিদের পছন্দ সবার থেকে অনেক আলাদা। নাটক, সিনেমায় সব ছেলেদের নজর থাকে নায়িকার ভূমিকায়, তার ভালো লাগে পার্শ্বনায়িকা চরিত্র অভিনীত বোন, বান্ধবীকে দেখে। সে এখন দোটানায় আছে আর ভাবছে এমন ঘটনা যদি বাস্তব জীবনে ঘটে। নিজের মাঝে ইস্ততবোধ করে সে পাত্রী দেখতে গেল। তার সাথে গেল জাভেদ, বশির, তমাল। পাত্রীর বাড়িতে পৌঁছালে সবাই আন্তরিকতার সাথে অভ্যর্থনা জানায়। যখন পাত্রী আসলো, তাহমিদের ধারণা ঠিক সত্যি হলো। কে বিয়ের পাত্রী চিনতে পারছে না। কিন্তু তাহমিদ একজনকে পছন্দ করেছে। আর মনে মনে ভাবছে কে হতে পারে পাত্রী? পরে জানতে পারে সে যাকে পছন্দ করেছে সে পাত্রীর ছোট বোন। পাত্রীর নাম তানহা আর বোনের নাম তানিশা। তমাল বলছে, তাহমিদ এখন কি করবি? এখন আমরা যদি বলি পাত্রী পছন্দ হয় নি, তাহলে তুই পাত্রীর বোনকে বিয়ে করতে পারবি না। আর যদি বলি, পাত্রীর ছোট বোনকে পছন্দ হয়েছে তবে আমাদের সম্মান থাকবে না। হঠাৎ করে তাহমিদ পাত্রী পরিবারকে বলছে, পাত্রী আমার খুব পছন্দ হয়েছে। সবাই অবাক! পছন্দ করেছে কার আর বিয়ে করবে কার। তাহমিদ জাভেদের কানে কানে বলে, দোস্ত একটা বুদ্ধি আছে। তাই সে পাত্রী পরিবারকে বলে, আমি তানিশার সাথে একান্ত রেস্টুরেন্টে দেখা করতে চাই। তারা রাজি হয়ে গেল। তাহমিদ মনে মনে প্রার্থনা করছে তার পছন্দের তানিশা যেন তানহার সাথে যায় রেস্টুরেন্টে। তার প্রার্থনা সত্যি হলো। সেদিন রেস্টুরেন্টে তানিশা, তানহা আর তাদের কাজিন তৈশি যায়। আর তাহমিদের সাথে তমাল যায়। তারা খাবারের অর্ডার করে। তৈশি বলে, ভাইয়া আমার কাজিনকে বিয়ে করবেন অনুভূতি কেমন?
সে বলে, আসলে আমি এখানে আসতে বলেছি একটা কারণ আছে। তখন তানহা তাহমিদ কে উদ্দেশ্য করে বলে, শুনুন আমি খুব খুশি হয়েছি যে আপনি আমার সাথে দেখা করেছেন। সত্যি বলতে আমি একজনকে ভালোবাসি। আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না। আমাদের প্রেমের কথা আমার পরিবার জানে। কিন্তু জোর করে আমাকে আপনার সাথে বিয়ে দিতে চায়। আমাকে যদি আপনি এরপর বিয়ে করতে চান তাহলে আমি পালিয়ে যাব। হঠাৎ তাহমিদ চিৎকার করে উঠলো আর বলল, মাশাআল্লাহ। তার মুখে খুশি খুশি ভাব। সবাই অবাক সেদিন তানহাকে দেখে তাহমিদ পছন্দ করেছে আর এখন এমন কথা শুনে খুশি হতে দেখে। তখন তমাল বিষয়টা পরিষ্কার করে। আর বলে, আসলে সেদিন তানিশাকে দেখে তাহমিদ পছন্দ করেছিল। আমরা পরিকল্পনা করে তানিশার কথা বলব বলে রেস্টুরেন্টে আসতে বলি। তাহমিদ তানহাকে বলছে, আপনার প্রেমিকের সাথে বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। কিন্তু আমার বিয়ে তানিশার সাথে যদি আমাকে দিতে পারেন। তখন তানহা তানিশার কাছে শুনে সে তাহমিদ কে বিয়ে করতে রাজি কি না? কিন্তু তানিশা রাজি হয়ে যায়। এখন সবাই খুশি। তৈশি একটা পরিকল্পনা করে। সে বলে আমার কথা মত সবাই কাজ করবেন। পরদিন তাহমিদ পাত্রীর বাড়িতে যায়। আর বলে আসলে সেদিন তানহার কথা সব শুনলাম। ওর প্রেমের সম্পর্ক আছে একটা ছেলের সাথে। আর আমারও পছন্দ আছে একটা মেয়েকে। তার কথা শুনে আর তানহার প্রমাণ দেখে তাদের বিয়ে হয় নি। সেদিন তাহমিদ এর সামনে তানহা একটা পিকচার দেখায়। সেখানে তাহমিদ বোরকা পরা একটা মেয়ের সাথে প্রেম করছে। এসব দেখে তানহা আর তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে বিয়ে হয়। আসল ঘটনা হলো সেদিন রেস্টুরেন্টে তানিশা বোরকা পরে তাহমিদ এর সাথে পিকচার তোলে। কিন্তু কেউ তানিশাকে চিনতে পারেনি। তাহমিদ, তৈশি আর তানহার প্রথম পরিকল্পনা সফল।
তারা দ্বিতীয় পরিকল্পনা শুরু করে। তানহার বিয়ের পর সে তার আব্বু আম্মুকে বলে, তাহমিদ সেদিন তানিশাকে পছন্দ করেছিল। তাই আমরা রেস্টুরেন্টে দেখা করে এসব পরিকল্পনা করি। তৈশির কথামত তাহমিদ তানিশার সাথে পিকচার তোলে। সে তানিশাকে বিয়ে করতে চাই। আর তানিশা বিয়ে করতে রাজি। তখন তার আব্বু বলে, তানহা যখন তার নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে তাহলে তানিশা কেন পারবে না? তাহমিদ আর তানিশার বিয়ে হবে। কিন্তু একটা শর্ত আছে। তানহা খুব চিন্তায় পড়েছে। কারণ তাহমিদ এর কথা রাখতে পারবে তো? তবু সাহস করে তানহা বলে, তাহমিদ সব শর্তে রাজি। শর্ত মতে তাদের বিয়ে হবে। বিয়ের দিন সেই শর্ত উপস্থাপন করে আর বলে বাবা তাহমিদ, তুমি তানিশাকে কতটা ভালোবাসো? তখন সে উত্তর দিল আকাশ সমান ভালোবাসি।
এই কথা শুনে কাজিন তানহা শর্ত হিসেবে একটা ধাঁধা ধরে আর বলে আকাশ ছুঁয়ে দেখান। তখন তাহমিদের মাথায় ঠা ঠা পড়লো। সে বোকা হয়ে গেল। আর ভাবছে আকাশ সমান ভালোবাসি বলে বিপদে পড়েছি তো। ঠিক তখন এক মহিলা আকাশ, আকাশ করে চিৎকার করছে। তার চিৎকার শুনে একটা বাচ্চা সাড়া দিল। তখন আর তাহমিদের বুঝতে দেরি হলো না। সে ঐ বাচ্চাকে ডাকে আর তার গায়ে হাত রেখে বলে আমার কত সৌভাগ্য যে আমি আকাশ ছুতে পেরেছি। সবাই অনেক খুশি। অবশেষে তাহমিদ ধাঁধার উত্তর দিতে পেরেছে। অতঃপর তাহমিদ আর তানিশার বিবাহ সম্পন্ন হয়। এভাবে তাহমিদ এর হাওয়াই মিঠাই প্রেমের পরিসমাপ্তি ঘটে।
ডিএসএস/